আবু তাহের সরফরাজের গল্প ‘খান্নাস’
প্রকাশিত : মার্চ ২৪, ২০২০
আদম ও বিবি হাওয়া ইবলিসের ধোকায় পড়ে গন্ধম খেলেন। এরপর তারা ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেন। আল্লাহ তাদেরকে মাফ করলেন। আর তাই, আদম-হাওয়া আবারও একসঙ্গে থাকতে শুরু করলেন।
একদিন বিবি হাওয়া একা ছিলেন। ইবলিস এলো তার কাছে, সঙ্গে এক ছোট্ট শিশু। ইবলিস বলল, এটি আমার ছেলে খান্নাস। বিশেষ দরকারে আমাকে দূরে যেতে হচ্ছে। তোমার আপত্তি না থাকলে কিছু সময় খান্নাসকে তোমার কাছে রেখে যেতে চাই।
বিবি হাওয়া আর আপত্তি করলেন না। বললেন, থাক, ছোট্ট শিশু! কিন্তু তুমি যেন আবার বেশি দেরি করো না। ওদিকে উনি এসে পড়বেন।
ইবলিস চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আদম ফিরে এলেন। প্রিয়তমা হাওয়া তখন খান্নাসের সঙ্গে গল্পগুজবে মেতে উঠেছে। বিবির ওপর বেশ চটলেন আদম। বললেন, খান্নাস যে ইবলিসের সন্তান তা তো তুমি জানো। তবু তার সঙ্গে তুমি, ছিঃ! আমি অবাক হচ্ছি, কীভাবে তুমি ইবলিসের ধোঁকার কথা এরই মধ্যে ভুলে গেলে?
এই বলে আদম খান্নাসের দেহ কয়েক টুকরো করে ঝুলিয়ে রাখলেন বিভিন্ন গাছের ডালে।
আরেকদিন। বিবি হাওয়া একা বসে আছেন। ইবলিস এলো। জিগেশ করল, খান্নাস কোথায়?
হাওয়া সব কথা তাকে বললেন।
একথা শুনেই ইবলিস চিৎকার দিয়ে উঠলেন, খান্নাস?
সাথে সাথে খান্নাসের খণ্ডিত দেহ এক হয়ে গেল। জীবিত হয়ে উঠল খান্নাস।
বিবি হাওয়াকে ইবলিস বলল, দ্যাখো, আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি। অথচ এই শিশু-বাচ্চাটাকে নিয়ে পড়েছি বিপাকে। তুমি কি কিছু সময়ের জন্য একে তোমার কাছে রাখবে?
হাওয়া বলে উঠলেন, না-না, তা আর সম্ভব না। আদমের কড়া নিষেধ। খান্নাসকে আমি আর আমার কাছে রাখতে পারব না।
ইবলিস তবু নাছোড়বান্দা। শেষমেষ রাজি হলেন বিবি হাওয়া। তবে শর্ত দিলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ইবলিস ফিরে আসবে।
ইবলিস কিন্তু ফিরল না। ফিরলেন আদম। এবার আদম বললেন, দ্যাখো বিবি, বারবার তুমি সীমালঙ্ঘন করছ, কেন করছ?
বিবি হাওয়া নিরুত্তর। মাথা তার নত।
এবার আগুনের ফুলকির মধ্যে ফেলে খান্নাসকে ভস্ম করলেন আদম। অর্ধেক ছাই উড়িয়ে দিলেন বাতাসে, বাকিটা ভাসিয়ে দিলেন সমুদ্রের পানিতে।
আরো একদিন। গাছের নিচে একা একা বসে আছেন বিবি হাওয়া। ইবলিস এলো। তাকে দেখেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন বিবি হাওয়া। বললেন, তুমি তো আসলেই মহাবদ। সেই যে ছেলেকে রেখে গেলে, আর এই এলে?
ইবলিস বিনীতভাবে বলল, কী করব, আমার কী আর একটা-দুটো কাজ। তা খান্নাস কোথায়?
বিবি হাওয়া বললেন, সে নেই। আদম তাকে পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলেছে।
একথা শুনেই ইবলিস চিৎকার দিয়ে উঠল, খান্নাস?
মুহূর্তে বাতাসে উড়ে যাওয়া আর সমুদ্রে মিশে যাওয়া ছাই এক হয়ে খান্নাস জীবিত হয়ে উঠল।
বিবি হাওয়াকে ইবলিস বললেন, তোমাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। অনেক করেছ তুমি, তবে এবার যদি...
হাওয়া বলে উঠলেন, না-না। তোমার খান্নাসকে এবার তুমি নিয়ে যাও। অনেক হয়েছে, আর আমি তাকে রাখতে পারব না।
ইবলিস খুব বিনীতভাবে বলল, তুমি তো মমতাময়ী মায়ের জাতি। এরকম নিষ্ঠুরতা কি তোমাকে মানায়? আমি কথা দিচ্ছি, আমি যাব আর আসব। দু’পলক মাত্র সময়। এ মুহূর্তটুকু কি তুমি খান্নাসকে তোমার কাছে রাখতে পারবে না?
হাওয়া বললেন, ঠিক আসবে তো?
ইবলিস বলল, ঠিক আসব।
কিন্তু ইবলিস এলো না। কিছু সময় পর আদম ফিরে অবস্থা দেখে হাওয়াকে কিছুই বললেন না। তবে খান্নাসকে জবেহ করলেন। মাংস ছোট ছোট টুকরো করে রান্না করলেন। রান্না মাংস অর্ধেক খাওয়ালেন বিবি হাওয়াকে, বাকিটা তিনি খেলেন।
দূরে দাঁড়িয়ে ইবলিস সবই দেখল। পুত্রশোক কিছুটা পেলেও সে চূড়ান্ত খুশি হলো। কেননা, সে যা চেয়েছিল তাই হয়েছে। তার সন্তান খান্নাস এখন মিশে গেছে আদম আর হাওয়ার রক্তে।
মিন শারলিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস। মানে, খান্নাস মানুষের মনের গভীরে প্ররোচনা দ্যায়। কোরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যা হিসেবে দরবেশ আলি হাকিম তিরমিজি খান্নাসের এ কেচ্ছা শিষ্যদের বলেন।