আন্না শিয়েরচিন্সকা
আন্না শিয়েরচিন্সকার ১৮টি কবিতা
বাঙ্লায়ন: রথো রাফিপ্রকাশিত : জুন ০২, ২০২১
আমি বেডপ্যান বইতাম
সেবিকা হিসেবে হাসপাতালে কাজ করতাম
যেখানে ওষুধ ও পানি বলতে কিছু নেই।
আমি বেডপ্যান বইতাম
ভরা থাকতো পুঁজ, রক্ত আর মলমূত্রে।
আমি পুঁজ, রক্ত আর মলমূত্র ভালবাসতাম—
তারাই ছিল জীবনের মতো একমাত্র জীবন্ত,
আর চারপাশে বিরল হয়ে আসছিল শুধু
জীবনের উপস্থিতি।
মরে যাচ্ছিল যখন পৃথিবীটা,
আমি শুধু দুটি হাত, আহতদের মাঝে যারা
এগিয়ে দিচ্ছিল বেডপ্যান।
আছে শুধু ইঁদুরেরাই
এই শহরে
আর কোনো লোকজন নেই। মাঝে মাঝে একটা বেড়াল
জ্বলন্ত চোখে
চিপা গলি ছেড়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসে
মরতে।
কিংবা একটা ইঁদুর
ছুটে যায় রাস্তার আরেক মাথায়।
কিংবা শানবাঁধা ফুটপাথের ওপর
একটা বইয়ের কোনো পাতা এলোমেলো করে বাতাস
আর কাচের ঝকঝকে টুকরো ছুঁড়ে
আঘাত করে জানালায়।
চৌদ্দ বছর বয়েসি নার্সের ভাবনা
এই পৃথিবীতে যদি সমস্ত বুলেট
আমাকেই আঘাত করতো,
তাহলে তারাতো আর কাউকে আঘাত করতে পারতো না।
আর এই পৃথিবীতে যত লোক আছে
ততবার আমাকেই শুধু মরতে দাও,
যেন তাদের আর মরতে না হয়,
এমনকি জার্মানদেরও।
আর কেউ যেন না জানে
তাদের জন্যই যে আমি মারা গেলাম,
যেন তারা দুঃখ না পায়।
বিয়ের সাদা চপ্পল
মা রাতে একটি ড্রয়ার খুললেন। বের করলেন
তার বিয়ের সাদা চপ্পল জোড়াটি
রেশমের তৈরি। ধীরে ধীরে
এগুলো কালি দিয়ে লেপে নিলেন।
খুব ভোরে উঠে
তিনি সেই চপ্পল জোড়া পায়ে
বের হলেন রাস্তায়
রুটির জন্য লাইনে দাঁড়াতে।
তখন তাপমাত্রা শূন্যের দশ ডিগ্রি নিচে,
তিনি রাস্তার ওপর
দাঁড়িয়ে রইলেন পাক্কা তিন ঘণ্টা।
তারা জনপ্রতি বিলি করছিল
একটা পাউরুটির চার ভাগের এক ভাগ।
তিন তলা থেকে তিনি লাফিয়ে পড়েননি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ওয়ারশ।
আজ রাতে তারা বোমা ফেলল
থিয়েটার স্কয়ারে।
থিয়েটার স্কয়ারে রয়েছে
বাবার নিজের ওয়ার্কশপ।
সমস্ত পেইন্টিংস, চল্লিশ বছরের
শ্রমের ফসল।
পরের সকালে থিয়েটার স্কয়ারে
গেলেন বাবা।
তিনি দেখলেন।
তার ওয়ার্কশপের ছাদ নেই,
দেওয়াল নেই,
মেঝেয় নেই।
লাফিয়ে পড়লেন না বাবা
তিন তলা থেকে।
বাবা শুরু করলেন
ফের শুরু থেকে।
বাবার ওয়ার্কশপ
আমার দ্বিতীয় জন্মের জন্য
বাবার ওয়ার্কশপের কাছে ঋণী।
বাবা এর দেয়ালগুলো কালো রঙে
ছুপিয়েছিলেন, এটা ছিল কফিনের
মতোই মহীয়ান, কালো দেওয়ালগুলোতে
লম্বা স্টেইনগ্লাস পেইন্টিংগুলো
ঘরের কোনো বেয়ে উঠতো, যা ছিল
শক্তি, তার ওপর ঠেস দিয়ে ছিল দাঁড়িয়ে,
প্রতিদিনই তারা আরও লম্বা হতো, তাদের ডানা
ঝাপটাতো উঁচু ছাদের গায়ে, বাবা
একটা ওভারকোটের গায়ে আঁকছিলেন, ছিলাম ঠাণ্ডা
আর ক্ষুধার্ত, আমি মেঝের ওপর পা
আড়াআড়ি ভাঁজ করে বসে থাকতাম,
আমাদের কোনো টেবিল ছিল না, আর আমি লিখতাম
লাটিন ক্রিয়াপদগুলো, আর একটা তাকে
স্যুপ ফুটতে থাকতো, মা অসুস্থ
সেখানে শুয়ে থাকতেন, আমি ভয় পেতাম
বুঝি মরেই যাবেন তিনি, আমি তাদের
শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনতাম, ছাদের জানালাটা
তুষার জমে সাদা, কয়লাও
নিঃশেষ, আমি ভাবতাম
কম্বলের নিচে আমি
হয়ে উঠবো স্পিরিট-রাজা, ছাদে
একটা আংটা ছিল, যার মধ্যে থেকে
একজন ক্ষুধার্ত শিল্পী
যিনি এখানে বাস করতেন
নিজেকে ফাঁসে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি ভাগ্যবান
এক বুড়ো
বাড়ি ছাড়লেন, সঙ্গে নিলেন বইগুলো।
এক জার্মান সেনা বইগুলো কেড়ে নিয়ে
কাঁদার ওপর ছুড়ে ফেলল।
বুড়ো বইগুলো কুড়িয়ে নিতে গেলেন,
সেনা ব্যাটা ঘুষি বসাল বুড়োর মুখে।
বুড়ো কাদার ওপর ছিটকে পড়লেন,
তাকে লাথি মেরে চলে গেল সৈনিকটা।
বুড়ো মানুষটা
কাদা আর রক্তের মাঝে পড়ে রইলো।
নিজের নিচে অনুভব করতে লাগলেন
ওই বইগুলো।
চোখে গুলি করা
সে ছিল পনের বছরের ছেলে,
সবচেয়ে মেধাবী পোলিশ ছাত্র।
পিস্তল হাতে
ছুটে গেল শত্রুর দিকে।
তখনই তার সামনে ভেসে ওঠলো এক লোকের চোখ
উচিত ছিল ওই চোখ দুটিতেই গুলি করা।
দ্বিধা করলো সে।
সে ফুটপাথে পড়ে আছে।
পোলিশ স্কুলে
তারাতো শেখায়নি তাকে
লোকের চোখে গুলি করা।
কবিতা পাঠ
আমিতো গুটিয়ে বল হয়ে গেছি
ঠাণ্ডায় কাতর
সেই কুকুরের মতো
কে বলবে আমাকে
কেন জন্মেছিলাম,
কেন এই দানবিকতাকে
বলা হয় জীবন।
টেলিফোন বেজে ওঠে। আমাকে কবিতা
পাঠে অংশ নিতে হবে।
আমি প্রবেশ করি।
শ’খানেক মানুষ, শতজোড়া চোখ।
তারা তাকিয়ে, তারা অপেক্ষায়।
আমিও জানি কেন।
আমি তাদেরকে সম্ভবত বলতে যাচ্ছি
কেন জন্মেছিল তারা,
কেন এই দানবিকতাকেও
বলা হচ্ছে জীবন।
দেওয়ালে মাথা ঠুকেছিলাম
যখন শিশু ছিলাম
সন্ন্যাসী হতে
আগুনে
আঙুল দিয়েছিলাম।
কিশোর ছিলাম যখন
দেওয়ালে মাখা ঠুকতাম রোজ।
তরুণী হলাম যখন
চিলেকোঠার জানালা দিয়ে বের হয়ে
ছাদে চলে যেতাম
লাফিয়ে পড়তে।
নারী হলাম যখন
আমার সারা শরীরে উকুন আর উকুন।
আমার সুয়েটার যখন ইস্ত্রি করতাম তারা পটপট শব্দে ফাটতো।
আমি ষাট মিনিট ফাঁসির রশির
অপেক্ষায় ছিলাম।
ছয় বছর আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম।
তারপর একটা শিশুর জন্ম দিলাম,
তারা আমাকে ঠুকরাতো
ঘুমাতে দিতো না আমাকে একফোঁটা।
তারপর একটা আকস্মিক বিজলিপাত হত্যা করলো আমাকে
তিনবার আর আমাকেও মৃত্যু থেকে ফিরতে হয়েছিল তিনবারই
কারো কোনো সাহায্য ছাড়াই।
এখন আমি আয়েশ করছি
তিনবার বেঁচে ওঠার পর।
আগামী দিন তারা কাটাকুটি করবে আমাকে
মৃত্যু এলো আর দাঁড়ালো পাশঘেঁষে।
বললাম, আমি প্রস্তুত।
ক্রাকাউয়ের অস্ত্রোপচার ক্লিনিকে শুয়ে আছি আমি।
আগামী দিন
তারা কাটাকুটি করবে আমাকে।
আমার মাঝে বেশ সাহস। আমি বাঁচতে
দৌড়াতে, নাচতে আর গাইতে পারি।
আমার মাঝে এ সবই আছে, তবে দরকারে
আমিও চলে যাব।
আজ
জীবনের হিসেব-নিকেশ করলাম আমি।
ছিলাম পাপী,
ধরাধামে আমি কত যে মাথা ঠুকেছি,
মাটির পৃথিবী আর আকাশ থেকে আমি ক্ষমার জন্য
গভীর মিনতি জানিয়েছিলাম।
আমি ছিলাম সুন্দর ও কুৎসিত,
প্রজ্ঞাবান ও মূর্খ,
খুবই সুখী আর খুবই অসুখী
প্রায় আমার ডানা গজাতো
আর বাতাসে ভেসে বেড়াতাম।
রোদের তলে আর তুষারের মাঝে হাজারও পথ আমি মাড়িয়েছি,
নক্ষত্রের তলে আমি নেচেছি আমার বন্ধুর সঙ্গে।
আমি কত মানুষের চোখে
ভালোবাসা দেখেছিলাম।
সুখের টুকরোগুলো আমি ভোজন করেছিলাম
কত না আনন্দে।
এখন আমি ক্রাকাউয়ের অস্ত্রোপচার ক্লিনিকে শুয়ে আছি।
আগামী দিন
তারা কাটাকুটি করবে আমাকে।
জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে মে মাসের গাছগুলো, জীবনের মতো অপূর্ব
আর আমার মাঝে, নম্রতা, উদ্বেগ-ভয়, আর শান্তি।
আমার দেহকে বলি
আমি আমার দেহকে বলি,
তুমি জিন্দালাশ, আমি বলি,
তুমি জিন্দালাশ, বাক্সে ভরা, পেরেক মারা,
বধির এবং অন্ধ
কুলুপ আটা যেন।
চিৎকার না করা পর্যন্ত তোমাকে পিটানো উচিত,
টানা চল্লিশ দিন উপোস ফেলে রাখা উচিত,
ঝুলিয়ে রাখা উচিত তোমাকে হাবিয়া দোজখে।
হয়তো এরপরই শুধু তোমার মধ্যে কোনো জানালা খুলবে
সবকিছুর দিকে যা কিছুর অস্তিত্ব আছে বলে আমি ভাবি
সবকিছুর দিকে যা কিছু আমার কাছ থেকে লুকানো।
আমার দেহকে বলি,
তুমি জিন্দালাশ,
তুমি ব্যথা এবং ক্ষুধার ভয়ে আছো,
তুমি ভীত
নরকের ভয়ে।
তুমি, বধির, অন্ধ লাশ— আমি বলি
আর আয়নায় থুতু ছুঁড়ি।
দেহের সঙ্গে কথা বলি
দেহ আমার, তুমিতো পশু একটা
যার সহি আচরণ
নিবিষ্টতা আর সুশৃঙ্খলা।
এ কাজতো
অ্যাথলেটের, সন্তের, কোনো যোগীর।
সুপ্রশিক্ষিত
তুমি হয়তো আমার জন্য হয়ে উঠবে
এমন একটা প্রবেশ তোরণ
যার মধ্য দিয়ে আমি আমাকেই ছেড়ে যাব
আর এমন একটা প্রবেশ তোরণ
যার মধ্য দিয়ে আমি ঢুকবো নিজের মধ্যে।
পৃথিবীর কেন্দ্রে যাওয়ার একটা প্লাম্ব লাইন
আর বৃহস্পতি গ্রহে যাওয়ার একটা মহাকাশযান।
দেহ আমার, তুমিতো একটা পশু
যার সঙ্গে আকাঙ্ক্ষাই
মানানসই।
অপূর্ব সব সম্ভাবনা
আমাদের জন্য খোলা।
ইহুদি বস্তি: এক মা
শ্বাস আটকে আধমরা শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে, চিৎকার করতে করতে
আগুন ধরা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সিঁড়ি ধরে ছুটে যাচ্ছিল সে।
প্রথম তলা থেকে দ্বিতীয় তলায়।
দ্বিতীয় থেকে তৃতয়ি তলায়।
ততৃীয় থেকে চতুর্থ তলায়।
ছুটতে থাকলো যতক্ষণ না ছাড়ে উঠে এলো।
সেখানে বাতাসের অভাবে শ্বাসরোধ হয়েও চিমনি আঁকড়ে ঝুলে থাকলো,
নিচে সেখানেই তাকালো সে যেখান থেকে শুনতে পাচ্ছিল
উঠে আসছে শিখার চরচর শব্দ, যা আরও উপরে, আরও উপরেই উঠে আসছিল।
তারপর সে থেমে গেল আর হয়ে গেল নীরব
আর শেষপর্যন্ত নীরবই রইলো যতক্ষণ না সেই মুহূর্ত এলো
যখন সে হঠাৎই তার চোখের পাতা দৃঢ়ভাবে বন্ধ করে ফেললো,
ছাদের কার্নিশে পা বাড়ালো আর, তার হাত ছুঁড়ে দিল সামনের দিকে,
নিচে ছুঁড়ে দিল তার শিশুটিকে।
সে নিজে লাফিয়ে পড়ার মাত্র দুই সেকেন্ড আগে।
সাগর আর লোকটি
এই সাগরকে তুমি পোষ মানাতে পারবে না
না বিনয় দেখিয়ে, না জোর খাটিয়ে।
তবে তুমিতো হেসে উঠতেই পারো
এর মুখের ওপর।
হাসিতো
তাদেরই সৃষ্টি
যাদের জীবন অট্টহাসির মতোই
ছোট খুব।
শাশ্বত সাগর
কখনও হাসতে শেখে না।
পারি না
আমি তোকে ঈর্ষা করি। প্রতিটি মুহূর্তে
তুই আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস।
আমি পারি না
নিজেকে ছেড়ে যেতে।
জানালাটা খুলব আমি
বহু বহু দিন টিকেছিল আমাদের আলিঙ্গন।
আমরা হাড়ে হাড়ে ভালো বেসেছিলাম।
হাড়গুলো ধসে পড়ার শব্দ পাই আমি, দেখতে পাই
আমাদের করুণ কঙ্কাল দুটি।
এখন অপেক্ষা করছি
কখন তুমি চলে যাবে, কখন
তোমার জুতোর থপ থপ শব্দ
আর শোনা যাবে না। এখন নৈঃশব্দ্য।
আজরাতে আমি একা ঘুমাতে যাচ্ছি
বিশুদ্ধতার চাদরে।
একাকিত্বই
প্রথম স্বাস্থ্যসম্মত পন্থা।
একাকিত্বই
দেয়ালগুলোকে আরও সম্প্রসারিত করে,
আমি অবশ্যই জানালা খুলে দেব
আর তুষারমাখা সুপ্রচুর বাতাস এসে ঢুকবে,
ট্রাজেডির মতোই স্বাস্থ্যপ্রদ।
মানব চিন্তা এসে ঢুকবে,
আর মানব দুশ্চিন্তা,
অন্যের দুর্ভাগ্য, অন্যের পবিত্রতা।
তারা কথা বলবে পরস্পর কোমল কঠোর ভাষায়।
এসো না আর।
আমি একটা জন্তু
বড় দুর্লভ।
সেরা প্রেম
ষাট বছর তার বয়স। জীবনের
সেরা প্রেমটাই করে বেড়ান।
প্রিয় মানুষের বাহুলগ্না হয়ে হাঁটেন
চুল তার বাতাসে স্রোতের মতোই ভাসে।
তার প্রিয় মানুষটিও বলে ওঠে,
তোমারই আছে শুধু মুক্তোর মতো চুল।
তার ছেলেমেয়েরা মন্তব্য করে, বড়ো ভাঁড়।
কবি পরিচিতি: আন্না শিয়েরচিন্সকার পরিচিত নাম, আন্না সয়ার। ১৯০৯ সালে জন্ম নিয়ে মারা যান ১৯৮৪ সালে। পোলিশ এই কবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজের অভিজ্ঞতা, মাতৃত্ব, নারী শরীর ও এর সংবেদনকে বেছে নিয়েছিলেন কাব্যবিষয় হিসেবে। আন্না ওয়ারশতে জন্মেছিলেন। বেড়ে উঠেছিলেন একজন শিল্পীর কন্যা হিসেবে গরিব এক পরিবারে। ১৯৩০ সালের দিকে তিনি নিজের কবিতা ছাপতে শুর করেন। পোলান্ডে নাজি দখলদারির সময় তিনি পোলিশ প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঘটনা। ওয়ারশ বিদ্রোহের সময় তিনি সেনাবাহিনীর নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আন্ডারগ্রানউন্ড পত্রিকার জন্য লিখতেন। একবার নিজের ফাঁসি হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন অন্তত এক ঘণ্টা। চেশোয়াভ মিলোজ সে সময় থেকেই তাকেই চিনতেন। আর তার একগুচ্ছ লেখা অনুবাদও করেছিলেন। যুদ্ধের সময়ের অভিজ্ঞতা তার কবিতাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে। ১৯৭৪ সাল আন্না কবিতার বই ‘ব্যারিকেড গড়ে তোলো` প্রকাশ করেন। বইটিতে তিনি নিজের চোখে দেখা দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন। সে সময়ে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তিনি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিজের নারী শরীর নিয়েও সোজাসাপ্টাভাবে লিখেছেন। কবিতা ছাড়া শিশুতোষ নাটক ও গল্পও লিখেছেন। শিশুদের জন্য একটি থিয়েটারও চালাতেন। ১৯৪৫ সাল থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ক্রাকাউয়ে বাস করেন এই নারী। চেশোয়াভ মিলোজ ও লিওনার্দ নাথান এর ইংরেজি ভাষান্তরে তার ব্যারিকেড গড়ে তোলা (১৯৭৪), কুত্তার লেজের মতো সুখী (১৯৮৫) সূর্যের মতো মোটা (১৯৮৬) এবং আমার শরীর নিয়ে কথা (১৯৯৬) কবিতার বইগুলো একে একে প্রকাশ হয়েছে। আন্না সয়ার নিজের জীবদ্ধশায় ক্রিজ কাওয়ালারস্কি ওদরোদজেনিয়া পোলস্কি (১৯৫৭), ক্রিজ অফিসারস্ক অরদেরু ওদরোদজেনিয়া পোলস্কি (১৯৭৫), নাগরোদা মিয়াস্তা ক্রাকোয়া (১৯৭৬) এবং মেডাল কোমিসজি এদুকাকজি নারোদোয়েজ পুরস্কারে ভূষিত হন।