আইনুদ্দীন আল আজাদ

আইনুদ্দীন আল আজাদ

আইনুদ্দীন আল আজাদের পাঁচটি ইসলামি গান

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৩, ২০২০

এক.
তোমাদের তরে আমার একটি অনুনয়
বাতিলের প্রাসাদ যেন উঁচু নাহি রয়
তাগুদের প্রাসাদ যেন উঁচু নাহি রয়।

আমি চলে যাব হয়তো আগেই বিজয়ের পাব না কো স্বাদ
ক্লান্ত দুটি চোখ দিয়ে দেখব তোমাদের জিহাদ।
সেই জিহাদে বীরের বেশে ছিনিয়ে আনিবে বিজয়।।

জালিমের কারাগারে যদিও থাকি থাকিবে না কণ্ঠ আমার
তোমরা শুধুই থাকবে অটল রাজপধ কোরে অধিকার।
তোমাদেরই বিজয় দেখে শান্তি পাবে এ হৃদয়।।

দুই.
মাওলার এশকে জ্বলে আগুন নেভাইলে যে নেভে না
পুড়ে পুড়ে ছাই হইলো এ যে পাগলের সিনা।

ধরা দিয়েও দাও না ধরা
কাছে থেকেও দাও না সাড়া
আমার এই বুকেতে বইছে খরা না পাওয়ারই যাতনা।।

তোমার এশকের এমন জ্বালা
না যায় সওয়া না যায় বলা
আমার হইল মরার পালা আর সে সইতে পারি না।।

মাওলা তোমায় ভালোবেসে
কলিজা পুড়ে গন্ধ আসে
আমি তোমার নূরে যাব মিশে দূরে ঠেলে দিও না।।

তিন.
যেতে হবে খালি হাতে সঙ্গে কিছুই যাবে না
সাড়ে তিন হাত জায়গা পাবি, পাবি না রে বিছানা।

আজকে তুমি যাদের লাগি শুধুই পাগলপারা
যেতে হবে একা একা কেউ যাবে না তারা।
ছাড়তে হবে মায়ার বন্ধন সাধের বালাখানা।।

তিন দিনের এই বাহাদুরি শুধুই বালুর বাঁধ
ফুরিয়ে গেলে বাসাতটুকু মিটবে রে তোর সাধ
ক্ষমতার ওই দাপট দিয়ে টিকে থাকা যাবে না।।

ছয় বেহালার পালকি যেদিন আসবে রে তোর দ্বারে
বন্ধুবান্ধন আপন যারা কাঁদবে জারে জারে।
নতুন দেশের যাত্রী হতে সাজবে নতুন সাজনা।।

খোদার দেয়া জীবন যৌবন আজকে পুঁজি করে
ভুলে গিয়ে সেই খোদাকে চলছ দম্ভ ভরে
চূর্ণ হবে দম্ভ সবই সেদিন যে আর দূরে নয়।

দুনিয়ারই মোহে পড়ে ভুলে গেছে সবই
কোথায় লইবি বালাখানা বাড়ি কোথায় নিবি?
তিনটা টুকরো সাদা কাপড় এই তো হবে পাওনা।।

চার.
জ্বলছে আগুন এ বুকজুড়ে মাশুক পাইবারও আশায়
আশেক হয়ে হাত পেতেছি তোমারই দরজায়।

তোমার প্রেমে জ্বলছে আগুন
মুর্শিদকে দেখলে জ্বলে দ্বিগুণ
সে আগুন ছাই হইলাম যাইয়া চরমোনায়।।

অগ্রহায়ণ আর ফাগুন এলে চাপা আগুন ওঠে জ্বলে
সেই আগুন থামাতে লাগে জিকির সর্বদায়।
তিন দিনের এই বয়ানকালে কত চোখের পানি ঝরে
চোখের জলে কারো নয়ন সাগর হয়ে যায়।।

এত চোখের পানি দেখে মাশুক তুমি নাও না ডেকে
অধীর হয়ে চেয়ে আছি কবে ডাকিব আমায়।।

পাঁচ.
আমার জীবন আমার মরণ আমার জিন্দেগি
ইয়া ইলাহি কবুল করো আমার বন্দেগি।

আমি যে প্রভু অতি অসহায় নিরাশ্রয় দুর্বল
তুমি শুধুই পারো দিতে শক্তি ও সম্বল।
তাই দয়াময় করো আমায় দিনের অনুরাগী।।

তুমি কারো হাত কভু ফিরাও না যে যখন হাত তুলেছে
তুমি তাকেও ভোলো না কভু যে তোমাকে ভুলেছে।
তাই দয়াময় দাও গো বক্ষে দ্বীনের অনুভূতি।

তুমি ছাড়া আমার জীবন সর্বদা অচল
তোমার মদদ থাকলে পাশে আমি যে সবল।
আমায় প্রভু করো তোমার রহমতের ভাগী।।

গীতিকবি পরিচিতি: ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহের হাজরাতলা গ্রামে আইনুদ্দীন আল আজাদের জন্ম। গ্রামের মকতবে তার পড়ালেখা শুরু হয়। এরপর স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং পরে ঝিনাইদহ শহরের কাস্টসাগরা দাখিল মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। আলিম ও ফাজিল সমাপ্ত করেন ছারছীনা মাদরাসায়। এরপর ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল পাশ করেন। সবশেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা-সাহিত্যে অনার্স করেন।

আজাদের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন চরমোনাইর পির সৈয়দ ফজলুল করীম। তার অনুপ্রেরণায় আজাদ ইসলামি রাজনীতিতে যুক্ত হন। দেশজুড়ে অপসংস্কৃতি ও যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে তিনি ইসলামি গান লিখে, সুর বসিয়ে তা নিজ কণ্ঠে গেয়ে প্রচার করতে শুরু করেন। এসব গান শুনে অল্প সময়েই দেশ-বিদেশে তার অসংখ্য ভক্ত তৈরি হয়ে যায়। তৃণমূল পর্যায়ে সুস্থ সাংস্কৃতির ভিত গড়ে তুলতে ২০০৪ সালের ২৮ মে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কলরব’, যাতে সারা দেশের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।

২২টি ইসলামি গানের অ্যালব্যাম প্রকাশিত হয়েছে আজাদের। এসব অ্যালবামের গ্রাফিক্স, ডিজাইন ও প্রচ্ছদ তিনিই করতেন। নামাজের বিষয়ে আইনুদ্দীন আল আজাদ বিশেষ যত্নবান ছিলেন। সফরে তাকে অনেক সময় কাটাতে হতো। তা সত্ত্বেও নামাজের ব্যাপারে তিনি যত্নবান থাকতেন। তিনি ছিলেন সদাহাস্যময়। অপরিচিতকে আপন করে নিতে তার বিলম্ব হতো না। ২০১০ সালের ১৮ জুন নাটোরের লালপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।