নাহিদুল ইসলামের গল্প ‘উড়ো চিঠি’
নভেম্বর ২৬, ২০২৪
কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ঘটেছিল এটা। হুট করে সকল শিক্ষকের নামে একযোগে কিছু ক্ষ্যাপাটে কথাবার্তাসম্বলিত একটি চিঠি এসে পৌঁছেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে
দ্য গ্রেট থিফ
গড়পড়তা বাংলাদেশীদের চেয়ে একটু বেশিই উচ্চতা ওর । মাথায় অবিন্যস্ত ঘন কালো চুল । মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি । ওর দেহের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো ওর চোখ জোড়া,ক্যামন যেন মায়ার আবেশ মাখানো ও দুটিতে...যার আমোঘ টানে যেকোনো নারী নিজেকে বিলিয়ে দিতে উন্মুখ হয়ে থাকে। চায়ের স্টলের দিকে এগিয়ে গেল ও।ফিরে এলো একটা কেকে কামড় বসাতে বসাতে।
মে ০৭, ২০১৮
দ্যা গ্রেট থিফ
দরজার দিকে আবার ফিরে গেল ও। নিজের বিছানার পুরোটা হাত দিয়ে আঁতিপাতি করে কী যেন খুঁজতে লাগলো। বিছানার তোষক ওল্টালো। টেবিলের বইপত্র সরাতে লাগলো অস্থির ভাবে। এতক্ষণে বুঝতে পারলো, কী মিস করে গেছিলো ও। বিছানার দিকে আরেকবার অসহায় চোখে তাকালো অনন্ত।
মে ০৪, ২০১৮
অলৌকিক লবঙ্গ
কুয়া খনন স্থগিত করে দেয়া হলো। কারণ ঘটনার আকস্মিকতায় কী করা যায়, কেউ বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এছাড়া সন্ধ্যাও হয়ে যায়। সবাই যে যার কাজ করে ঘুমিয়ে পড়লে আমার বাবা-চাচাদের কেউ একজন স্বপ্নে দেখেন, এই জায়গাটিতে কুয়া খনন করা যাবে না। কুয়া খনন করতে হবে অনত্র
মে ০৩, ২০১৮
হাসান বসরির কিস্সা
আমি তো মাতাল, আছাড় খেলে আমার তেমন কিছু হবে না। গায়ে-জামায় একটু কাদা লাগবে, এই যা। কিন্তু আপনি তো দরবেশ। আছাড় খেলে আপনার কাপড়-চোপড় নোংরা হয়ে যাবে। আপনার কত কত শিষ্য-সাগরেদ। তারা সবাই আপনার ওপর নির্ভর করে চলে। আপনিই যদি কুপোকাত হয়ে যান, তবে তাদের অবস্থা কী হবে!
মে ০২, ২০১৮
অভ্যাসবশত
লোকটা মারা গেছে। বউ হঠাৎ খেয়াল করলো, লোকটার ঊরুর একটা মাংসপেশী মাঝেমাঝেই কেঁপে উঠছে। যেন মৃত্যুর হিম শীতলতার মধ্যে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে পড়েছে ওই পেশীটা, এখন মুক্তি চাইছে, দাপাতে চাইছে, আবার ছুটতে চাইছে জীবনের গরম রাস্তায়। ব্যাপারটাতে চমকে উঠলো বউ।
এপ্রিল ৩০, ২০১৮
রাবেয়া বসরির কিস্সা
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন রাবেয়া বসরি। কান্নার শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ালেন। দেখলেন, রাস্তার পাশে বসে একলোক কাঁদছে, আর বিলাপ করছে, হায় দুঃখ! হায় দুঃখ! রাবেয়া তার কাছে গিয়ে বললেন, এভাবে না বলে, বলো, আহ, জীবন কত নিশ্চিন্ত। তোমার মধ্যে সত্যিকারের দুঃখ যদি থাকত, তুমি বোবা হয়ে যেতে।
এপ্রিল ২৫, ২০১৮
হেয়ার কাটিং সেলুন
‘আপনি আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। খোদা করুন, আমি যেন মরে যাই।’ ‘নিজের মৃত্যু কামনা করো কেন? আমি মরে গেলেই সব ঝামেলা চুকে যায়। বলো যদি আমি এখনই আত্মহত্যার জন্যে তৈরি রয়েছি। এখানে আমার পাশেই আফিমের কৌটা রয়েছে। এক তোলা আফিমই যথেষ্ট।’
এপ্রিল ২২, ২০১৮
কলঘর
তিনপায়া একটা কাঠের টুলে ফজু মিয়া বইসা। এক হাতে সইষ্যার তেলের শিশি আর অন্য হাতের আঙ্গুল একবার কানের ফুটায়, আরেকবার নাকে আবার আরেকবার নাভিতে গোল গোল ঘুরাইতাছে। ভাঙা টুলে ব্যালেন্স রাইখা কাজগুলি করা খুব কঠিন। বিলকিস তাকায়া দেহে তারে। ভোর রাইতে এই বেডারে স্বপ্নে দেখছে সে।
এপ্রিল ১৯, ২০১৮
মধ্যরাত্রির জীবনী
দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলেন নীহারিকা। বিতান দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে বিহারি রিকশাওলার মাথায় হোলড-অল, ব্যাগ ইত্যাদি। তিন বছর পরে বিতান আবার এল। অথচ এই ক`বছরের ব্যবধানে তাকে বড়ো বয়স্ক মনে হচ্ছে, যেন বিতান তিন হাজার বছর পেরিয়ে এসেছে।
এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এক-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ
শিস দিয়ে একটা সুর ভাঁজছি। অনেকক্ষণ পর খেয়াল করলাম, হায়রে, চরণ ধরিতে দিও গো আমারে, নিও না সরায়ে! একটাই আশার কথা সুরটা তুলতে পারিনি। অরা আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ইংলিশে। অনার্স হয়ে গেছে। সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা। মানে আমাদের বয়স পঁচিশের আশপাশে।
এপ্রিল ১৬, ২০১৮