আবু তাহের সরফরাজের চারটি কিশোর-কবিতা
প্রকাশিত : নভেম্বর ১৭, ২০২৩
আমাদের বাড়ি
আমাদের বাড়ি ছেলেবেলা ছিল
আমাদের বাড়ি শৈশব
আমাদের বাড়ি বয়েসি এখন
আমাদের বাড়ি নেই সব।
রোদ আর ছায়া দুই সহোদরা
আমাদের বাড়ি এসে
লুটোপুটি খেতো মায়ের আঁচলে
আমাদের বুক ঘেঁষে।
পুরনো সে রোদ নতুন এখন
উত্তাপ খুবই তার
ছায়ার শরীরে নেই আর সেই
ছায়ার অলঙ্কার।
কবি
সবার মাঝে থেকেও তিনি নিজ খেয়ালে থাকেন
কী যেন কী কল্পনা তার বুক পকেটে রাখেন।
নীল আকাশে মেঘের ডানা উড়তে দেখে তিনি
জানলা খুলে লিখতে বসেন ছন্দ রিনিঝিনি।
ঝিম দুপুরে হঠাৎ যদি কোকিল কোথাও ডাকে
গাঁয়ের মেঠোপথে তিনি খুঁজে ফেরেন তাকে।
বুকের ভেতর নীরবতা, ঠোঁটের কোণে হাসি
ফুল ও পাতায় লিখতে থাকেন, শব্দের সে চাষি।
মানুষগুলো সারাটা দিন কী যেন সব বলছে
চাল ও ডালের বাজার নাকি আগুন লেগে জ্বলছে।
সরকারি ব্যাংক হচ্ছে লোপাট, বর্গি এলো দেশে
অমুক নেতার চিমটি খেয়ে তমুক গেলেন ফেঁসে।
নাভির নিচে শ্বাস লুকিয়ে ছুটছে সবাই, ছুটছে
খুব নীরবে একটা মানুষ গোলাপ হয়ে ফুটছে।
ভ্যানগগ
গোধূলির সোনারঙে স্বপ্নের ছবি
আঁকলেন ভ্যানগগ, ভিনদেশি কবি।
নীলিমার নীলে আঁকা তার ক্যানভাস
সবুজের মাঝখানে মাঠজোড়া ঘাস।
গোধূলির মাঠে মাঠে হাঁটে ভ্যানগগ
নীলিমার বুকে ঘুম দেয়া তার শখ।
পৃথিবীর ওইপাড়ে নীলিমার নীলে
ঘুম এলে ঘুমোবে দুইজন মিলে।
নীলিমার রঙছবি মুছে দিলে কেউ
থেমে যাবে সাগরের সবগুলো ঢেউ।
সূর্যের কাছাকাছি তাই ভ্যানগগ
ক্যানভাসে আঁকে নীল আসমানি বক।
ভূতেনবাবু
ভূতেনবাবুর সঙ্গে জেনো খুব শিগগির রাতে
হতেই হবে ডিনার আমার ইলিশ এবং ভাতে।
ভূতেন খাবেন মস্ত কাঁচা ইলিশ মাছের মুড়ো
সঙ্গে আরো থাকতে পারে শুকনো মরিচ গুড়ো।
ভূতেনবাবু বীর পালোয়ান অ্যাঁব্বড় তার গোঁফ
হাতের মুঠোয় উপড়ে ফেলেন বুনোলতার ঝোপ।
মেঘের ভেতর নীল পাহাড়ে থাকেন ভূতেন বাবু
রোজ সন্ধেয় টিচারটাকে করতে পারেন কাবু।
টিচার হলেন দম দেয়া কল, নিয়ম মেনে পড়ান
ভাল্লাগে না অংকের বই, অংক তবু করান।
চোখের ওপর চশমা এঁটে টিচার মিয়া কন,
যোগ-বিয়োগের সূত্র জানা খুবই প্রয়োজন।
এই টিচারের নেই কি আমার মতো এমন খোকা?
একটুও কি হয় না মায়া মাথায় দিতে টোকা?