অপূর্ব চৌধুরীর কলাম ‘সেক্স মিথ: নারী বনাম পুরুষ’
প্রকাশিত : মার্চ ২৪, ২০২১
আমাদের সমাজে সেক্স একটি ট্যাবু। সেক্স মানে ভাবা হয় অশ্লীল কিছু। আর তাই সেক্স নিয়ে আছে অসংখ্য মিথ। মিথগুলোর বিস্তারিত লিখবো না, কিছু মিথ নিয়ে লিখবো। একটি মিথের বিপরীতে বিজ্ঞান ও গবেষণাভিত্তিক আসলটি জানাবো।
এক. সমাজে চালু রয়েছে— সব পুরুষ তো পুরুষই, কারণ তার সেক্স ডিজায়ার বেশি। নারীর সেক্স ডিজায়ার কম। কিন্তু এটি ভুল। পুরুষের তুলনায় নারীর সেক্স ডিজায়ার অনেক বেশি। কারণ পুরুষের শরীরে সেনসুয়াল পার্ট নারীর চারভাগের এক ভাগ মাত্র। পুরুষের সেক্স ডিজায়ারটি প্রকাশ পেয়ে যায় বলে বেশি মনে হয়। নারীর ডিজায়ার চার গুণ বেশি হওয়ার পরেও নারী সেগুলো লুকিয়ে রাখে বলে কম মনে হয়।
দুই. পুরুষ শরীর দিয়ে সেক্স এনজয় করে, নারী মাথা দিয়ে সেক্স উপভোগ করে। সেক্সের ক্ষেত্রে পুরুষ তার মাথাকে বেশিক্ষণ ব্যবহার করতে পারে না। নারী মাথা দিয়ে গোটা সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটির একটি এপিসোড বানিয়ে ফেলতে পারে।
তিন. মিথ আছে যে, পুরুষ সেক্সের ক্ষেত্রে প্রতারণা করে, নারী সেক্সের ক্ষেত্রে সবসময় লয়াল। এটি ভুল। পুরুষ প্রেমের ক্ষেত্রে মিথ্যা অভিনয় করে প্রতারণা করে, নারী সেক্সের ক্ষেত্রে প্রতারণা করে বেশি।
চার. লোকের ধারণা, মেয়েরা ছেলেদের সাথে কানেক্ট করতে না পারলে সেক্স উপভোগ করে না। কিন্তু গবেষণা ও পরীক্ষায় দেখা গেছে, উল্টো। ছেলেরা যখন কোনো মেয়ের সাথে ইন্টিমেট হয়, তখন লয়াল থাকে, মেয়েটির কাছে প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে, কেয়ারিং ভেলু করে, তাতে ছেলেটির সেক্স ইন্টিমেসি বেড়ে যায়। কিন্তু যে সম্পর্কের মধ্যে ইন্টিমেসি যত কম থাকে, মেয়েরা তত বেশি সেক্স এনজয় করে। ইন্টিমেসি মেয়েদের সেক্স ড্রাইভ কমিয়ে দেয়, মেন্টালি ডিপেন্ডেন্ট পার্টনারকে মেয়েটি কেয়ার করে, কিন্তু শরীরে তার জন্যে সেক্স ডিজায়ার ফিল করে না। কিন্তু সম্পর্ক ধরে রাখতে তারা ঠিক তার উল্টোটি করে এবং দেখায়। তখন সে সেক্স করে কেবল, সেক্স উপভোগ করে না। তাই বলা হয়, মেয়েরা সবচেয়ে বেশি এনজয় করে No-strings Sex।
চার. ছেলেরা পর্ন বেশি দেখে। কারণ ছেলেরা ভিজুয়ালি স্টিমুলেটেড হয় বেশি। মেয়েরা কল্পনা করেই স্টিমুলেটেড হয়ে যায় আরও বেশি। এজন্যে বলা হয়, ছেলেরা পর্ন দেখে, মেয়েরা মাথা দিয়ে পর্ন বানায়।
পাঁচ. মেয়েরা যৌন উপভোগের সময় চিৎকার করলে ছেলেরা খুশি হয় এবং নিজের পুরুষত্বে বীরত্ব অনুভব করে এই ভেবে যে, সে তার পার্টনারকে আনন্দ দিতে পারছে। এজন্যে অনেক মেয়েরা পুরুষকে খুশি করতে ফেইক সাউন্ড করে অনেক সময়। মেয়েদের অর্গাজম দেখলে পুরুষের সেক্স ডিজায়ার বেড়ে যায়। মেয়েরা চায় ছেলেটি উপভোগের সময় যত বেশি ডার্টি হতে পারে। এটি দেখলে মেয়েটির চাহিদা আরো বেড়ে যায়।
ছয়. সমাজে কমন মিথ যে, ছেলেরা সেক্সের ক্ষেত্রে পলিগামী বা অনেক পার্টনারের সাথে যায়। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা হয়, মেয়েরা যৌনতায় মনোগামী বা একজনের সাথেই লয়াল থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে এটি ভুল। ছেলেরা যখন সত্যিকার ভালোবাসে এবং ইন্টিমেট হয়, তারা মনোগ্যামি হয় বেশি। কিন্তু মেয়েরা সেক্সের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি। ছেলেদেরকে যৌনতার ক্ষেত্রে যতটা চিটার বলা হয়, ছেলেরা চিটার নয়। বরং মেয়েরা অনেক বেশি চিট করে সেক্সের ক্ষেত্রে। কিন্তু সমাজে তাহলে এমন মিথ হলো কেন? কারণ হলো, ছেলেদের সেক্স এক্সপ্লোরেশনটি খুব একটা চাপা থাকে না, ছেলেরা চেপে রাখতে পারে না, বেরিয়ে আসে ব্যাপারটি। কিন্তু মেয়েদের সেক্স এপ্লোরেশনের সিংহভাগ গোপনে হয়, গোপন রাখে এবং গোপনে করে বেশি। যে কারণে ঠিক তার বিপরীত চিত্র সমাজে স্টাব্লিস্ট হয়ে যায়। পুরুষ সেক্স এক্সপ্লোরেশনে অন্য নারীর কাছে যায় শরীরের কারণে নয়, বরং যার সাথে সেক্স করছে তার কাছ থেকে অথবা তার সাথে ইন্টিমেট কানেকশনটি তৈরি হয় না বা করতে পারে না বলে সে ঘরের বাহিরে নিজের সে সেটিসফেকশন খোঁজে। কিন্তু নারীর সেক্স সেটিসফেকশন আসে যত কম ইন্টিমেসি এবং যত বেশি বৈচিত্র্য যেখানে সে পায়। সেটার আয়োজন এবং প্রয়োজনে নারীকে গোপনে কাজটি করতে হয়।
সাত. সমাজে প্রচলিত যে, পুরুষ সেক্সের ক্ষেত্রে প্রতারক, নারী ভালোবাসার ক্ষেত্রে প্রতারণা করে। বরং আসলটি তার উল্টো। পুরুষ সেক্সের ক্ষেত্রে প্রতারক নয়, এক্সপোসড। নারী সেক্সের ক্ষেত্রে প্রতারণা করে, কারণ ওটা হাইড। পুরুষ ভালোবাসলে উম্মাদের মতো ভালোবাসে। তাই দেখা যায়, ভালোবাসার ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হলে পুরুষ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সমাজে মজনু পাগল বেশি, লাইলী পাগলী দেখা যায় না। কারণ ভালোবাসায় নারী সবসময় আধাআধি। এজন্যে ধাক্কা খেলেও একসময়ে ফিরে আসতে পারে।
আট. ভালোবাসায় মেয়েরা সেক্স সেটিসফেকশন বেশি খুঁজে, কিন্তু সেটা আড়ালে রাখে। ছেলেরা সেক্স এনজয় করতে ভালোবাসায় তেমন গভীরে না গিয়েও সেটিসফাইড হতে পারে। এজন্যে পুরুষ পতিতালয় গিয়েই যৌনতা উপভোগ করতে পারে। পুরুষ ভালোবাসার মধ্যে সেক্সের চেয়ে কানেকশন, ইন্টিমেসি, শেল্টার এবং সাপোর্ট খুঁজে।
কেউ কেউকে ভুল বুঝাবুঝির চেয়ে নারী ও পুরুষ দুজনেই তাদের যৌন উপভোগে প্রকৃত কতটা স্বাধীন, সেটা বুঝাতেই কথাগুলো বলা। এখানে কেউ চিটার নয়, কেউ সাধুও নয়। প্রত্যেকেই যার যার।