আবরাররা বীর, নব্য নীলকণ্ঠ কিংবা এযুগের যীশু

মারিয়া সালাম

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৮, ২০১৯

সন্তানদের গায়ে সামান্য একাটা আঁচড় লাগলেও সে ব্যথা মায়েরা নিজের শরীরে টের পায়। মনে মনে সব ব্যথা নিজের শরীরে ধারণ করে।

 

আবরারের মায়ের শরীরে, মনে এই কষ্ট কতদিন স্থায়ী হবে, কত রাত উনি দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠে কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন, সে কল্পনা আমি করতে চাই না। ভাবলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, স্নায়ু ভোঁতা হয়ে যায়।

 

ভগবান শীব জগতের সব বিষ নিজের কণ্ঠে ধারণ করে হয়েছিলেন নীলকণ্ঠ। আর্যসমাজ শীবের যে পতি বা প্রেমিক রুপ গড়ে তুলেছে বছরের পর বছর ধরে, আমি সেই রুপকে প্রত্যাখ্যান করে শীবকে দেখি এই ভূমির একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে, যিনি ভগবান নন। যিনি বীর ভূমিপুত্র। নষ্ট সময়ের বিষ যিনি একাই নিজের শরীরে ধারণ করেছিলেন। যেমনটা করেছিলেন খ্রিস্ট আর সক্রেটিস।

 

আবরারের নীল হয়ে আসা শরীরটা দেখে কাল রাত থেকে কেবলই ভাবছিলাম সত্য বলে, নিজের শরীরে এমন বিষ আর কয়জন টেনে নিতে পারে, কয়জনের এরকম সৌভাগ্য হয়! আর কয়জনকে সৃষ্টিকর্তা এভাবে বেছে নেন!

 

লোকগাথা বীরদের শারীরিক শৌর্য-বীর্যের গল্প প্রচার করে, সেখানে মনের জোর খুব কম স্থান পায়। রুপকথার গল্পে বীরদের তলোয়ার বা তাদের বাহুবলের কথা লেখা থাকে। যুদ্ধের বিশাল মাঠে একা কিভাবে লড়াই করে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে সে কিভাবে বেঁচে ফিরে, সেই গল্প লেখা থাকে। আবরারকে নিয়ে এমন রুপকথার গল্প লেখা হলে সেখানেও দেখানো হতো সে কিভাবে শত্রুর সাথে একা লড়ে স্যামসানের মতো শত্রু সমেত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে।

 

লোকগাথায় মনের জোরের কথা লিপিবদ্ধ থাকলে, দেখা যেত যুদ্ধের মাঠে নয়, প্রজ্ঞার প্রাঙ্গণে সক্রেটিস আর গ্যালিলিওর মতো একেকজন বীর নিজের জীবন বাজি রেখে কিভাবে সমাজের ভ্রান্তিমূলে আঘাত করেছেন। কিভাবে, হাজারো মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়ে যাচ্ছেন। কিভাবে নিজের নীতি প্রতিষ্ঠা করতে মরে গিয়ে জীবন দিয়েও অমর হয়ে আছেন।

 

অতীতে যারা সত্য বলে নিজেদের প্রাণ দিয়েছেন, আবরারের মতো যারা প্রতিনিয়ত প্রাণ দিয়ে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতেও যারা জীবন বিসর্জন দিবেন, তাঁরা সবাই বীর, তাঁরা নব্য নীলকণ্ঠ বা এযুগের যীশু।

 

লেখক: গল্পকার ও গণমাধ্যমকর্মী