আফ্ফান মাহমুদের গদ্য ‘শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসের ভাষ্য’

প্রকাশিত : মার্চ ১৮, ২০২২

শবে বরাত বা লাইলাতুল বারা`আত অথবা নিসফে শাবান সবগুলোর উদ্দেশ্য একটাই। তবে হাদিসে এসেছে, `লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান` (ليلة النصف من شعبان) শব্দ দিয়ে। নিসফে শাবান তথা শা`বানের ১৫তম দিন নিয়ে অনেকে বাড়াবাড়ি করে। আবার অনেকে খুব শিথিলতা দেখায়। বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি দুটোই ইসলামে অগ্রহণযোগ্য। শিথিলতা যারা দেখায় তারা বলতে চায়, শবে বরাত নামের কোনো দিনই নেই। আর যারা বাড়াবাড়ি করে তারা বিদআতের মতো জঘন্য কাজ করে বসে।

তাই জেনে নিই, এ ব্যাপারে আসলে হাদিস কী বলে। হাদিসের গ্রন্থাবলী পর্যালোচনা করলে লাইলাতুল বরাআত নিয়ে অনেক হাদিস দেখা যায়। ওখান থেকে কিছু হাদিসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হওয়ার ভিত্তিতে অনুসরণীয়। আবার কিছু হাদিসের অগ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হওয়ায় অনুসরণ করা যায় না।

বিশুদ্ধতা প্রমাণিত একটি হাদিস:
ইমাম বাইহাকী রহি: সা`বুল ঈমান অধ্যায়ে রেওয়াত করেন, হযরত আবু সা`লাবা রাজি বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শা`বানের ১৫ তারিখ রাত্রে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা`য়ালা স্বীয় সৃষ্টিজগতের নিকটবর্তী হন। এরপর মুমিনদেরকে ক্ষমা করেন, কাফেরদের সুযোগ দেন (আল্লাহর আনুগত্যের জন্য) আর বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তিদের মৃত্যু অবধি আপন অবস্থায় রেখে দেন। -তাবারানী। শায়খ আলবানী রহি: এটাকে স্বীয় সহীহুল জামে গ্রন্থে হাসান বলেছেন।

এ সম্পর্কে আরেকটি বিশুদ্ধ হাদিস:
আবু মুসা রাজি: থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ১৫ সাবানের রাতে তো আল্লাহ সৃষ্টি জগতের নিকটবর্তী হন। মুশরিক ও মুনাফিক অর্থাৎ মুসলমানদের মাঝে বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহ সকল সৃষ্টি জীবকে ক্ষমা করে দেন। -ইবনে মাযা ও ইবনে হিব্বান (বর্ণনাকারী হলেন মুআজ ইবনে জাবাল)

শবে বরাতের শিক্ষা:
উপরোক্ত দুটি হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, শবে বরাতের মৌলিক দুটি শিক্ষা রয়েছে। এক. প্রকৃত মুমিন হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ। দুই. মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারীর প্রতি আল্লাহর চির অসন্তুষ্টির কথা বর্ণনা করে এমন ঘৃণ্য কাজ থেকে মুসলিমদের সাবধান করতে।

শবে বরাত সম্পর্কে একটি প্রসিদ্ধ বানানো হাদিস:
আলী রাযিআল্লাহু তা`আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সাবানের ১৫ তারিখের রাতে তোমরা ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ওইদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত পৃথিবীর আকাশ অর্থাৎ প্রথম আসমানে অবস্থান করেন। এরপর বলতে থাকেন, কেউ কি আছো, যে ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? কেউ কি আছ, যে রিযিক চাও, আমি তাকে রিজিক দেব? কেউ কি কষ্টে আছ, আমি তার কষ্ট দূর করে দেব? আমার কাছে যা কিছু চাই আমি তা দেব? এভাবে ফজর পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন। -ইবনে মাজাহ। বায়হাকী

ইমাম আহমাদ রাহি: এটাকে মৌজু বলেছেন। এটাকে আরো মৌজু বলেছেন শাইখ বুসিরী ও ইবনে রজব রহি:।

আর জয়ীফ অর্থাৎ দুর্বল বলেছেন শায়খ আলবানী রহি:
শবে-বরাতের উদ্দেশ্য করে যে রোজা রাখা হয়, সেটা বেদায়াত। তবে শবে বরাতের দিন যেহেতু আইয়ামে বীজের তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ এর অন্তর্ভুক্ত, তাই আইয়ামে বীজের নিয়ত করে রোজা রাখা সুন্নাত।

এখানে একটা লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, অনেকে মনে করে, এই দিনে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ধারণাটা ভুল। কারণ, কুরআন মাজিদের সূরা দুখানের ৩ ও ৪ আয়াতে আল্লাহ নিজেই এরশাদ করছেন, কোনদিন ভাগ্য নির্ধারণ করা হয় এ বিষয়ে: ‘আমি কোরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।‘ ওই রাতেই প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয়।

কোরআন নাজিল কোন দিনে হয়েছে, তা আমাদের সকলের জানা। অর্থাৎ, লাইলাতুল কদরে। এখানে বলা হচ্ছে, ওই দিনেই ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। সুতরাং বোঝা গেল, লাইলাতুল কদরেই ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। লাইলাতুল বারাআতে নয়।