নাহিদুল ইসলামের গল্প ‘উড়ো চিঠি’
নভেম্বর ২৬, ২০২৪
কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ঘটেছিল এটা। হুট করে সকল শিক্ষকের নামে একযোগে কিছু ক্ষ্যাপাটে কথাবার্তাসম্বলিত একটি চিঠি এসে পৌঁছেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে
হিজরা
জন্ম হল নীলাভ্রের। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় আকাশের নীল সম্পূর্ণ দৃশ্যমান। নীলাভ্রের নাম বড় সমারোহ করে। বংশের একমাত্র ছেলে, বংশপ্রদীপ। ছোট্ট নীল সবার আদরের ছিল। তার আগে বলার দরকার, নীলাভ্রকেই সকলে নীল বলে ডাকত। নীল ছিল শান্ত স্বভাবের। সমবয়সী অন্যান্য ছেলেদের মতো সে দুরন্ত ছিল না।
জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
ইগো
বেবিট্যাক্সিওয়ালা কোনো কথা না বলে চালিয়ে যেতে থাকে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, বৃষ্টির কারণে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছে। ঝম ঝম করে প্রচণ্ড বৃষ্টি আর কোথাও বাজ পড়ার আওয়াজ। স্বামীবাগের গলিটা জনশূন্য, কেউ নাই রাস্তায়। পাড়ার দোকানটাও বন্ধ করে মুদিওয়ালা ঘুমে কাতর।
জানুয়ারি ২১, ২০১৯
ছঁ`ছি
কলতলায় অন্য যারা পানি নিতে আসতেন তাদের বেশিরভাগই ছিল হিন্দু পরিবারের। ঝর্নাদির প্রতি অজানা এক টানে কিছুটা কাছে এগিয়ে গেলে কলতলায় আসা অন্য দিদি-মাসিদের গল্পে শুনতে পেতাম, দূর-দূরান্তের কোনো এক রাজকুমার ঝর্নাদির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
জানুয়ারি ১৭, ২০১৯
স্বামী
জমিলার মন আন্ধার হইয়া আসে। একমাত্র পোলা সামছুর লিগা বাপ-মা মরা এই এতিম মাইয়ারে পছন্দ হইছিল তার। আট বছর আগের কথা, পরীর মতো সুন্দর আবার নামও পরী। কেন যে রূপ দেইখা চোখ ঝলসায়ে গেল আল্লায়ই জানে। পরে দেহা গেল, এই মাইয়ার বাচ্চা হয় না, শেষে কত ডাক্তর কবিরাজ দেখাইয়া এই নাতি।
জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
আশ্রয়
কি হচ্ছে দেখতে রুমের বাইরে বের হলাম। সত্যিই ভিষণ অবাক হলাম। বিশটা বছর পর আজ আবার মায়ের মুখটা দেখতে পেলাম। মা বলে জড়িয়ে ধরলাম। যতই রাগ করে ঘর ছেড়ে আসি না কেন চোখের জলেরা বাঁধা মানল না। আমি আর মা-দুজনেই কেঁদে সাগর না হলেও ছোটখাটো একটা পুকুর বানিয়ে ফেলতে পারতাম।তবে সেটা আর হয়ে উঠল না।
জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
সুখলালের স্বপ্ন ও তৃতীয় চরিত্র
তারাবানুর ফাঁকা অন্তঃসারশূন্য দিন-দুনিয়ায় সে ছাড়া যে অন্য কেউ নেই, সুখলালের তা অজানা নয়। তারপরও সে যখন ‘তোর কে মরিছে’ বলে বারান্দা থেকে বিরক্ত হয়ে উঠোনের দিকে হাঁটতে থাকে তখন তারাবানুর কান্নার উচ্চস্বর তাকে যেন পিছন থেকে জাপটে ধরে।
জানুয়ারি ১৩, ২০১৯
আচার্য শান্তিদেব
এক যে ছিল রাজপুত্র। চটপটে, তবে ছটফটে নয়। চুপচাপ, দ্যাখে আর শোনে। কথা যা বলার, বলে খুব কম। বিকেলে একা একা ফুলের বাগানে হাঁটে। ফুল, গাছপালা আর ফুরিয়ে যাওয়া বিকেলের রঙ দ্যাখে। বুকের ভেতর ঝিরঝির আনন্দে সে হাসে।
জানুয়ারি ১০, ২০১৯
জমির আলীর একদুপুর
দুর্বল পা দুটো যখন প্রত্যেক মুহূর্তে বিদ্রোহ করছে, গলার ভেতর থেকে বারবার দলা পাকিয়ে উঠে আসছে কিছু একটা, তখন হাড় জিরজিরে শীর্ণ লোকটি প্রায় মনস্থ করে ফেলে যে, সে এই রাস্তার উপরেই শুয়ে পড়বে। শারীরিক অবস্থাটা তার এরকম, এখানে কিংবা যেখানেই হোক এক্ষুণি তার শুয়ে পড়া জরুরি।
জানুয়ারি ০৭, ২০১৯
গোপন সত্যি
দুপুরের ভাতঘুমের আশায় একটা বই হাতে বিছানায় এসে চিৎ হয়েছি আমি। পাশে আমার আট মাসের শিশু পুত্র। এতটুকু পুতুলের মতো নিঃসাড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। তার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমি। ঝুঁকে তার কপালে একটা চুমু দিয়ে বইটা মেললাম। কখন পড়তে আরম্ভ করেছি খেয়াল নেই। হঠাৎ শুনতে পেলাম, কী পড়ছ আব্বু?
জানুয়ারি ০৬, ২০১৯