
আ. লীগ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ফাঁস করলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : মার্চ ২১, ২০২৫
ভারতের পরিকল্পনায় সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন চৌধুরী ও ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকের পোস্টে তিনি এ কথা জানান।
১১ মার্চ তিনিসহ দুজনকে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে এক গোপন তথ্য তুলে ধরেছেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, “আমিসহ দুজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায়। আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এ প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়, এরই মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে।”
তিনি আরও লেখেন, “একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনারা দেখবেন, দুইদিন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছেন। আমাদের আরও বলা হয়, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।”
হাসনাত লেখেন, “আমাদের এ প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তাৎক্ষণিক বিরোধিতা করি এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করার কথা জানাই। উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।”
তিনি আরও লেখেন, “আলোচনার একপর্যায় বলি, যে দল এখনো ক্ষমা চায়নি, অপরাধ স্বীকার করেনি, সে দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দেবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। (তোমরা কিছুই জানো না। তোমাদের প্রজ্ঞা আর অভিজ্ঞতার অভাব আছে। আমরা এখানে ৪০ বছর ধরে আছি।) তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে না।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, “এর উত্তরে বলি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। পরে মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়। জুলাই আন্দোলনের সময়ও আমাদের দিয়ে অনেক কিছু করানোর চেষ্টা করা হয়েছে।”
তিনি আরও লেখেন, “কখনো এজেন্সি কখনো বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে চাপ দেওয়া হয়েছে। আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের ওপর আস্থা রেখেছি। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি। আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের ওপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না।”
হাসনাত লেখেন, “নানামুখি প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নেই। জুলাইয়ের দিনগুলোতে জনগণের স্রোতে ক্যান্টনমেন্ট আর এজেন্সির সব প্রেসক্রিপশন আমরা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আজ আবারও যদি আপনাদের সমর্থন পাই, রাজপথে আপনাদের পাশে পাই, তবে আবারও এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারব।”
তিনি আরও লেখেন, “আসুন, সব যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহিদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দেব না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনো সুযোগ নেই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।”