আদালতে ক্ষমা চেয়ে কাঁদলেন ব্যারিস্টার সুমন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : অক্টোবর ২৩, ২০২৪
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাকে কাঁদতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অন্য আইনজীবীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাও চান তিনি।
সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর এলাকার আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, “ব্যারিস্টার সুমন বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মিরপুর ও আদাবর থানায় দুটি হত্যা মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত মুখ ব্যারিস্টার সুমন। হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক এমপি। গ্রেপ্তারের আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দেন তিনি। পোস্টে সুমন লেখেন, “আমি পুলিশের সাথে যাচ্ছি। দেখা হবে আদালতে। দোয়া করবেন সবাই।”
মঙ্গলবার বিচারক তার জামিন নাকচ করে রিমান্ডের আদেশ দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার পর ব্যারিস্টার সুমন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ্য করে কথা বলতে চান। কিন্তু ফারুকী কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ সময় সুমন বলেন, “আপনার সঙ্গে আলাদা করে কিছু বলব না স্যার। আপনার মাধ্যমে সকল আইনজীবীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি খুব সরি স্যার।”
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সুমনকে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আনা হয়। এরপর দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে রিমান্ড শুনানির জন্য তাকে এজলাসে তোলা হয়। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করেন।
এজলাসে ঢোকার আগেই তাকে অশ্রুসিক্ত দেখা যায়। এজলাসে ওঠানোর পর উপস্থিত সমর্থকদের ইশারায় চুপ থাকতে বলেন তিনি। প্রায় ৩০ মিনিট শুনানি হয়। এ সময় কাঠগড়ায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। কোনো কথা বলেননি। শুনানির বিভিন্ন পর্যায়েও তার উদ্দেশে আইনজীবীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন কটু কথা বলা হয়। তবে তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে তাকে এজলাস থেকে বের করে ফের হাজতখানায় নেওয়া হয়। সুমনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল হামিদ। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন।
শুনানিতে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “তিনি (সুমন) একজন ব্যারিস্টার। ৫ আগস্টের পর দেখলাম তিনি লন্ডন থেকে কথা বলেছেন। জনগণকে বুঝিয়েছেন তিনি দেশে নেই, লন্ডন আছেন। শুরু থেকেই তিনি চতুরতা করে আসছেন। পরে দেখা গেল, তার বোনের বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “ব্যারিস্টার সুমন এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এমপি হয়েছেন। কোটা আন্দোলনের সময় হাইকোর্টে সংবাদ সম্মেলনে করে হাসিনার পক্ষ নিয়েছেন। তখন তিনি বলেছেন, পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে হাসিনাকে সরাতে পারে। স্বৈরাচারের পতনের পর তিনি বোনের বাসায় আত্মগোপন করেন। মিরপুরে হামলার কারিগর তিনি এবং তার পালিয়ে থাকার ঠিকানাও মিরপুর। এতেই বোঝা যায় তিনি এখানে জড়িত।”
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, “যে মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয়েছে সে মামলায় আসামির তালিকায় ব্যারিস্টার সুমনের নাম ছাড়া ‘আর কিছুই নেই’। এজাহারে সুনির্দিষ্ট কিছু নেই। তাকে জামিন দেওয়া হোক।”
মামলার তথ্য মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৯ জুলাই জুমার নামাজ আদায় করে মিরপুর-১০ নম্বরে সমাবেশে যান হৃদয়। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়; ককটেল নিক্ষেপ করে। এর পাশাপাশি গুলিও চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন হৃদয়। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুরের হাতিয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। এ ঘটনায় তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি ব্যারিস্টার সুমন।”
এদিকে গার্মেন্টস কর্মী মো. রুবেল হত্যার ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর থানায় ২২ আগস্ট রাতে নিহতের পিতা রফিকুল ইসলাম একটি মামলা করেন। মামলায় হাসিনাসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় ব্যারিস্টার সুমন রয়েছেন ২৯ নম্বরে। এ ছাড়া আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে ব্যারিস্টার সুমনসহ ৯৭ জনের নামে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানায় মামলা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।