হুমায়ূন আহমেদের গল্প ‘চোখ’

আমার নিজেরই চোখের ভুল, এই ভাবতে ভাবতে আমি মোবাইলে সময় দেখলাম। রাত আড়াইটা পার হয়েছে। বিড়বিড় করে বললাম, আর মাত্র পঁচিশ মিনিট, তারপর সেটানিক আওয়ার। এটুকু বলতেই উত্তেজনায় আমার শরীরের রোম দাঁড়িয়ে গেল

নিজের যা কিছু, তা নিয়ে প্রমীলা দেবীর দম্ভ ছিল ভারি। আমার বাড়ি, আমার রান্নাঘর, আমার শাড়ি, আমার গয়না, আমার বাগান, আমার ছেলে। আমি ও আমার, এই তার অহরহ উচ্চকিত উচ্চারণে বাড়ির সকলেই ছিল তটস্থ।

আমার লাইফে খুব আর্লি দুইটা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এত আর্লি যে, এখন প্রায় গায়েই লাগে না ব্যাপারগুলা। কেউ আত্মহত্যা করলে একটা চাপ ফিল করে জীবিত মানুশেরা, নানাভাবে চাপ রিলিফ করার চেষ্টা করে

প্রথমেই চোখে পড়বে, লাল একটা ধারা, ঘন, গভীর ও ঝলমলে, লাল, প্রায়কালো ছায়াসহ। অনিয়মিত রসেটির দেহকাঠামোর ধরনে, তীক্ষ্ম নকশাকৃত, নানাদিকে ছুটে যাওয়া নানা দৈর্ঘ্যর প্রশস্থ এক ধারা

টানা দালান। আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে বসে আছেন বিভূতিবাবু। চোখে কালো চশমা। হাতের লাঠিটা পাশের দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখা। সামনের ছোট টেবিলে পেতলের গেলাসে জল, ছোট একটি রেডিও

লাশ টানতে টানতে শুকলাম ঘেমে ওঠে। কপালে ঘাম, দুই গালে ঘাম, গলায় ঘাম, বুকে ঘাম, সারা শরীরে ঘাম। শুকলাল খিদার কথা ভুলে গেছে। কতক্ষণ পরপর সে বিড়ি টানে, অথচ এখন বিড়ির কথা ভুলে আছে

এই মেয়েটি হাসলেই সোয়েবের অচেনা অচেনা লাগে। কেমন যেন ঘোর সৃষ্টি হয়। আসলে যা সৃষ্টি হয় তার নাম মায়া। মুগ্ধতা বেড়ে যায়। সংযমী পুরুষের মতো সিদ্ধান্ত নেয় খুব জলদি বিয়ে করে ফেলবে।

দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলেন নীহারিকা। বিতান দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে বিহারি রিকশাওলার মাথায় হোলড-অল, ব্যাগ ইত্যাদি। তিন বছর পরে বিতান আবার এল।