আকন্দ শাওনের খুদে গল্প ‘লকডাউন পেট ডাউন’
প্রকাশিত : আগস্ট ০৭, ২০২১
এহনই আইসা পড়লা ক্যা? কাম পাও নাই?
না, বাজারের মোড়ে খাড়াইছিলাম একটু ,পুলিশ খাড়াইবার দেয় না। কি করমু আর, কুনো উপায় দেহি না।
হ, আল্লাহ কী যে বিপদে ফালাইছে, চিন্তায় মাতা কাম করে না! আম্মার মাজা ব্যথা। দুই দিন ধইরা গরম পানি কইরা কইরা শ্যাক দিতাছি। কইলো, বউ, ওষুধ খাইলে মনে হয় ব্যথাডা কমতো। কইলাম আব্দুল্লাহর বাপে আহুক কামে থিকা, তারপর সন্ধ্যাবেলা বাজার থিকা আনবোনি।
জাহাঙ্গীরের বউ ডাটা কাটছে আর কথা বলছে, কাম তো পাইলাম না, পাইলাম নাকি, কামে তো যাবারই দিতাছে না, দোকান পাড়ে দেহি হায়দার, রহিম ভাই, ওরা নাকি কামে গেছিল। পুলিশ যাইয়া কাম বন্ধ কইরা দিছে। মালিকরে খুব অপমান করছে। রহিম ভাইগো কইছে তোমার গরিব মানুষ, তোমগো ঘরে খাবার পৌঁছাই দেওয়া হবো। বাইরে বাহির হওনের দরকার নাই।
জাহাঙ্গীরের বউ এবার ক্ষেপে যায়, তার গলা চড়া হয়, হ ঘরে খাবার না ঘোড়ার ডিম দিব, এই যে একটা বছর ধইরা করোনা, লক ডাউন থাকে, ঠিক মনত কাজ কাম করবার পারো না, মাঝে মইধ্যে একবেলা না খাইয়া থাকন লাগে, কই কোন হালার পুতে তো কোন সাহায্য করলো না।
মেম্বার তো চোর। সাহায্য অনুদান যা আহে সব ও আর চেয়ারম্যান চুরি করে। হুনো নাই? চেয়ারম্যানে গতবার এক মুক্তিযোদ্বার কাছে চান্দা চাইছিল বিশ হাজার। কথাগুলো একদমে শেষ করে জাহাঙ্গীর। তার বউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে, গেল ঈদেরও পোলাডারে জামা কিনা দিবার পারি নাই। এই বার তো আরো বেহাল দশা। জামা কিনবার গেলে মাংস কিনবার পারি না। মাংস কিনলে জামা কিনবার পারি না।
কি করমু কও দেহি! কামের তো চেষ্টা করতাছি। সবই তো বন্ধ। পুলিশ তো কামে যাবার দেয় না। আম্মার ওষুধটাও যোগার করবার পারতাছি না। আমগো যে অবস্থা তাতে আম্মার একটা বয়স্ক ভাতা পাওয়া কতা। ভাতাডা পাইলে খুব উপকার হইতো। সালার ওই মেম্বার ওর শ্বাশুড়ির জন্যে বয়স্ক ভাতা আনে। ওর শ্বাশুড়ির তো দুই পোলা ভালা ভালা চাকরি করে। তার কিয়ের ভাতা লাগে!
আমগো কপালে ভাতা মাতা নাই। লকডাউনের মইধ্যে তো তোমার কামাই নাই, ঘরে একটা কাচা বাজার নাই। বাড়ির আশপাশে কচু গেচু যা আছিল সব তো খাইলাম সাতদিন। ঘরে চাইল যা আছিলো তাও প্রায় শেষ। কামে গেলা না। টেহাও নাই যে বাজার করমু। কালইকা শাকিল পুকুর থিকা গুরা মাছ ধরছিল, তাই কাইটা দিছিলাম। তাই ওর মায় চাড্ডি মাছ দিছাল। তুমি যাওনের পর রাকিবের মার কাছ থিকা কয়ডা ডেঙ্গা চাইয়া আনলাম। এহন রানধিমু। দুপুরে আর রাইতে খামু। ঘরে আর কিচ্ছু নাই। সকালে যে কি খামু আল্লাহ জানে।