অলঙ্করণ: দীপাঞ্জন সরকার
অপেক্ষা
তমিস্রা তিথিপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
মুখে আঙুল দিয়ে সেই সকাল থেকে মেঘলা বমি করছে।
বমি করতে তার আরাম লাগে। তার ইটিং ফোবিয়া আছে। কিছু খাওয়ার পর সে মারাত্মক অপরাধবোধে ভোগে। তার মনে হয়, যতক্ষণ না বমি হয়, সে শান্তি পাবে না।
মেঘলার আরও কিছু ফোবিয়া আছে। যেমন, ক্লাস্টো ফোবিয়া। বন্ধ ঘরে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাই কখনোই সে লিফটে ওঠে না। মেঘলা একা একা রাস্তা পার হতে পারে না। রাস্তার মাঝামাঝি এলে তার মাথা পুরা ফাঁকা হয়ে যায়। প্রায়ই রাস্তা পার হওয়ার সময় সে জট পাকিয়ে দ্যায়। এত এত সমস্যা নিয়েও মেঘলা ভালো আছে। মেঘলার কোনও বন্ধু-বান্ধবী নেই। এমনকি, সারা শহরে তার একজন প্রেমিকও নেই। অথচ সে দেখতে যথেষ্ট সুন্দর। অনেকেই তার দিকে তাকায়। মেঘলার যদিও অসহ্য লাগে। ইচ্ছে করে, সে হাঁটবে সবার আড়াল দিয়ে। তাহলে তো আর কেউ তাকে দেখতে পাবে না। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।
মেঘলার একজন বিশেষ মানুষ আছে, যার সাথে মেঘলা রাত জেগে অনেক কথা বলে। বেশিরভাগই অর্থহীন কথাবার্তা! মেঘলার কখনোই তার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করে না। কারণ, দেখা করলে যদি আর ভালো না লাগে! ভালো লাগাটা মেঘলার জন্য খুব জরুরি।
ভালো লাগার জন্য তাকে অনেক কিছু করতে হয়। যেমন মাঝে মাঝে সে ফার্মেসি থেকে ডিসপোজেবল সিরিন্জ কিনে আনে। সিরিন্জ দিয়ে সে তার নিজের রক্ত বের করে ফেলে দ্যায়। নিজেকে কষ্ট দিতে তার ভালো লাগে।
আজ মেঘলার সাথে সেই ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা মানুষটার দেখা হলো। আাশ্চর্য, তার ভালো লাগছে! তারা এক ঘণ্টা তেত্রিশ মিনিট একসাথে ঘুরেছে। একবারও তার বিরক্ত লাগেনি! লোকটা তাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলো। মেঘলা যখন রিকশা থেকে পেছন ফিরে তাকালো, লোকটা তখন মনে মনে চাইছে সে ফিরে তাকাক। কিন্তু সে চলে যাচ্ছে, এই যাওয়াটা তার ভালো লাগছে না! ভয়ংকর লাগছে। তার মানে এই মানুষটাকে আকাশের বুকের নির্বিকার পাখির মতো মুছে ফেলতে হবে!
শমিক প্রায় লাখ খানিক ফোন করলো, টেক্সট করলো নো রিপ্লাই, মেঘলা মেয়েটার কী হয়েছে? সে কোনও রেসপন্স করছে না কেন? এতদিন তারা এত কথা বললো, সব অনর্থক হয়ে গেল!
সে কি দেখতে এতেই পচা! আয়নায় ঘুরেফিরে নিজেকে দ্যাখে। কিন্তু ঘটনা কি? কেন মেঘলা তার সাথে কথা বলে না, ইগনোর করে, এর কোনও কারণ সে খুঁজে পায় না। একা একা হাঁটে, টংয়ে চা খায়, কিন্তু তার ভেতর কে যেন একজনের জন্যে অপেক্ষায় থাকে।