আন্দোলনে আ.লীগের কাণ্ডারি ছিলেন যেসব শিল্পী
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈর সরকার দেশজুড়ে গণহত্যা চালানোর ভার্চুয়াল উৎসবে মেতেছিলেন আওয়ামীপন্থি শিল্পীরা। সম্প্রতি কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও দলটির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শিল্পীদের কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
‘আলো আসবেই’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তারা গণ-আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। গ্রুপের অ্যাডমিনদের একজন এবং মূল হোতা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। তার সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
গ্রুপের অ্যাডমিনে আরও ছিলেন: চিত্রনায়ক রিয়াজ, অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি স্ক্রিনশট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্রুপের সদস্যরা আন্দোলনের বিপক্ষে সরব ছিলেন। আন্দোলনকারী ও আন্দোলনের পক্ষে থাকা নির্মাতা ও শিল্পীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিলেন তারা।
ছাত্র–জনতার ওপর দমন–পীড়ন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা গেছে অল্প কয়েকজন শিল্পীকে। মূলত তারাই ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতিকে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন। ফায়ার সার্ভিস ও গণমাধ্যমকে ঢুকতে দিচ্ছে না টোকাই জামাত শিবিরের মেধাবী আন্দোলনকারীরা।’
তখন আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস বলেছেন, ‘গরম জল দিলেই হবে।’
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের শিল্পীদের কেউ কেউ গা ঢাকা দিয়েছেন। কারও কারও ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ দেশের বাইরে পাড়ি দিয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আশফান নিপুন, অভিনেতা সিয়াম আহমেদ, অভিনেত্রী নাজিফা তুষি, সাদিয়া আয়মানসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে ক্রোধ প্রকাশ করেছেন ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের সদস্যদের কেউ কেউ। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নাজিফা তুষিদের কেউ এ গ্রুপে ছিলেন না।
আন্দোলনের পক্ষে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে দেন লিমন। ফারুকীকে প্রকাশের অযোগ্য ভাষায় গালি দিয়েছেন অভিনেত্রী সোহানা সাবা, অরুণা বিশ্বাস, জ্যোতিকা জ্যোতিসহ আরও কয়েকজন।
আন্দোলনের পক্ষে যারা প্রোফাইল লাল করেছিলেন তাদের চিনে রাখা এবং পরবর্তী সময়ে ‘সাইজ করার’ হুমকির কথাও এসেছে এই গ্রুপে।
আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে প্রোফাইল ‘লাল’ করায় এক সংগীতশিল্পীকে নিয়ে অরুণা বিশ্বাস লিখেছেন, ‘বয়স যদি কম থাকত পিটাইতে পিটাইতে বাবা ডাক শিখাইতাম।’
আন্দোলনের পক্ষে ‘এক দফা’ শীর্ষক ছবি কাভারে পোস্ট করেছিলেন তরুণ অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। সেই পোস্টের স্ক্রিনশট ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে দিয়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
এই গ্রুপ থেকেই সরকারের পক্ষে শিল্পীদের নিয়ে বিটিভি ও এফডিসির সামনে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই গ্রুপে অ্যাডমিনদের পাশাপাশি আন্দোলনের বিরুদ্ধে রোকেয়া প্রাচী, পরিচালক মাসুদ পথিক ও ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করসহ আরও অনেকে সরব ছিলেন।