কথাসাহিত্যিক আবু রুশদের সাথে গপসপ

পশ্চিমবাংলার কথাসাহিত্য অনেক বছর পড়া হয় না। এখন কারা কি লিখছেন ওখানে জানি না। তবে সিনেমা দেখি। যখন যেটা ইউটিউবে নতুন আসে, দেখে ফেলি। বাংলাদেশের চেয়ে সিনেমায় পশ্চিমবঙ্গ বহুগুণ এগিয়ে। সবদিক থেকে। আর এগিয়ে ননফিকশনে। তাদের ননফিকশন প্রয়োজনের খাতিরেই পড়তে হয়

সবমলিয়ে আমি নিজেই তব্দা খেলাম। এ আমি কি করছি! নিজের অজান্তেই আমি একটি উপন্যাসের দিকে যাচ্ছিলাম। সবচেয়ে বেশি অবাক করা, উপন্যাসের সর্বশেষ অধ্যায় আমি আগেই সৃষ্টি করেছি। আমার অসুখ। আই মিন আমি অসুখে। আরো অবাক করা , এই বাক্যটি উদভ্রান্তের মতো আমি আওড়াতাম বন্ধু মহলে।

পৃথিবীতে কত অদ্ভুত নামের বই বিচিত্র কারণে আছে। সেগুলোর নাম অন্যনামে দিলে সংশ্লিষ্ট এসেন্সই তৈরি হতো না। গাভ্রিয়েল ত্রোয়েপোলস্কির একটা বিখ্যাত বই আছে, নাম `ধলা কুকুর শ্যামলা কান`। নামের এমনি কোনো গুরুত্ব নেই, গল্পের কন্টেন্টই নামের যথার্থতা তৈরি করে। টেক্সট না পড়ে কথা বললে তো মুশকিল!

জাহাঙ্গীরনগরের বাংলা বিভাগে ভর্তি হই ২০০৮ সালে। ভর্তি হওয়ার পর খোঁজ করতে থাকি লেখকদের। নিজ বিভাগেই পেয়ে গেলাম দুজনকে। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কবি খালেদ হোসাইন ও কবি সুমন সাজ্জাদকে। সুমন সাজ্জাদ আমাকে পরামর্শ দিতেন কীভাবে পড়ব। তিনিই প্রথম আমার নামের আগে `গল্পকার` শব্দটি বসান।

রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছর একটা একটা গল্প পড়েছি আর অবাক হয়েছি এজন্য যে, গল্প হিসাবে ওগুলো ভালো, গল্পে যদি গল্পই পড়তে চাই। কিন্তু পূর্ববাংলার মানুষের অনুপস্থিতি আমাকে ভাবিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুলো থিমেটিক্যালি বিশ্বজনীন হতে পারে, কিন্তু পূর্ববাংলার প্রাণ ও ব্যথা তাতে অনুপস্থিত।

এ যুদ্ধে আমরা পরাজিত হই। পরাজয়ের চেয়েও আমরা বেশি বিমর্ষ হই যখন দেখি, আমাদের নেতা এ বি এম নূরুল ইসলাম ও ডাক্তার আসজাদ পাকিস্তানিদের আনুগত্য স্বীকার করে নেন। এই খারাপ লাগার পরও আমি উদ্দীপ্ত হই যুদ্ধে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ দেখে।

আব্বা চাইতেন, আমি যেন ডায়রি মেনটেন করি। খুব ছোট থাকতে একবার ডায়রি ধরায়ে দিছিলেন, কিন্তু লিখতাম না। পরে ক্লাস সিক্সে থাকতে তিনি আবার এটেম্প নিলেন। এবার লিখতে শুরু করলাম। প্রতিদিন কী করি, না-করি, তার বিস্তারিত বিবরণী। লিখতে লিখতে একসময় ব্যাপারটারে হুদাই মনে ঠেকল।

আমার দাদার লাঠিটার কথা মনে করিয়ে দিলেন। যেটাকে প্রাথমিক বন্যার দিনগুলিতে আমি অলস পড়ে থাকতে দেখতাম, যেন ওটারই একটা অবলম্বন দরকার হয়ে পড়েছিল, অথচ যেটা আমার দাদার অন্ধের যষ্ঠি! আমাদের দাদার বয়স তখন নব্বই পার হয়ে গেছিল। তিনি একটা ছোট চৌকিতে বইয়ের সঙ্গে ঘুমাতেন।