আবু তাহের সরফরাজের গল্প ‘পরি ও পাখির গান’
প্রকাশিত : মে ৩১, ২০২০
ঝিম ধরে আছে দুপুর। পাশের বাড়ির ভেঙেপড়া দেয়ালের ওপর কয়েকটি কাক কেবল ডেকে যাচ্ছে। আর কোনও শব্দ নেই কোথাও। খাতা থেকে মুখ তুলে জানলা দিয়ে সেদিকে তাকালেন আফসার করিম। কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়ল তার। বিরক্ত যেন তিনি। পরদার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে ঘরে। খাটে হাতপা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে উপত্যকা। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সে। নিশ্বাস ফেলার ভারি শব্দ শুনতে পেলেন তিনি।
হঠাৎ ঝিরঝির হাওয়া ছুটে এলো জানলা দিয়ে। পরদায় ঢেউ খেলিয়ে গেল। ঢেউ খেলিয়ে গেল উপত্যকার শ্যাম্পু দেয়া ঝরঝরে চুলে। কী রকম যেন হাসির ভঙ্গি তার ঠোঁটে। হাসছে উপত্যকা। ঘুমের আরেক জগৎ থেকে আনন্দের নানা রং এসে ছড়িয়েছে তার মুখে। হাসলেন আফসার করিম। চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে বসলেন মেয়ের মাথার কাছে। কী ফুটফুটে দেখতে তার মেয়েটি, ভাবলেন তিনি। পরির দেশের রাজার মেয়ের মতো। দুধে-আলতায় যার গায়ের রং। করমচা রঙের মতো যে মেয়ের মুখ।
উপত্যকার মাথার চুল আঙুল দিয়ে এলোমেলো করে দিলেন আফসার করিম। তারপর মেয়ের কপালে একটা চুমু খেয়ে এসে বসলেন চেয়ারে। এখনও বেশ কিছু খাতা দেখতে হবে তাকে। সরকারি একটা কলেজে দর্শন পড়ান তিনি। অনার্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ। বাড়িতে বসে এখন কয়েকদিন খাতা দেখছেন। খাতা দেখায় ডুবে গেলেন তিনি। হঠাৎ মিষ্টি একটা সুর ছড়িয়ে পড়ল ঘরের ভেতর। খাতা থেকে তবু চোখ তুললেন না তিনি। কী যে ছাই লিখেছে খাতাটায়, মাথামুণ্ডু নেই। বিরক্ত হলেন তিনি। দর্শনের মতো সহজ ব্যাপারটা কেন যে ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারে না, তাই তিনি বুঝতে পারলেন না।
আবার সেই সুর। মনে হলো যেন পাখির শিষ। মুখ তুললেন এবার। একটা পাখি এসে বসেছে জানলায়। সবুজ তার ডানা। গায়ের রং বেগুনি। লম্বা লাল লেজ। মাথায় ছোট্ট ঝুঁটি। কী এক আনন্দে লেজ নেড়ে যাচ্ছে পাখিটা, আর ডেকে যাচ্ছে। কখনও কখনও মাথা নাড়ছে। আফসার করিম তাকালেন মেয়ের মুখের দিকে। উপত্যকার ঠোঁটে হাসি। মনে হলো তার, নদীর ঢেউয়ের মতো যেন সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ছে উপত্যকার সারা মুখে। গভীর ঘুমে এখন উপত্যকা। ডেকেই চলেছে পাখিটা। হাসছে উপত্যকা।
বেশ তো সাহস। জানলা ছেড়ে পাখিটা এসে বসল জানলার ধারেই রাখা টেবিলের এক কোণে। তাকালো আফসার করিমের দিকে। তাকালো ঘুমিয়ে থাকা উপত্যকার দিকে। তারপর ডেকে উঠল মিষ্টি এক সুরে। চমকে উঠলেন আফসার করিম। পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে যেতে পারে উপত্যকার। আর উপত্যকা ঘুম থেকে উঠে পড়লে মুশকিলে পড়বেন তিনি। খাতা দেখতে পারবেন না। খেলতে হবে তাকে নিয়ে। উপত্যকার আম্মা পাড়ার একটা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ান। এখন তিনিও স্কুলে। কাজের মেয়েটা রান্নাঘরে।
কিছু সময় ভাবলেন তিনি। তারপর উঠে এলেন পাখিটার দিকে। যত তিনি এগোচ্ছেন, পাখিটা তার দিকে চেয়ে তত বেশি ডেকে যাচ্ছে। কী বীরপুরুষ পাখি, কাছাকাছি যেতেই জানলা দিয়ে ফুড়–ৎ করে উড়ে চলে গেল পাখিটা। তিনিও ধীর পায়ে ফিরে এলেন চেয়ারে। দেখলেন, পাশ ফিরে শুলো উপত্যকা। ইস, ঘুম আবার ভেঙে গেল না তো? যা ভেবেছেন, ঠিক তাই। ঘুম ভেঙে উঠে বসল উপত্যকা। অবাক চোখের চাউনি। হকচকিয়ে গেছে সে। ভয়ের কালো ছায়া তার মুখের ওপর। ভয়ে-ভয়ে চারদিক দেখতে লাগল। যেন বুঝতে পারছে না কোথায় সে রয়েছে। কাঁপছে তার শরীর। যে কোনও মুহূর্তে সে কেঁদে ফেলবে।
ছুটে গেলেন আফসার করিম মেয়ের কাছে। উপত্যকাকে বুকের ভেতর টেনে নিতে-নিতে বললেন, কী হয়েছে মা... এই যে আমি... তোমার আব্বু... দ্যাখো মা... কাঁপতে-কাঁপতে তার বুকে মাথা ছেড়ে দেয় উপত্যকা। তারপর কেঁদে ওঠে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। কান্নার দমকে ঠোঁট কাঁপতে থাকে। দু’হাত দিয়ে সে জড়িয়ে ধরে আব্বুর গলা। তার চোখের পানিতে ভিজে ওঠে আফসার করিমের বুকের কাছের পাঞ্জাবি। কী করবেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না তিনি। বোকার মতো মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে থাকেন। আর বলতে থাকেন, ভয় কীসের মা... সব স্বপ্ন... দ্যাখো, এই যে এখন আব্বু তোমার সঙ্গে... দ্যাখো মা...
পাশের বাড়ির ভাঙা দেয়াল থেকে কাকের ডাক যেন থমকে যায় এইখানে এসে। থমকে যায় বাতাস। জানলার পরদা বাতাসে কেঁপে ওঠে না আর। রান্নাঘর থেকে কাজের মেয়েটার গানের গুনগুন শব্দ শোনা যায়। রাস্তায় কে একজন চেঁচিয়ে ওঠে কারও নাম ধরে। মেয়েকে বুকের ভেতর চেপে ধরে বসে রইলেন আফসার করিম। একসময় শরীরের কাঁপুনি থামে উপত্যকার। থামে কান্না। পরনের পাঞ্জাবি দিয়ে আফসার করিম মুছে দেন তার চোখের পানি। মেয়ের মাথা এবার নিজের কাঁধের ওপর নিয়ে তিনি বললেন, যা দেখেছো তা খারাপ স্বপ্ন মা। তোমাকে ভয় দেখিয়েছে।
কাঁধে মাথা রেখে উপত্যকা বলল, স্বপ্ন তো খারাপ নয় আব্বু, দৈত্যটাই যা খারাপ। মেয়েকে হাসাতে চেষ্টা করলেন আফসার করিম। একটু টেনে-টেনে বললেন, দৈত্যেরা তো খারাপই হয় মা। শয়তানের বংশধর যে সব। তা আমার মেয়েটা কী এমন স্বপ্ন দেখল, জানতে পারি? আব্বুর কাঁধ থেকে মাথা নামিয়ে হাতের চেটো দিয়ে চোখ মুছল উপত্যকা। তারপর হাসতে চেষ্টা করল একটু। ভয়ের ছায়া অনেকটা সরে গেছে তার মুখের ওপর থেকে। চোখ বড়-বড় করে সে বলল, দৈত্যেরা দেখতে খুব বিচ্ছিরি হয়, তাই না আব্বু?
হাসলেন আফসার করিম। বললেন, তা তো হয়ই। এই বড়-বড় কান। কপালের দু’দিকে বড়-বড় দুটো শিং। দাঁতগুলো বিচ্ছিরি রকমের বেরিয়ে থাকে মুখের বাইরে। দেখলেই ওয়াক আসে। বলেই বমির ভঙ্গি করলেন তিনি। ঝলমল আনন্দে নেচে ওঠে উপত্যকার চোখমুখ। হাত নেড়ে-নেড়ে সে বলল, আর দেখেছো কী রকম লম্বা-লম্বা হাতপা। ও রকম আবার কারও হয় না কী! একদম বাজে।
হ্যাঁ, খুবই বাজে। বলে, মেয়েকে বুকের ওপর নিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লেন আফসার করিম। তারপর ডাকলেন, উপত্যকা?
উপত্যকা বলল, উঁ?
আফসার করিম বললেন, কী দেখলে স্বপ্নে বললে না তো।
বুকের ওপর বসে চোখমুখ অদ্ভুত ভঙ্গি করে উপত্যকা বলল, দেখলাম কী জানো, কী যে সুন্দর একটা বাগান... ও আচ্ছা, তুমি তো আর দেখোনি। ফুলের বাগান, বুঝলে? কত রকমের যে ফুল বাগানটায়। এরকম বাগান পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
আফসার করিম জিগেশ করলেন, অনেক রঙের ফুল, তাই না মা?
উপত্যকা বলল, তাই তো। তুমি যা বোকা না, রং ছাড়া কী আর ফুল হয়?
আফসার করিম বললেন, না। তা ঠিক হয় না। রং তো ফুলের থাকবেই।
গোল-গোল চোখ করে উপত্যকা বলল, হলুদ ফুল। লাল ফুল। বেগুনি ফুল। নীল ফুল। কত রঙের যে ফুল, না দেখলে তুমি বিশ্বাসই করবে না।
মেয়ের মতোই চোখ বড়-বড় করে আফসার করিম জানতে চাইলেন, তুমি দেখেছো এইসব ফুল?
উপত্যকা বলল, দেখেছি তো।
আফসার করিম বললেন, আমি তো আর দেখিনি। তাহলে কী করবে তুমি বলো তো?
জানতে চাইল উপত্যকা, কী করব আব্বু?
আঙুল দিয়ে মেয়ের থুতনি নেড়ে দিয়ে আফসার করিম বললেন, এইসব ফুলের ছবি তোমার ড্রইং খাতায় এঁকে আমাকে দেখাবে। তাহলে আমারও দেখা হয়ে গেল।
ছোট-ছোট হাতে তালি বাজিয়ে ওঠে উপত্যকা। হেসে ওঠে সে, বেশ তো মজা। তারপর ঘাড় কাত করে বলল, আজই এঁকে তোমাকে দেখাবো, ঠিক আছে?
হাসলেন আফসার করিম। বললেন, আর ওই পরির ছবিটা?
অবাক হয়ে যায় উপত্যকা। চোখ বড়-বড় করে চেয়ে থেকে সে বলল, তুমি জানলে কী করে আব্বু বাগানে একটা পরি ছিল?
জানি। কিন্তু পরি তো আমি আর দেখিনি। তাই তোমাকে পরির ছবিও একটা এঁকে আমাকে দেখাতে হবে। হাসি ছড়িয়েই থাকে আফসার করিমের চোখমুখে।
মাথা নাড়ল উপত্যকা। বলল, হ্যাঁ, তুমি তো আর দ্যাখোনি পরিটা। ঠিকাছে যাও, পরিটারও একটা ছবি এঁকে তোমাকে দেখাবো।
মেয়েকে বুকের ওপর দোলাতে-দোলাতে আফসার করিম বললেন, বাগানে তুমি আর পরি মিলে তারপর কী করলে?
দুহাত নেড়ে-নেড়ে বলতে থাকে উপত্যকা, জানো আব্বু, পরিটা কী যে ভালো! আমাকে ডানার ওপর বসিয়ে পরিটা নেচে-নেচে গান গেয়ে বেড়াতে লাগল ফুলের বাগানে। এক একটা ফুলের কাছে সে যায়, আর হেসে ওঠে ফুল। কী যে তাদের হাসি, চাঁদের আলোর মতো। খুব আনন্দ তখন তাদের। আনন্দ তখন আমারও।
কথা বলে ওঠেন আফসার করিম, একটা মুশকিল হয়ে গেল যে মা।
কী আব্বু? জানতে চাইল উপত্যকা।
আফসার করিম বললেন, ফুলের ছবি তো তুমি আঁকতে পারবে, কিন্তু ফুলের হাসি আঁকবে কী করে?
মুখ ভার হয়ে গেল উপত্যকার। বেশ কিছু সময় সে চেয়ে রইল আব্বুর মুখের দিকে। তারপর বলল, তাহলে কী হবে?
হেসে ফেললেন আফসার করিম। হাসতে-হাসতে বললেন, থাক, ফুলের হাসি তোমাকে আঁকতে হবে না। তুমি শুধু ফুলের ছবিই এঁকো। সেই ছবি দেখে আমি বুঝে নেব কী রকম হেসেছিল ফুলেরা।
ঘাড় নেড়ে উপত্যকা জানতে চাইল, ঠিকঠাক বুঝতে পারবে তো?
মাথা সামান্য কাত করে আফসার করিম জানতে চাইলেন, কী মনে হয় তোমার, পারব না?
দু’দিকে মাথা নাড়ল উপত্যকা, না-না, তা তো বলিনি। যদি না পারো। তুমি তো আর তখন ছিলে না।
বেশ তো। না বুঝতে পারলে তুমি বুঝিয়ে দিও। সহজ সমাধান বের করে দিলেন আফসার করিম। বললেন, তুমি তো দেখেছো কী রকম করে ফুলেরা হাসে?
মাথা নাড়ল উপত্যকা, সেটা হতে পারে।
মাথা নাড়লেন আফসার করিমও, তারপর কী করল পরিটা তোমাকে নিয়ে?
উপত্যকা বলল, পরির ডানার ওপর বসে আমি চাঁদ দেখতে পেলাম। হঠাৎ দেখলাম, চাঁদের ভেতর থেকে একটা পাখি উড়তে-উড়তে নেমে এলো বাগানে। কী যে সুন্দর পাখিটার গায়ের রং, কী যে দেখতে পাখিটার লেজ, সে আমি বোঝাতে পারব না তোমাকে।
এবারও সহজ সমাধান দিতে চেষ্টা করলেন আফসার করিম, ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিও।
তীব্রভাবে দু’দিকে মাথা নাড়তে-নাড়তে উপত্যকা বলল, না-না। সে ছবি আমি আঁকতে পারব না আব্বু। ও রকম সুন্দর ছবি আমি আঁকতে পারি না।
সমাধান দিতে না পেরে হতাশ হলেন যেন আফসার করিম। বললেন, তাই? এত সুন্দর সে পাখি? যে পাখির ছবি আমার মেয়েও আঁকতে পারে না?
গম্ভীর হয়ে যায় উপত্যকা, হ্যাঁ। আমার মনে হয় কী জানো, সে রকম সুন্দর রং পৃথিবীতেও নেই।
আচ্ছা, গম্ভীর হয়ে যান আফসার করিমও। জানতে চান, কী করল পাখিটা বাগানে নেমে এসে?
উপত্যকা বলল, আমার মাথার ওপর উড়ে-উড়ে গান গাইতে লাগল। মিষ্টি সুর ছড়িয়ে পড়ল তার গলা থেকে। কী যে আনন্দ হলো আমার। পরি গান গাইছে। পাখিটা গান গাইছে। ফুলেরা হাসছে। আমিও গুনগুন করে উঠলাম। আর ঠিক তখন...
হঠাৎ চোখমুখ ভয়ে কালো হয়ে গেল উপত্যকার। ঠোঁট কাঁপতে থাকে। বুকের ওপর শুয়ে আঁকড়ে ধরে সে আব্বুর গলা। তারপর বলল, সেই দৈত্যটা...
আফসার করিম মেয়ের পিঠে হাত বোলাতে-বোলাতে বললেন, কী করল দৈত্যটা এসে?
ভয়ে আর আতংকে কাঁপতে কাঁপতে উপত্যকা বলল, পাখিটার পেছনে ছুটতে লাগল। পাখিটা উড়তে-উড়তে পালিয়ে গেল। অন্ধকারে হারিয়ে গেল পাখিটা। এবার দৈত্যটা ছুটে এলো পরির দিকে। বিচ্ছিরি মুখ করে বলল, এই বাগান আমার। এখানে কেউ গান গাবে না। পরিটাও পালিয়ে গেল আমাকে ফেলে দিয়ে। যেতে-যেতে বলল, যে বাগানে কেউ গান গাইতে পারে না, সে বাগানে কেউ থাকতেও পারে না। থাকে কেবল ওই দৈত্য। তুমিও থেকো না সুন্দর মেয়ে। পালাও... পালাও...
ফ্যাসফেসে হয়ে গেল উপত্যকার কণ্ঠস্বর। অনেক দূর থেকে যেন সে কথা বলে উঠল, তারপর চাঁদ ডুবে গেল। অন্ধকার হয়ে গেল বাগান। কী যে ভুতুরে সেই অন্ধকার। ভূতেরা যেন কিলবিল করতে লাগল আমার চারদিক। আর কিছু বলতে পারল না উপত্যকা। কেঁদে উঠল।
কাঁপছেন আফসার করিম। সারা শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে তার। বুকের ভেতর ঢিবঢিব শব্দ শুনতে পেলেন। মনে হলো যেন, গভীর এক গর্তে পড়ে যাচ্ছেন তিনি। আর কোনও দিন উঠে আসতে পারবেন না।
একটু আগে এই ঘরে মিষ্টি সুর ছড়িয়ে দেয়া সেই পাখিটাকে তার মনে পড়ল। প্রথমে জানলায়, তারপর ওই টেবিলেই তো এসে বসেছিল পাখিটা। নিজের আনন্দে ডেকে যাচ্ছিল। আর তিনি চেয়েছিলেন পাখিটার গান থামিয়ে দিতে। যখন এগোচ্ছিলেন তিনি, পাখিটা দেখছিল একটা দৈত্য ছুটে আসছে তার দিকে। তার আনন্দগান থামিয়ে দিতে চায় এই দৈত্য। তবু ডেকে যাচ্ছিল সে। কিন্তু দৈত্যটা কাছাকাছি যেতেই সে পালিয়ে গেল গান থামিয়ে।
হঠাৎ নিজেকে কুৎসিত আর ভয়ংকর দেখতে পেলেন আফসার করিম। তার কপালের দু’পাশে যেন দুটো শিং গজিয়েছে। দাঁতগুলো হঠাৎ বেরিয়ে এসেছে মুখের বাইরে। নিজেই নিজের এই চেহারা দেখতে পেলেন তিনি। এবং কেঁপে উঠলেন। চিনতে পারছেন না আর নিজেকে। চিনতে পারছেন কেবল একটা দৈত্যকে। দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেললেন। কীভাবে নিজের এই মুখ তিনি দেখাবেন তার ছোট্ট মেয়েকে? ধরা পড়ে যাবেন যে!