ফাইল ছবি
Eye Wash এ ভুলবেন না
রওশন আরা মুক্তাপ্রকাশিত : অক্টোবর ০৮, ২০১৯
একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে তিনটি উপাদানের উপর। ১. মানবসম্পদ ২. প্রাকৃতিক সম্পদ ৩. মূলধন। গভীর দুঃখের ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের এই তিনটি উপাদানকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য থেকে এলপিজির র ম্যাটেরিয়াল বিউটেন আর প্রোপেন আমদানি করে মংলা বন্দরে খালাস করা হবে। তারপর ছয়শো কিলোমিটার দূরে পরিবহণ করে নিয়ে যাওয়া হবে ভারতের ত্রিপুরায়। যদিও এটা বেক্সিমকোর ব্যবসায়িক প্রজেক্ট, কিন্তু আমদানি করছে বাংলাদেশ। মূলধন ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের। মানবসম্পদ ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের।
তাহলে এ থেকে বাংলাদেশ কী পাচ্ছে? জ্বালানি ঘাটতি, সড়কে লাশের মিছিল এবং অনগ্রসর জীবনমান। বন্দর ভাড়া বা ট্রাক ড্রাইভারের বেতন গরু মেরে জুতা দান ছাড়া কিছুই নয়। বেক্সিমকো অবশ্য মোটা অংকের মুনাফা পাচ্ছে, যার বখরা সরকারের পদস্থ ব্যক্তিবর্গরা পেলেও বাংলাদেশ পাচ্ছে একটা বিগ জিরো!
তবে এমনটা নয় যে, বাংলাদেশে বিউটেন ও প্রোপেন নাই। আমাদের তেল শোধনাগারেও এই দুইটি উপাদান আছে এবং চট্টগ্রামে এলপিজি উৎপাদনও হয়। জ্বালানি বিটে কাজ করেন এমন একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে কথা বলে জেনেছি, এখান থেকেই ভারতের চাহিদার ৩০ পারসেন্ট রপ্তানি করা হবে, বাকিটা আসবে বিদেশ থেকে। জ্বালানি মন্ত্রীও এটা প্রাকৃতিক গ্যাস নয়, তরল গ্যাস ধরনের হালকা কথা বলে প্রসঙ্গ চাপা দিচ্ছেন।
কোনো ওয়েব সাইটেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করি, দুই এক দিনের ভিতর এটা খোলাসা হবে যে, কোন কোন কোম্পানি কোন কোন দেশ থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে কতটুকু এলপিজির র ম্যাটেরিয়াল রপ্তানি করছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩২০০ মিলিয়ন ঘনফুট আর দৈনিক ঘাটতি পাঁচশো মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ এই যে দেখতে পান, সিএনজির লম্বা লাইন, রান্নার সময় গ্যাস না পাওয়া বা কলকারখানার মেশিন বন্ধ রাখার অর্থনৈতিক ক্ষতি— সবই এই ঘাটতির কারণে। যতটুকু সরবরাহ করার কথা, সেটাই সুষ্ঠুভাবে করতে পারছি না আমরা। আর যদি বলি, প্রতিটি উপজেলায় গ্যাস চাই সেক্ষেত্রে যে চাহিদা দাঁড়ায় তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে গ্যাস রপ্তানি কারা করে?
যেখানে আমরা নিজেদের গ্যাসের চাহিদা মেটাতে সক্ষম নই, সেখানে আমরা আমাদের সব কিছু বিকিয়ে দিয়ে ভারতে কেন এলপিজি সাপ্লাই দেব? বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে কেন আমরা নিজেদের সংস্থা বাপেক্সকে শক্তিশালী করছি না? রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে কেন আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি? কেন দেশের স্বার্থবিরোধী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছি আমাদের সম্পদ?
নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ না করে, গ্যাসের সংকট দেখিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। সংকট দেখিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংসকারী পারমাণবিক ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। এগুলো একটা অন্যটার সাথে সম্পর্কিত। নানা রকম কুযুক্তি দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আমার দেশ আমার বন্দর আমার রাস্তা আমার এলপিজি অন্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার হতে দেব না।
লেখক: কবি