আগরতলায় আড্ডা আর বই বিনিময় প্রসঙ্গ
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
বাইশে ডিসেম্বর সকালে আগরতলায় একটা আড্ডা ছিল সেখানকার বন্ধুদের সঙ্গে। মূলত সুভাষ সাহা আর সমীর ধর এসব আয়োজনের মূল হোতা। সুভাষদা আর সমীরদা দুজনেই চমৎকার মানুষ। বাইশ তারিখের আড্ডায় আগরতলা থেকে আরো যুক্ত হয়েছিলেন কার্তিক বণিক, লক্ষণ ঘটক, দেবানন্দ দাম এবং উত্তম সাহা। কার্তিক বণিক সাংস্কৃতিক ও শ্রমজীবী আন্দোলনের অগ্রণী কর্মী, ‘শিল্পতীর্থ’ নাট্যদলের কর্ণধর। তিনি নাট্যকার, নির্দেশক এবং অভিনেতা। লক্ষণ ঘটকও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রণী কর্মী, ‘নাট্যালোক’ দলের নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা এবং ‘অভিনয় ত্রিপুরা’ নাট্যপত্রের সম্পাদক। দেবানন্দ দাম লেখক, প্রকাশক, বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘বিজ্ঞান বিচিত্রার’ সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি ‘জ্ঞান বিচিত্রা বুক ওয়ার্ল্ড’ প্রকাশনা ও পুস্তক বিপণির কর্ণধর। উত্তম সাহা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী, নাট্যকার, অভিনেতা এবং নির্দেশক। সকাল দশটায় আড্ডা বসেছিল হোটেল ওয়েলকাম প্যালেস-এর কক্ষে, যেখানে আমি আগের দিন থেকে অবস্থান করছিলাম।
সামান্য চা চক্র আর আড্ডার প্রধান বিষয় ছিল, সাম্প্রতিক নানা রকম ঘটনাবলি নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ। ত্রিপুরা তথা ভারতসহ বিভিন্ন রাজ্যের সাংস্কৃতিক সংকট আর সকলের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষায় কী করণীয় ইত্যাদি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। বাংলাদেশে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা হঠাৎ কী করে রাজাকারের তালিকায় ছাপা হলো, তা নিয়ে জানতে চান একজন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা বিরাট অবদান রয়েছে। স্বভাবতই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন অনেকের মনে জাগা স্বাভাবিক। দুই হাজার ষোল সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মিলে যৌথভাবে ‘প্রতিবেশীকে জানো’ শীর্ষক যে সম্মেলনটি হয়েছিলো আর যার মূল দায়িত্বে ছিলাম আমি; সেটাকে ঘিরেই প্রতিবেশীদের মধ্যকার বন্ধন তৈরি ছিল আলোচনার লক্ষ্য। সেবার ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক শিক্ষক যোগ দিয়েছিলেন সম্মেলনে, সুভাষদা সমরদা সে সম্মেলনটি করতে আমাকে খুব সহযোগিতা করেছিলেন। সুভাষদা নিজেও প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে।
প্রতিবেশীকে জানো সম্মেলনে ভারতের অনেকগুলি রাজ্য থেকে একান্নজন প্রতিনিধি এসেছিলেন। সে রকম সম্মেলন আবার করা যায় কিনা সেটাও ছিল এই আড্ডার একটি উদ্দেশ্য। সেই প্রসঙ্গে দেবানন্দদা জানালেন, বাংলাদেশ আর ত্রিপুরার মধ্যে বইপত্র আদান প্রদানের সমস্যা রয়ে গেছে। বালাদেশ থেকে সরাসরি ত্রিপুরায় বই পাঠানো যায় না বা তারা চাইলে সরাসরি তা নিতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশের বইয়ের অনেক পাঠক রয়েছেন ত্রিপুরায়। বাংলাদেশের বই তারা সংগ্রহ করেন কলকাতা থেকে। দেবানন্দদার নিজের যে বই প্রকাশনা আর বিক্রির প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের বা বইয়ের আরো সব দোকানের বাংলাদেশের বই বিক্রির জন্য সংগ্রহ করতে কলকাতার শরনাপন্ন হতে হয়। নিজের সরাসরি আমদানি করতে পারে না বলে তাতে খরচ পড়ে যায় বেশি। সরাসরি বাংলাদেশ থেকে বই আগরতলায় নিয়ে যাবার আইনগত ব্যবস্থা নেই। ত্রিপুরার প্রকাশকরা যাতে তাদের বই নিয়ে বাংলাদেশের বইমেলায় অংশ নিতে পারেন বা বাংলাদেশের বইয়ের মেলা যাতে ত্রিপুরায় করা যায়, সে-সম্পর্কে দেবানন্দদা খুবই আগ্রহ দেখালেন।
যদিও আমি সামান্য লেখালেখি করি, তবে বইমেলার সঙ্গে যেহেতু একেবারেই যুক্ত নই, সেজন্য আমি খুব বেশি কিছু বলতে পারলাম না। দেবানন্দদার সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন প্রকাশকের নিয়মিত সম্পর্ক আছে, ফলে এ ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নেয়া যেতেই পারে। সেদিন দেবানন্দদাকে কথা দিয়েছি, আমার পরিচিত প্রকাশকদের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা নিয়ে অবশ্যই কথা বলবো। ‘বঙ্গবন্ধু বর্ষ’ হিসেবে এবারের ফেব্রুয়ারির বইমেলাটি যেহেতু একটি বিশেষ বইমেলা, সেখানে ত্রিপুরা নিজেদের বই নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারলে নিশ্চয় আমাদের তা অনেক উপকারে আসবে। বইমেলার সঙ্গে যারা নানাভাবে যুক্ত এবং প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত আছেন, যদি এই লেখাটি তাদের নজরে আসে, আমি আশা করবো তারাও এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়াবেন। বইমেলাতে অংশগ্রহণের ব্যাপারেই শুধু নয়, বালাদেশের পাঠকরা যাতে ত্রিপুরার প্রকাশিত বই সংগ্রহ করতে পারেন এবং একইভাবে ত্রিপুরার পাঠকরা যাতে বাংলাদেশে প্রকাশিত বইগুলি পাঠ করতে পারেন; সংশ্লিষ্ট সকলে তার ব্যবস্থা নেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।