নাহিদুল ইসলামের গল্প ‘উড়ো চিঠি’

পাড়াটা চিনলেও কানাই বা শ্রীপতি হারাণের বাড়ীটা ঠিক চিনত না। সামনে রাখালের ঘর পেয়ে ঝাঁপ ভেঙে তাকে বাইরে আনিয়ে রেইডিং পার্টির নায়ক মন্মথকে তাই জিজ্ঞেস করতে হয়, হারাণ দাসের কোন বাড়ী?

লঞ্চ ঘাটের সূর্যের মতো রাহেলাও যেন ঢলে পড়ে। জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না রাহেলা। বাঁশি বেজে লঞ্চ ছাড়ল। রাহেলা রাত্রি কাটাবে কোথায়? পান দোকানদার দোকান গুটাচ্ছে। রাহেলা তার পা জড়িয়ে ধরে বলল, বাবা, আমাকে বাঁচাও।

যেতে যেতে পথে, আসাদ গেটের মোড়ে, দেখা হয়ে গেল মন্তাজ খালুর সঙ্গে। গৌরবর্ণ, সুঠাম দেহের মন্তাজ খালু আর আগের মতো নেই। তার গাল ভেঙে গেছে, চোখ কোটরাগত। গলার হাড় ঠেলে বেরিয়ে এসে ‘বিউটি বোন’ হয়েছে।

মসজিদের পাশে নদী। গ্রামের পেট কেটে চলে গেছে দক্ষিণে। তীরে গাছপালা। মসজিদের পেছনে নদীর ঢালুতে একটা বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে নদীতে নামার সহজ পথ। পাঁচ ওয়াক্ত এ ঢালুপথে নেমেই মুসল্লিদের অজু করতে হয়।

জন্তুওয়ালা অনেক জন্তু লইয়া শহরে একটি ঘর ভাড়া করিয়াছে। মনে করিয়াছে, আজ হাটের দিন বিন্তর লোক আসিবে, আর তামাশা দেখিয়া পয়সা দিবে। হাটে লোকের কম নাই, কিন্তু জন্তুওয়ালার ঘরের আধখানাও ভরিল না।

অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। টিনের চালে বৃষ্টির পতনে চমৎকার ছন্দ তৈরি হয়েছে। ঝমঝম ছন্দে বিভোর হয়ে জানালার পাশে বসে স্মৃতি মুগ্ধ হয়ে বৃষ্টি দেখছে। ঝিলের পাড়েই স্মৃতিদের বাড়ি। ঝিলের পানিতে বৃষ্টি পড়ছে অঝোরে।

আমি থেকে থেকে ওর বুকের দিকে তাকাচ্ছি। সাহিত্যের ভাষায় এজাতীয় বক্ষকে বলা হয় পীনোন্নত স্তন। আমার মাথায় গাঁজার খিদে ভনভন করে ঘুরতে লাগল। বললাম, ভাল লেগেছে ভাল কথা। বেশিক্ষণ কথা বলতে পারব না। আমি যাই।

ডলির কথা শুনে কোনো কথাই বলতে পারেননি মানিক বাঁড়ুজ্জে। কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেবেছিলেন, মানুষ সন্তানকে ভয় করছে! দশমাস গর্ভে ধারণ করে মৃতসন্তান প্রসব করে মা ভাবছে, বাঁচা গেল!