অপু ইব্রাহীম
অপু ইব্রাহীমের ৩ কবিতা
প্রকাশিত : এপ্রিল ১০, ২০২২
পৃথিবীর পথে— প্রাকৃতিক সেতু
উন্মুক্ত হাওয়ার মতো সারাদিন পৃথিবীতে ঘুরে
সংসারের সারমর্ম নিয়ে আসতেন বাবা, আর
ছোট ঘরে খড় পাতা আগুনের ফুলে
মা পাঁজর খুলে সন্ধ্যা-সকাল তর্জমা জপতেন সে সবের।
সংসারের আয়ু বৃদ্ধি ছিল উনাদের একমাত্র ইবাদত।
পৃথিবীর পথে বাবা-মা প্রাকৃতিক সেতুর মতো
আর সেতু পেরিয়ে ক্রমশ বেড়ে উঠি সন্তানেরা—
চরাচরের মায়ায়: দুধে-প্রেমে আর হলাহলে।
প্রায়শই বলতেন বাবা,
জীবনে মানুষ হতে হবে;
অথচ জীবন আমাকে মানুষ থেকে দূরে থাকতে বলছে!
এখন এই জনশূন্য হৃদয় নিয়ে
কোথায় দাঁড়াব, কার কাছে নত হবো?
মায়ের চাহিদা অল্প ছিল খুব। প্লেটে
ঝরঝরে জ্যোৎস্না বেড়ে দিয়ে বলতেন,
বেঁচে থাকলেই হবে শুধু;
জীবন সহসা ঘন হয়ে যেত দুধে আর ভাতে।
মরে যাবার আগে কিছুদিন তাই ক্রমশ বেঁচে রই।
দুজনে এখন মৃত্তিকা শয্যায় ফুলের আবাদি
চুপচাপ শুয়ে থাকেন প্রাকৃতিক বাগানের মতো;
সংসারে মানুষ ছেড়ে তারা প্রজাপতি এনেছেন!
লৌকিক
মাকড়সা ফেঁসে গ্যালে শেষে নিজের শিল্পিত জালে
পাখিদের শিকার কি কিছু সহজ হয় আকালে?
ভালোবেসে অবশেষে চিনেছি জোনাকের নিরিবিলি সময়
কতটুকু হেরে গেলে মনে হয় এ জীবন অলৌকিক নয়?
আকাশের ভাও বুঝে জীবিকার জলে মাঝিরা নাও ভাসায়
অথচ নদীমাতৃক জীবনে মাছেরা ভরা আষাঢ়ই চায়,
কামনা প্রগাঢ় হলে তবে শেষটায়
কারো কারো প্রতীক্ষায় একটি সামুদ্রিক জীবন কেটে যায়।
জেনেছি তুমুল ঝড়ে নিরীহ পাতারাও পিঠ দেখায়। তাই—
মাঝে মাঝে পাগলের মতন সাধ করে হেরে গিয়ে নির্জন হয়ে যাই
আর সকালের দাঁড়কাক ভালোবেসে অন্ধের রাত্রি পোহাই।
ডাকবাকসে সংসারের ব্যস্ত আনাগোনা চড়ুইয়ের বাসায়
ব্যথার কথারা তাই জলজ ঘূর্ণির মতন এদিক ওদিক হারায়;
অতঃপর চায়ের কাপে বৃষ্টি চুমুক দিয়ে ফিরে চলি ঠিকানাবিহীন।
পাতা আর প্রেমের মতন হৃদয়েরা ঠিকই শুকিয়ে যায় একদিন।
যে কেউই জানি
যে কারো নামাজ শেষের অবধারিত প্রার্থনায়
একজন তুমি এসে পড়ে, প্রশ্ন অথবা প্রাপ্তির তীব্রতায়;
যে কেউ জানি— ইশ্বরেরা পরলোকে বাস করেন।
আমাদের প্রত্যেকে একেকজন মাতাল প্রেমিক:
যে কেউই জানি—
মদের ভেতর মাতলামি মিশে থাকে
আর প্রেমের ভেতর প্রথম ভাঙচুর;
যে কেউই জানি— ভেতরে ভেতরে
পুরুষেরা খোঁজে নারীর মতো মানুষ কোনো
আর মানুষেরা সাবলীল সংসার।
সবাই সবকিছুই জানি প্রায়,
জানে না কেবল পৃথিবীর প্রাক্তনেরা—
সূর্যের তলায় থেকে সূর্যমুখী হতে চাওয়া ঘাড়টার
নতমুখে হেঁটে ফেরার যন্ত্রণা।
ইশ্বর কিংবা প্রাক্তন: জানি না কে কার ছদ্মনামে দূরে দূরে থাকে।