হুমায়ূন আহমেদের গল্প ‘চোখ’

সেবার দেশময় রটে গেল যে, তিনটি শিশু বলি না দিলে রূপনারায়ণের উপর রেলের পুল কিছুতেই বাঁধা যাচ্ছে না। দু’টি ছেলেকে জ্যান্ত থামের নীচে পোঁতা হয়ে গেছে, বাকী শুধু একটি। একটি সংগ্রহ হলেই পুল তৈরী হয়ে যায়।

আমি বুড়ো, সে বুড়ি। আমরা বুড়োবুড়ি মিলে একটা রেস্টুরেন্ট খুলে বসলাম—‘বুড়োবুড়ি মাল্টিন্যাশনাল খিঁচুড়ি রেস্তোঁরা’। শহরের উপকণ্ঠে, বলা যায় শহর থেকে অনেকটা দূরেই আমরা দোকানটি বসালাম।

তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? আমরা প্রত্যেকেই তো কাউকে না কাউকে খুন করার জন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রতারণা-প্রবঞ্চনা-বিশ্বাসঘাতকতা এগুলো কি এক একটা খুন নয়?

দালানের মাঝখানে গালচের আসন পেতে গোটা আষ্টেক-দশ বাটি আর অভব্য রকমের বড়ো একখানা থালা সাজিয়ে আহারের আয়োজন করা হয়েছে। জামাইয়ের নয়, বেহাইয়ের। নতুন বৌমার বাপ এসেছেন বিদেশ থেকে।

হিরন্ময় মাঝে মাঝে বলে, তার দুটি পাখা আছে। আমি তার কথায় হাসি। এমন কথায় পাত্তা না দেবারই কথা। ও প্রায়ই আসতো আমার বাসায়। আমরা মুখোমুখি বসতাম।

কুদরত আগে নৌকা বাইত, এখন রিকশা চালায়। সেদিন সেই কথা সে এক সাহেবকে বলছিল। সাহেব তার রিকশায় উঠেছিলেন। বলছিল,আগে মাল্লা আছিলাম, অহন রিকশালা হইছি।

গোলগাল মহিলা শরীর, কিন্তু ভারী নয়, একেবারেই নগ্ন, চিত হয়ে শুয়ে থাকা, বুক উচুঁ হয়ে রয়েছে কিছুটা, মোটা একটা বালিশ মেঝে শরীরটার নিচে পড়ে থাকায়, প্রাচ্য-রীতির কারুকাজ করা একটা রুমালে বালিশটা ঢাকা। শ্রোণী খুবই সরু

ভাঙা সাঁকোর একপাশে বসে ছেলেটা কাঁদছিলো। হাতে ছিল রঙিন কাপড়ের পুটলি, তাতে মায়ের রাঙা শাড়ি বাপের কামিজ, মুড়ি বেচে সঞ্চয় করা পয়সা ভরা টিনের কৌটা, খালের জলে তার ছায়া স্থির।