আবু তাহের সরফরাজের গল্প ‘মানচিত্রের ভাঁজ’
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
দুপুরের রোদ মরে যাচ্ছে। ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সামনের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আছে আকবর। আজকের দিনটা অন্যদিনের চেয়ে বেশ উজ্জ্বল। বাতাসে নতুন এক ধরনের গন্ধ। আশ্চর্য মাদকতাময়। আলোটাও কেমন যেন অন্যরকম। সোনার রঙের মতো একটা আলাদা আভা দিনটার চেহারায়। আকবর পুলক বোধ করল। শান্তির মতো হালকা একটা মেজাজে তার ভেতরটা আচ্ছন্ন হয়ে গেল। প্রচণ্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো এই মুহূর্তে, পৃথিবীর সকল প্রকার মারমুখি মানুষগুলো এই দিনে ফিরে গেছে যার যার ঘরে। কলকাতা এখন তার নিজের শহর। স্বপ্নের কলকাতা। আহ! আরামের একটা নিশ্বাস বেরিয়ে এলো তার বুকের ভেতর থেকে।
বিকেল চারটে। হাতঘড়িতে সময় দেখল সে। এ সময়টায় রাস্তাটা সাধারণত বখাটেদের দখলে থাকে। স্কুল ছুটি দিলে দলবেঁধে মেয়েরা যখন বেরিয়ে আসে, বখাটে ছেলেগুলো সে সময় চোখ-মুখের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্যালে। আর তখনই বোঝা যায়, পরাধীন ভারতবর্ষে এদের ভূমিকা কি। প্রায় প্রতিদিন একই দৃশ্য দেখতে হচ্ছে সবাইকে। কারও যেন কোনও মাথাব্যথা নেই। যে যার মতো। কী যে অদ্ভুত সময় পেরোতে হচ্ছে এখন। রাস্তাঘাটে বেরোলেই লালমুখো গোরা সৈন্যদের অপচ্ছায়া এসে গায়ে লাগে। রিরি করে ওঠে শরীর। অথচ দেখলে মনে হয়, সকলেই যেন পালাচ্ছে ভেতরে ভেতরে।
আজ রোববার। সরকারি ছুটির দিন। বখাটে ছোকড়াগুলোকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। উল্টোদিকের ফুটপাথে একটা ট্রাম এসে থামল আহত ষাঁড়ের মতো গর্জন করতে করতে। লোকজন নামল, উঠল। এই জিনিসটা দুচোক্ষে দেখতে পারে না আকবর। লোকজন কেন যে এ রকম আলুমার্কা গাড়িতে ওঠে। বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে রইল সে। ধুতি-ফতুয়া পরনে টাকমাথার রোগামতো দেখতে এক লোক চটিতে শব্দ তুলে এগিয়ে এলো তার দিকে। এই ট্রামটা থেকেই নেমেছে হয়তো। কাছাকাছি এসে একটু মুচকি হাসলো। কেমন যেন রহস্যময় হাসির ভঙ্গিটা। কিছু একটার গন্ধ পেল সে। তার পাশে এসে দাঁড়ালো লোকটা। কোনও কথা বলল না। আড়চোখে তাকাতে লাগল তার দিকে। এ কী বস্তু রে বাবা! টানটান হয়ে উঠল তার শরীর। এমনিতে কেউ দেখতে ভাববে, তার সঙ্গের কেউ বুঝি। এত ঘনিষ্ঠ হয়ে লোকটা দাঁড়িয়েছে। একবার মনে হলো, সে ফিরে যাবে। দরকার ইেন রজনীর সঙ্গে দ্যাখা করার। পরে দ্যাখা হলে বলে দিলেই হবে, জরুরি একটা কাজে আটকে পড়েছিল। কিংবা এমনও হতে পারে, মিষ্টির দোকানটায় গিয়ে সে বসতে পারে। এক মুহূর্ত চিন্তা করল। দুটোর কোনোটাই করল না শেষপর্যন্ত। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। দ্যাখাই যাক না, টাকমাথা শেষপর্যন্ত কী করে!
মিনিট কয়েক কাটলো এভাবে। লোকটার ভাবগতিক এষনও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কত রকমের মতলব মাথায় নিয়ে লোকজন নেমে পড়েছে এই যুদ্ধের বাজারে, কে কাকে চিনে রাখে! মানুষের ভেতরের চেহারা বুঝে ওাা মুশকিল এই সময়ে।
কিছু দিন আগে তাদেও পাড়ায় এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটল। সাধুটা এসে আস্তানা গাড়লেন মল্লিকাদের জামতলায়। সারাক্ষণ কীসব বিড়বিড় করেন। মল্লিকার বাবা গদাধর লাহিড়ীর আবার সাধু-সন্তে গভীর ভক্তি। তিনি তিনবেলা খাবার দিতে লাগলেন। কেউ কেউ অতিরিক্ত উৎসুক হয়ে আলাপ জমাবার চেষ্টা করতে গেলে সাধুবাবা একেবারেই পাত্তা দিলেন না। তখন মুখ আমসি করে দাঁড়িয়ে রইল কেউ কেই। সাধুটি কারও সঙ্গে বাক্যব্যয় করেন না। দুয়েকজন অবশ্যি দাবি তুলেছিল, সাধু না ভণ্ডামি। ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে দ্যাও। মল্লিকার বাবা দৃঢ় গলায় বললেন, এ জায়গাটা আমার। ঝেঁটোতে হয় আমিই ঝেঁটোবো। অন্যকেউ যেন নাক না গলায়। তার ক’দিন বাদেই একরাতে শোনা গেল, পুলিশের হুইসেল। ঘুম ভেঙে জেগে উঠল সবাই। খাকি পোশাকের লোকগুলোকে দেখা গেল অসীম সাহার দোতলা বাড়িটা ঘিরে দাঁড়িয় রয়েছে। ভেতর থেকে ছ’সাতজন ছেলেকে বের করে নিয়ে এলো পুলিশ। সঙ্গে অসীম সাহাকেও। তাদের চোখমুখে ধরা পড়বার কোনও উৎকণ্ঠা নেই। দারুণ নির্বিকার ভাবে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠল সবাই।
সদ্য ঘুমভাঙা লোকজন বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল। এলাকায় বিপ্লবীদের গোপন বৈঠক হতো প্রতিরাতে, অথচ ঘুণাক্ষরেও তারা টের পায়নি। কিন্তু পুলিশ খবর পেল কী করে! পরদিন সকাল থেকে সাধুবাবাজীকে আর দ্যাখা গেল না। এই যখন অবস্থা চারদিকের, এই লোকটা তখন নতুন করে কী বাগড়া বাঁধায় কে জানে! একটা অজানা আশঙ্কায় ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠল আকবর, পুলিশের স্পাই নয় তো লোকটা!
এই যে ছোকড়া?
গা জ্বলে যায়, কী ছিরি কথা বলার! গলার স্বরে গাম্ভীর্য এনে আকবর বলল, কিছু বলবেন?
হ্যাঁ... ইয়ে, নাম কি তোমার?
আকবর হোসেন খান।
কী পড়ছ?
এ বছর স্কুল ফাইনাল শেষ করব।
এ পাড়াতেই বাড়ি?
এবার বিরক্ত হলো সে। একটা অচেনা-অৎানা লোককে এতসব খুঁটিয়ে বলার কী দরকার আছে! কড়কড়ে গলায় সে বলল, কী ব্যাপার, আপনি তো দেখছি রীতিমতো ইন্টারভিউ নিতে আরম্ভ করেছেন।
ও হো তাই নাকি! চতুর গলায় লোকটা হেসে উঠল। চমৎকার রকমের সুন্দর তার হাসি। লক্ষ্য করে দেখার মতো। শাদা দাঁতগুলো সূর্যেও আলোয় চিকচিক করে উঠল। এমনিতে যথেষ্ট নোংরা সে। মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ির জঙ্গল। চোখের কোণায় পিঁচুটি। গলার একটা রগ ফুলে উঠে এমন বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে!
আপনি হাসছেন কেন? ঘাসির কথা কিছু বলেছি আমি?
নীলরতন মজুমদার মশাইকে চেনো এ পাড়ার?
আজ্ঞে চিনি, কেন?
তার বাড়ির লোকেশনটা আমার দরকার। এ জন্য বিরক্ত করলাম তোমাকে, সরি!
লোকটার সরি বলার ঢং দেখে ফ্যাকাসেভাবে হাসল আকবর। বলল, না, ঠিকাছে। ওই যে সামনের গলিটা দেখছেন ওটার বাঁ হাতে আরেকটা গলি পড়বে, সেটা ধরে কিছুটা এগোলে নীলরতন মজুমদারের বাড়ি। দেখলেই চিনবেন, ইয়া সাইজের গেল। পেল্লাই বাড়ি।
ও আচ্ছা আচ্ছা...
লোকটা রাস্তা পেরোলো না। মিষ্টির দোকানটায় গিয়ে ঢুকল। এতক্ষণ খেয়াল করেনি সে, এবার দেখল, লোকটার হাতে একটা চটের থলে। পেট মোটা। দোকান মালিক বিশ্বজিৎ ঘোষের হাতে থলেটা দ্রুত চালান করে দিয়ে কী যেন বলল নিচু গলায়। বিশ্বজিৎ ক্রমাগত ঘাড় নেমে যেতে লাগল। আরেক থলের ভেতর সেরখানেক মিষ্টি নিয়ে বেরিয়ে এলো লোকটা। কোনোদিকে না তাকিয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে হনহন করে হেঁটে গেল যে পথে এসেছিল।
থ মেরে গেল আকবর। একটু সময় লাগল ব্যাপারটা বুঝে নিতে। তার সন্দেহ হলো, লোকটা হয়তো অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সময়টাই এখন হুলুস্থুলের। এই মওকায় অস্ত্রেও বেচাকেনায় নেমে পড়েছে কেউ কেউ। এতক্ষণে বোঝা গেল, তার সঙ্গে কথা বলা লোকটার একটা ছুঁতো। সে আসলে চোখ রাখছিল চারদিকে।
মন খারাপ হয়ে গেল তার। মধ্যবিত্ত বাঙালি মানসিকতা তার কাছে কেমন গোলমেলে মনে হয়। এরা তো এখনো ভারত আত্মার গভীরটা দেখতে পায়নি। পরাধীনতার মাথাব্যথা সত্যিই কি এদের আছে? নাকি সবটাই তথাকথিত শিক্ষিত উঁচু তলার মানুষের ধারণা! কী বিচিত্র মানুষের সমাজ চেতনা! বৃহত্তর জাতিসত্তা কোনও রকম আবেদন তৈরি করতে পারে না তাদের কাছে, যতই ভারত ছাড়ো আন্দোলন কিংবা গান্ধীবাদী প্রচারণা তুঙ্গে উঠুক। এসব কিছুই শেষপর্যৗল্প মেকি, উপহাস মাত্র!
সে ভেবে রাখল, আজকের বৈঠকে ঘটনাটা সবাইকে জানাবে। বিশ্বজিৎ ঘোড়েলটাকে ধরে এমন কড়কে দিতে হবে যাতে বেরিয়ে পড়ে সব।
ছোট ছোট পা ফেলে হেঁটে আসছে এক কিশোরী। বছর পনেরোর মতো হবে বয়স। হালকা আকাশি রঙের ফুলহাতা ফ্রক পরনে। চুলগুলো পিঠের ওপর দিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। পাশ দিয়ে একটা ঘোড়ার গাড়ি যাবার সময় কোনও কারণে আচমকা হই হই করে উঠল গাড়োয়ান। একটুও চমকালো না মেয়েটা। ভ্রুক্ষেপই করল না। নিজের মনে হেঁটে এলো সে রাস্তার একপাশ ধরে।
শ্রীলেখা! এতক্ষণের মনের ভার অনেকটা হালকা হয়ে এলো আকবরের। দারুণ দেখাচ্ছে আজ মেয়েটাকে। বাঁ গালের নিচে কালো তিলটা রোদ্রে কী রকম চমৎকার ভাবে ফুটে রয়েছে।
সে ডাকল, এই যে, এই?
মুখ ফেরালো শ্রীলেখা। হাসল। কী ধারালো তার হাসির ভঙ্গি। প্রত্যেক মানুষের হাসির ভেতর এক ধরনের আলাদা সৌন্দর্য থাকে। শ্রীলেখার হয়তো কিছু বেশিই। হাসিটাই যেন বলে দ্যায় অনেক কিছু।
আকবর এগিয়ে গেল। জিগেশ করল, কোত্থেকে?
পিসির বাড়ি গিয়েছিলাম।
হেঁটে যে?
হেঁটেই তো। বাড়ি তো আর রেঙ্গুন নয়।
বাতাসে নতুন গন্ধটা সে পেল আবার, কেমন মাদক মাদক গন্ধ। দিনটা আবার ফুরফুরে হয়ে উঠল তার কাছে। জিগেশ করল, আজকের দিনটা কেমন মনে হচ্ছে তোমার?
অদ্ভুত চোখ করে তাকালো শ্রীলেখা, মানে?
বাতাসে নতুযন একটা গন্ধ পাচ্ছ না? ভালো লাগা... ঝিরিঝিরি...
কী বলছ আবোল তাবোল!
জোরে করে শ্বাস টেনে দ্যাখো, বারুদের গন্ধ নয়, টাটকা গোলাপের ঘ্রাণ পাবে। তোমার চুলের মতো সুগন্ধ আজকের বাতাসে।
পাগল!
তরল গলায় হেসে উঠল আকবর। হাসতে হাসতেই বলল, ভালো লাগা... ঝিরিঝিরি... দিনটা মাইরি সত্যিই দারুণ!
বিরক্ত চোখে তাকালো শ্রীলেখা, এই মাইরি জিনিসটা আবার কি? নোংরা ছেলেদের মতো...
মজা পেল সে। মেয়েটা ভর্ৎসনার সুরে কেমন শাসন করছে তাকে।
কোনও কোনও দিন বিকেলে ছাদে সে যখন ঘুড়ি ওড়ায়, দেখতে পায় শ্রীলেখা তাদের ছাদে চুপচাপ বসে ছবি আঁকে। পাশাপাশি দুটো ছাদ পরেই ওদের ছাদ। কখনো চোখাচোখি হলে সরিয়ে নেয় চোখ। সে বুঝে উঠতে পারে না এই মুখ ফিরিয়ে নেয়ার রহস্য। কখনও জিগেশও করা হয়নি।
পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে আকবর দেখল, ঘাম দিচ্ছে শ্রীলেখার। কিন্তু কোনও অস্বস্তির ছায়া নেই চোখমুখে কোথাও। ভারি পবিত্র দেখাচ্ছে মুখখানা। চোখের মণি স্থির। ওই চোখ দিয়ে যা দ্যাখা যায় তা-ই বুঝি সুন্দর হয়ে ওঠে।
হাঁটতে হাঁটতে এক সময় শ্রীলেখা বলল, গত পরশু রাতে মিত্তিরদের আমবাগানের ওদিক থেকে গুলির শব্দ শুনেছিলে? এমনিতে তো বিদ্যুৎ ছিল না। যা ভুতুরে অন্ধকার! সাঙ্ঘাতিক ভয় পেয়েছিলুম আমি। শ্রীলেখার গলার স্বরে ভয়ের একটা চাপা প্রকাশ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আকবর। এমনই হয়। একটি দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র কত রকমের ভাঁজ খুলে যে শেষপর্যন্ত বেরিয়ে আসে! বাড়ির সামনের গলির মুখটায় এসে শ্রীলেকা আচমকা বলে উঠল, এই তুমি আমার সাথে সাথে আছ কেন?
ভীষণ অবাক হয়ে গেল সে। এই মেয়ে বলে কি! ভারি কষ্ট হলো বুকের ভেতর। বোকাটে ধরনের হাসি ফুটে উঠল তার মুখে। নিচু গলায় বলল, আচ্ছা, চলি তাহলে।
ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সামনের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিল রজনী। আকবরকে আসতে দেখে ভীষণ ক্ষেপে গেল। স্টুপিড! সামান্য সময়জ্ঞান বলতে যদি কিছু থাকে। ক’টা বেজেছে সে খেয়াল আছে? ছিঃ ছিঃ!
সরি দোস্ত। হয়েছে কি, তোর আগেই কিন্তু এসেছি। একটু সাইডে গেছিলাম। দরকার ছিল। সরলভাবে স্বীকার করল আকবর।
চল, দ্রুত পা চালা।
রাস্তায় নামতেই ভালো লাগা ঝিরিঝিরি শব্দটা তার বুক থেকে ছিটকে হারিয়ে গেল ভিড়ের ভেতর। অসংখ্য বাঙালির বুকের গোপন ক্ষতটাকে জাগিয়ে দিতে হবে। সময় এখন ঝলসিত। সুন্দর-মঙ্গলময় কিছু ভাবতে গেলেই কেমন ভোঁতা হয়ে যায় পেশীগুলো। ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। এতক্ষণ তো সে নিজের ভেতরে বেশ ছিল। কেন যে রজনীটা এলো! বড় কষ্ট দেশের জন্যে, এমনকি শ্রীলেখার জন্যেও।
কীরে, সেঁটে গেলি নাকি?
না, কেন?
থেকে থেকে ভাবি বুঝলি, শেষপর্যন্ত আজাদি কি সত্যিই আসবে আমাদের? রজনীর স্বরে উৎকণ্ঠা, কিছুটা ভয়ও।
কী জানি! তবে আমার কি মনে হয় জানিন, সাধারণ বাঙালিদের তাদের সমস্যাগুলো ঠিকঠাক মতো বুঝিয়ে দিতে পারলে প্রতিটা ঘর থেকে বিপ্লবী বেরিয়ে আসতে বাধ্য।
রজনীর গলার স্বর ফ্যাসফেসে, জানিত তো বাবা সরকারি চাকুরে। তার পক্ষে আমাকে মেনে নেয়া সম্ভব? ছোড়দিকে বিয়ে দিতে হবে। ছোট ভাইটাকে মানুষ করতে হবে।
রজনীর মুখের দিকে চেয়ে আকবর বলল, ভুলে যাস না রজনী, আমার বাবাও ইংরেজ সেবাদাস। ভয় আমারও আছে। আসলে আমাদের প্রত্যেকের দোটানা আছে। তবে বেশি দিন নয়। খুব শিগগিরই হয়তো আমাদের বেরিয়ে পড়তে হবে।
হাঁটতে হাঁটতে এক সময় চিপা একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়ল তারা। দুই পাশের উঁচু দালানগুলো সূর্যের আরো আটকে দিয়েছে। একটু অন্ধকার গলিটা। পচা আবর্জনা দু’পায়ে ঠেলতে ঠেলতে সজাগ হয়ে উঠল দুজনে। আগে-পিছে দেখে নিল বিশেষ কৌশলে। সাবেকি আমলের লোহার একটা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল। বাগানের মতো খানিকটা জায়গা। বেশিরভাগই আগাছার জঙ্গল। মাঝে মাঝে গোলাপঝাড় আর বোগেনভিলা ছাড়া সবটাই উঁচু ঘাসে ছাওয়া।
বাগান পেরিয়ে এসে সামনে পড়ল প্রমাণ সাইজের নোনাধরা একটা সিঁড়ি। ইট বেরিয়ে পড়েছে কোথাও কোথাও। রজনী আগে, পেছনে আকবর উঠে এলো দোতলায়। বারান্দা পেরিয়ে দক্ষিণ দিককার একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। আর ঠিক তখনই অলৌকিকভাবে বারান্দার অন্যপাশ থেকে বেরিয়ে এলো পুলিশ।
হেই, শাট আপ!
প্রথমটায় হকচকিয়ে গেল দুজনই। একটু ধাতস্থ হতেই একসঙ্গে দুজনেই চেঁচিয়ে উঠল, বন্দে মা তরম!