হুমায়ূন আহমেদের গল্প ‘চোখ’

মাথা নিচু করে নিঃশব্দে সরে যায় দুই ভাই। বাবা ও মা এই দুটিই যাদের নেই, তাদের কোনো অপমানই আর গায়ে লাগে না। অনেক দুর্ব্যবহারেও ছেলে দুটি চাচার দিকে তাকিয়ে থাকে আড়াল থেকে

তখন দুপুর। সূর্য তার হলদে রোদের তেজ ছড়িয়ে দিয়েছে। রাহাত চৌধুরী উঠানে চেয়ার পেতে বসে প্রকৃতির প্রখরতা দেখছে। আর বাতাসের সাথে আলিঙ্গন করছে নিজের শরীর ও মন

শিক্ষিত নই আমি, মুর্খও নই। আনন্দকেও জেনেছি আমি। এ কথা খুব অল্পই প্রকাশ করতে পারে যে: আমি জীবন্ত, এবং এ জীবন সবচেয়ে বড় আনন্দটাই দিয়েছে আমাকে। এবং মৃত্যু সম্পর্কে কি বলা যায়?

সোফিয়া হকচকিয়ে গেল। নিজেও পিজিতে ডাক্তারি করেন। ফলে এমন আচরণ হয়তো আশা করেনি। সেসব কথা আমাকে পরে বলেছে। সোফিয়া চুপ। মেয়েটি আমার দিকে প্রখর চোখে তাকাল, কী বলতে চান আপনি?

এই জীবনে বেশির ভাগ কাজই আমি করেছি ঝোঁকের মাথায়। হঠাৎ একটা ইচ্ছে হল, কোনদিকে না তাকিয়ে ইচ্ছাটাকে সম্মান দিলাম। পরে যা হবার হবে

সোফিয়াকে বাইরে থেকে দেখলে বেশ স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সিঁথি কেটে, পাট করে আঁচড়ানো চুল, পরিপাটি পোশাক-আশাক। চোখের চাহনিতেও কোনো অসুস্থতার চিহ্ন নেই

একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গিয়েছিল আজ। তছনছ হয়ে গিয়েছিল সব। সীমান্ত ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছিল, যেন একটা মাঠের কাছে সব দেশ হারিয়ে ফেলেছে তাদের পরিচয়

আমি আর যাব না ভেবে রেখেছিলাম সোফিয়ার বাসায়। কিন্তু এই লকডাউনে হোম কোয়ারেন্টাইনের সন্ধ্যায় যেতে হলো। সোফিয়া পড়াশোনা করেছে বার্লিনে। ফিল্মের ওপর। তার প্রিয় পরিচালকদের একজন রুগেরো দেদাতো।