নাহিদুল ইসলামের গল্প ‘উড়ো চিঠি’

সে আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যায়।... একটা বিশাল বাড়ি, সেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে শুধু সিঁড়ি আর সিঁড়ি। আমার শরীর উপর্যুপরি প্রশ্বাসে অবসন্ন হয়ে আসে; একটা সিঁড়ির উপর বসে পড়ি আমরা। তখন বিকেল শেষ হতে থাকে। ‘আমার ওপর কি আপনার রাগ আছে, ক্ষোভ আছে?’ শান্তা প্রশ্ন করে।

সেদিকে খেয়াল নেই মোহসিনের, কেবল পেছনে ফিরে ফিরে অপলার মিলিয়ে যাওয়া দেখছে। মার্শাল ট্রায়ালে ওর ফাঁসি হতে পারে, ছাড়াও পেয়ে যেতে পারে বা নির্মম নির্যাতনের মুখোমুখি হতে পারে সে। যুদ্ধে বিদ্রোহী সৈনিকের কপালে কি জুটতে পারে জানে মোহসিন, যে কোনো সাজা সে মাথা পেতে নেবে।

পেঁয়াজ আর রসুনের মরশুমে লালপুর হাটের চারপাশের গ্রামগুলোতেও পেঁয়াজ রসুনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। হাটের দুমাইল দূর থেকেও বাতাসে কাঁচা পেঁয়াজের ঝাঁঝালো গন্ধটা বেপারিদের নাকে এসে লাগে। গন্ধটা তখন আর শুধু পেঁয়াজের গন্ধ থাকে না। রসুনেরও একটা অহংকারী গন্ধ আছে, যা বাতাসে পেঁয়াজের গন্ধের সাথে মিশে বাতাসকে স্বাদযুক্ত করে তোলে।

হাসতে হাসতে আঙুল বুলিয়ে গোঁফজোড়া সাজিয়ে নিয়ে বললে, ‘আগে একে মিস গুপ্ত বলে ডাকতাম- শেষবার যখন দেখা হয়েছিল তখনো, কিন্তু এখন নাম ধরেই ডেকে ফেললাম, ডাকা উচিত, আলাপ আমাদের নিশ্চয়ই এমন ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছেছে,’ বলতে বলতে শুভেন্দু থেমে গেল।

ঝিম ধরে আছে দুপুর। পাশের বাড়ির ভেঙেপড়া দেয়ালের ওপর কয়েকটি কাক কেবল ডেকে যাচ্ছে। আর কোনও শব্দ নেই কোথাও। খাতা থেকে মুখ তুলে জানলা দিয়ে সেদিকে তাকালেন আফসার করিম। কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়ল তার। বিরক্ত যেন তিনি। পরদার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে ঘরে।

চিত্রা পূর্ণামি— না কী যেন এই সময়টা! পাতায় রোদ আটকে আছে, সরছে না। ধুলা উড়ছে। দুপাশে মানুষসমান ঘাস। ঘাস নড়ে উঠছে, সবুজের ভেতর শরীরের বাঁক। পেটিকোট বুক পর্যন্ত বেঁধে পুকুরে নেমে গেছে কয়েকজন। দুয়েকজন ঘাটলায় শরীর মাজছে। রোমশ পায়ে রুপার নূপুর খলবল করছে ওদের। বিশ্বনাথন গুনগুন করতে করতে ঘুরে দাঁড়ায়

চেয়ারে বসে আমি সহ্য করলাম সব, ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত, গ্লাসের ভেতর থেকে গলতে-থাকা বরফের টুকরা তুলে ছোঁয়ালাম ঠোঁটে। জ্বলছিল। এরই মধ্যে সে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছে কার্পেটের উপর উপুড় হয়ে, প্রশ্বাসে ওঠানামা করছিল তার প্রায়-শাদা পিঠ; আর মাথার কাছে ছড়িয়ে ছিল শাড়ি, সায়া ও ব্লাউজ।

এখন যেভাবে অবাক হয়ে মোহনাকে দেখছি ঠিক তেমনি ভাবে অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম যেদিন প্রথম দেখেছিলাম। ভার্সিটির নবীন বরণে ওর সাথে আমার প্রথম দেখা। ওদের নবীনবরণের আয়োজনটা করেছিলাম আমাদের ৩য় বর্ষের ছাত্ররা। আর এই নবীনবরণেই মোহনা নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে এসেছিল। একেবারে ডানাকাটা নীলপরী যাকে বলে আর কি!