আবু তাহের সরফরাজের ছড়াকাহিনি ‘গহিন বনে’
প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৮, ২০২২
পড়ছি বসে রাতের বেলা হঠাৎ করেই দেখি
চালতে গাছে রঙ ধরেছে, রঙতামাশা একি?
আস্তে-ধীরে টেবিল ছেড়ে উঠে এলাম বাইরে
চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে আলো যেদিক পানে চাই রে।
চালতে লেবু আম পেয়ারা দেখছি না তো কিছু
জোনাকগাছে জোনাক ধরে জ্বলছে আগুপিছু।
একটু সময় ঠায় দাঁড়িয়ে মৌরিফুলের গন্ধে
হাঁটতে থাকি বনের দিকে যেমন হাঁটে অন্ধে।
গহীন বনে হঠাৎ যদি চাঁদমামা দেন ডুব
ভূতের মতো অন্ধকারে ভয় কি পাব খুব?
ভূতের রাজা ভূতের রানি দেখতে করে ইচ্ছা
দাদুর মুখে ভূতের কত শুনেছি যে কিস্সা।
চুপিচুপি নিঝুম বনে ঢুকেই দেখি কি
গা ছমছম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
ডাকছে প্যাঁচা ডাকছে শেয়াল ডাকছে হরিয়াল
হাতের সাথে জড়াচ্ছে কী? মাকড়শারই জাল!
একটুও পা কাঁপছে না তো ভয় কী এমন আছে?
ভূতের ঘাড়ে রদ্দা মেরে লটকে দেব গাছে।
বনের উঁচু গাছের ডালে পাতার সরু ফাঁকে
আধখানা চাঁদ দুষ্টমিতে মুচকি হেসে ডাকে।
চাঁদের ডাকে কয়েক কদম যেই ফেলেছি পা
মিঁউ স্বরে কী উঠল ডেকে? বনবিড়ালির ছা!
বনবিড়ালি বনবিড়ালি বনেই কি সংসার?
বনেই ভালো থাকছ তুমি খাচ্ছ চমৎকার।
চমকে দেখি, ঝুপ করে কি পড়ল কাছেপিঠে
হাতড়ে দেখি, আম পড়েছে স্বাদটা কী যে মিঠে!
আম খেয়ে যেই হাত মুছেছি নোংরা করে জামা
পেছন থেকে ডাকল কী কেউ? ডাকল কি বাঘমামা?
ঘাড় ফিরিয়ে চমকে উঠে দেখতে পেলাম যাকে
অন্ধ লোকেও বাঘ বলে কি করবে মনে তাকে?
ঝুলছে ডালে লেজ ঝুলিয়ে মস্ত হনুমান
ইচ্ছে হলো হাত বাড়িয়ে চুলকে দিতে কান।
একটু দূরে জ্বলছে কিরে? ছোটটো তারাফুল?
ফুল নয় রে ফুল নয় রে পরির কানে দুল।
চারটে পরি দুল পরেছে চাঁদের থেকে নেমে
দুলছে পরি দেখতে পেলাম হাঁটতে গিয়েও থেমে।
হঠাৎ দেখি, চারটে পরি ছুটছে দিগ্বিদিক
পাতার ফাঁকে সূর্য হেসে করতেছে ঝিকমিক।