অমিতাভ পাল

অমিতাভ পাল

অমিতাভ পালের পাঁচটি কবিতা

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১০, ২০২০

ঢাকা জেনারেশন
এ ট্রিবিউট টু এইটিজ

আমরা ছিলাম মাতাল প্রতিভাবান
আমরা ছিলাম পাখি
সারাদিন খুঁটে খুঁটে অভিজ্ঞতা খেয়ে বাঁচতাম
আমাদের কোনো বাসা ছিল না
গাছের ডালই ভরসা
বন্ধুরা আমাদের ভালোবাসতো
মেয়েরা ভয় পেত
আর বাপ-মা ভুগতো দুঃশ্চিন্তায়
তবে আমাদের কোনো পরোয়া ছিল না
কেননা আমরা জানতাম আমরা জীবনের পিঠে সওয়ার

আমরা ছিলাম মাতাল প্রতিভাবান
আর জীবন ছিল আমাদের পোষমানা ঘোড়া
আমাদের পথ ছিল মানচিত্রহীন

ওম

শীতঋতু নেমে গেছে
সকালে সন্ধ্যায় কাঁপছে আমাদের শহরটা
গায়ে জড়াচ্ছে কুয়াশার চাদর
গরম কাপড় বিক্রির ভ্যানটার পাশে
গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে একটা কুকুর
মানবজাতির ওম নিতে
কুকুরটার কেউ নাই
সংসার সন্তান-মা— সব মিশে গেছে বাকি কুকুরদের মধ্যে
এখন যেকোনো কুকুর তার আত্মীয়
যেকোনো মানুষ তার বন্ধু

শীতঋতু নেমে গেছে
আর আমরা মানুষজন বন্ধুহীন— কাঁপছি

আজ শুক্রবার

আজ শুক্রবার
আজ রাস্তাগুলির ডেঅফ
সারা সপ্তাহ পিঠের ওপর অপরিসীম ভার
বইতে বইতে ক্লান্ত রাস্তাগুলি
আজ চিৎ হয়ে শুয়ে শরীরে মাখবে রোদ
খেলবে ছায়া আর বাতাসের সাথে

আজ শুক্রবার
আজ সুডোকু মাংস ঘুম

শহরের কংক্রিটের বাইরে

শহরের কংক্রিটের বাইরে
মাটির তৈরি গ্রামে গেলাম
দৈনন্দিতার বাইরে কোথাও যেতে
সেখানে দেখলাম ঘরের মেঝের মাটি
শক্ত হয়ে গেছে টাইলের মতো
টিনের চাল সিমেন্টের ছাদের মতোই নিস্পৃহ
আর প্রকৃতি টবে লাগানো গাছের ইলাবরেশন
খাবার টাবার যাকিছু খেলাম—
সব কোম্পানির প্যাকেটে লেখা বচনসমূহের নির্দেশ মানছে
পুকুর বেসিনের মতো
বাতাস ফ্যানের মতোই কোনো এক ঘূর্ণনের কারণে সচল

শহরের কংক্রিটের বাইরে
মাটির তৈরি গ্রামে গেলাম
এবং গিয়ে দেখলাম, কোথাও যাইনি

বাচ্চা

বাচ্চা ছেলেটার হাত ধরে হাঁটছে তার মা
মেয়েটার চেহারা শরীর— সব কেড়ে নিয়েছে দারিদ্র
এখন কোনো পুরুষ আর তার দিকে তাকাবে না লোলুপ চোখে
কোনো হৃদয় উথলে উঠবে না প্রেমে
অথচ তার ছেলেটাকে দেখুন—
মার হাত ধরে সে নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভিড় চিরে
আশপাশের সুন্দরীরা তার মনযোগ কাড়তে পারছে না একটুও
যেন রাস্তাটা রেড কার্পেট আর সে হাঁটছে
এক শ্রেষ্ঠ রূপসীর হাত ধরে

রাস্তার পাশে একটা ঘেঁয়ো কুকুরের শরীর ঘেঁষে
নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে তার বাচ্চাগুলি