নাহিদুল ইসলামের গল্প ‘উড়ো চিঠি’

সম্পাদকের হাতে সিগারেট। খুব টেনশনে আছেন বোঝাই যাচ্ছে। জোরে জোরে সিগারেটে টান দিতে দিতে বললেন, বসেন, বসেন। খুব টেনশনে আছি। বিপদে পড়েছি তো। আর এজন্য আপনাকে দায়ীও করতে পারছি না। সম্পাদক তো আমি, দায়টা আমার।

তখন ভাটার সময়। সমুদ্রে কোনো তোলপাড় নেই। ডাঙা থেকে মাইলখানেক দূরে জেলে নৌকাগুলো দিগন্তের অস্পষ্ট ভ্রূরেখার মতো আবছাভাবে দুলছে। মৃদুগতিতে অল্প অল্প বাতাস বইছে। হাওয়ার স্পর্শ তেমন শীতলও নয়। আবার তেমন উষ্ণতাও নেই।

জগলুল আংকেল ঘরে ঢুকতেই পিচ্ছিল টাইলসে পা ফসকে চিৎপটাং। কিটো এক লাফে কোথা থেকে এসে ঝাপিয়ে পড়ল তার বুকের ওপর। সমানে তার ধারালো নখ দিয়ে মুখে গলায় আঁচড়াতে লাগলো। এই বুলশিটটাই তার ফ্লাফি লোমওয়ালা গায়ে পা দিয়ে গুতো দিত!

স্মৃতির ভোমরাটা এখন দেখাচ্ছে, বগুড়া নামের শহর। ঝিরঝির নামের বৃষ্টি। সন্ধ্যার আলো নিভে গেছে খানিক আগেই। আমরা হাঁটছিলাম। ঝিরঝির বৃষ্টিতে পাখিভেজা হয়ে হাঁটছিলাম। হাতে জ্বলছিল সিগারেট। কিন্তু কি আশ্চরর্য! সিগারেট ভিজছিল না!

কাফের সামনে দিয়ে চলাফেরা শুরু করেছে শহরের নিয়মিত বেশ্যা এবং তাদের খদ্দেররা। রাত এগারোটার দিকে একটা অপূর্ব সুন্দরী বেশ্যাকে দেখে আমি হাত ইশারায় না ডেকে পারলাম না। মেয়েটা বিরক্ত ভঙ্গিতে আমাদের দিকে তাকাল।

রাতের পর রাত কেটে যায়। শীতের প্রারম্ভে ঝাঁকে ঝাঁকে ছারপোকা। বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে একটা আস্ত সিগরেট বেরিয়ে এলো। বছর আটেক হলো, উপাপদ খুলনার সোনালী জুট মিলে কাজে যোগ দিয়েছে। পার্চেজ অফিসার, একা মানুষ।

আবদুল কাদের সকালে বেরিয়েই লক্ষ্য করল, শহরটায় এক অন্ধকারের কালিমা লেপে আছে। কই তেমন ঘন মেঘ তো নেই, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়েছিল সকালে। কিন্তু তার জন্য তো এত অন্ধকারের প্রয়োজন পড়ে না।

নিঃশ্বাস প্রায় আটকে রেখে, যতদূর পারা যায় নড়াচড়া না করে মায়ের পাশ থেকে সরে এলো রুনু। সন্তপর্ণে খাট থেকে নেমে পড়ল। এবারই সবচেয়ে কঠিন কাজটা। দরজা খোলা। কোনো শব্দ না করে পাশের ঘর থেকে চেয়ারটা নিয়ে আসা।