অপু ইব্রাহীম

অপু ইব্রাহীম

অপু ইব্রাহীমের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : মে ১১, ২০২২

পাথরের একটাই ব্যাধি

পাথরের একটাই ব্যাধি— দুরারোগ্য ক্ষয়রোগ!
ক্ষয়ে ক্ষয়ে তলদেশ ভারি করে জলের আবেগে,
ভূমি বাড়ায়; খনিজ আশীর্বাদে পুষ্ট হয় বিশ্ব চরাচর।

স্বভাবের নাটকীয় মোড়ে—
মাঝে মাঝে ভেঙেচুরে যায় অপঘাতে, অনিচ্ছায়।
রোগ আর অসুস্থতা এক নয় ধরে নিলে তবে বোঝা যায়
পাথরের একটাই ব্যাধি আছে মৌলিক; নীরব ক্ষয়রোগ।

আমরা কেবলই আততায়ী হয়ে পড়ি।
আয়ুরেখা ধরে—
অবিরাম আত্মীয়তা গড়ি আর বিভেদ বাড়াই।
এই বিশাল পাথুরে ধ্যানে—
আমাদেরও কেবল একটাই ব্যাধি; সচেতন ক্ষয়রোগ!

অলৌকিক চর্চা

রমজান এলেই মা কুরআন খতমে বসেন
নিরিবিলি ঢেউয়ের মতো ছোট গুল্মের মতো
ক্রমশ পড়েন দুলে দুলে
সমস্ত সংসারে উড়ে বেড়ায় একটি বশীভূত সুর—
প্রজাপতির পাখার মতো
মেঘে ধোয়া বাতাসের মতো
অথচ কখনো মাকে গাইতে শুনিনি
যেহেতু বাবাকে আমি কোথাও দেখিনি।

তবু অপার্থিব ভ্রমণে মাদূরে ভেসে যেতে যেতে
সুর ধরে ঢুলে ঢুলে নিজ বরাদ্দ খরচ করে
আয়ু বাড়িয়ে চলেন সংসারের; আর—
এক অনড় বিশ্বাসে ফুঁ দেন আমাকে
বালাইমুক্ত রাখেন, জিইয়ে রাখেন,
যেন পৃথিবীটা চিরায়ত রূপকথা;
কী অসহ্য মায়াবতী হয়ে ওঠে জীবন তখন!

মানুষ মুলত উদ্দেশ্যবিহীন, খুব জাগতিক;
তবু প্রার্থনার কাছে গেলেই— সহসা অলৌকিক হয়ে যায়।

প্রথম যখন

প্রথম যখন পড়েছিলাম প্রেমে, মনে আছে—
মুখোমুখি হলে কাঙ্ক্ষিত মুখের
সহসা বুকের মধ্য দিয়ে
উড়ে যেত নদীর মতো একটি ট্রেন,
ঝাঁকে ঝাঁকে অলৌকিক পাখির দল
ঝাঁপিয়ে পড়তো ঝপাঝপ
ট্রেন থেকে উড়ন্ত নদীতে;
জানি না, সেসব দাপাদাপি ধরা পড়ে যেত কিনা!

পাখিদের দলনেতা, সে সফল প্রেমিক; ভিড় থেকে
গলা উঁচিয়ে শেখাতো প্রেমের প্রথম পাঠ—
পাঠশালার মতো পবিত্র থাকো
যথাযথ থাকো দাঁড়ি-কমার মতো!

প্রেমে মুখস্তবিদ্যা হয় না;
কানের ভেতর বাতাসের শোঁ-শোঁ শব্দ নিয়ে
আমি কেবল তাকিয়ে থাকতাম বিস্ময় চিহ্নের মতো