হুমায়ূন আহমেদের দশটি গান

পুনর্মুদ্রণ

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৩, ২০২৩

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আজ ৭৫তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে তার জন্ম। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। নন্দিত এই সাহিত্যিকের জন্মদিনে তার লেখা দশটি গান পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো

যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো
চলে এসো এক বরষায়।
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায়।

যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরও
তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়।।

নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে
মেঘমাল্লা বৃষ্টিরও মনে মনে।
কদম গুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে
জল ভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে
তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়।।

চাঁদনি পসরে কে আমারে স্মরণ করে

চাঁদনি পসরে কে আমারে স্মরণ করে
কে আইসা দাঁড়াইসে গো আমার দুয়ারে।

তাহারে চিনি না আমি সে আমারে চিনে
বাহিরে চাঁন্দের আলো ঘর অন্ধকার
খুলিয়া দিয়াছি ঘরের সকল দুয়ার।
তবু কেন সে আমার ঘরে আসে না
সে আমারে চিনে কিন্তু আমি চিনি না।।

সে আমারে ঠারে ঠারে ইশারায় কয়
এই চাঁদের রাইতে তোমার হইছে গো সময়।
ঘর ছাড়িয়া বাহির হও ধরো আমার হাত
তোমার জন্য আনছি গো আইজ চাঁন্দেরও দাওয়া।।

বরষার প্রথম দিনে

বরষার প্রথম দিনে ঘন কালো মেঘ দেখে
আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়
সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়
কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয়
বরষার প্রথম দিনে।

জীবনের সব ভুল যদি ফুল হয়ে যায়
যদি কোনো দিন আসে জোছোনার আঁচলে ঢাকা মধুর সময়
তখন কাছে এসো, তাহাকে ভালোবেসো
সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়
কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয়।।

জীবনের সব কালো যদি আলো হয়ে যায়
দূর হয়ে যায় যদি ছায়াদের আঁধার সময়
তখন কাছে এসো, তাহাকে ভালোবেসো
ছায়াময়ী কারো সাথে করো পরিচয়
কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয়।।

আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা

আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা
ভাঙা বেড়ার ফাঁকে
অবাক জোছনা ঢুইকা পড়ে
হাত বাড়াইয়া ডাকে
হাত ইশারায় ডাকে কিন্তু মুখে বলে, না
আমার কাছে আইলে বন্ধু আমারে পাইবা না।

তুমি আমায় ডাকলা না গো
তুমি রইলা দূরে
তোমার হইয়া অবাক জোছনা
ডাকলো অচিন সুরে
হাত ইশারায় ডাকে কিন্তু মুখে বলে, না
আমার কাছে আইলে বন্ধু আমারে পাইবা না।

ঘর খুলিয়া বাহির হইয়া জোছনা ধরতে যাই
হাত-ভর্তি চান্দের আলো, ধরতে গেলে নাই
হাত ইশারায় ডাকে কিন্তু মুখে বলে, না
আমার কাছে আইলে বন্ধু আমারে পাইবা না।।

একটা ছিল সোনার কন্যা

একটা ছিল সোনার কন্যা, মেঘবরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ
দুই চোখে তার আহা রে কি মায়া
নদীর জলে পড়লো কন্যার ছায়া
তাহার কথা বলি…
তাহার কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি।

কন্যার চিড়ল-বিরল চুল
তাহার কেশে জবাফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করলো ভুল
কন্যা ভুল করিস না
ও কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলবো না।।

হাত খালি, গলা খালি..
কন্যার নাকে নাকফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করলো ভুল
কন্যা ভুল করিস না
ও কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলবো না।।

এখন নিজের কথা বলি
নিজের কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি।

সবুজবরণ লাউ ডগায় দুধসাদা ফুল ধরে
ভুল করা কন্যার লাগি মন আনচান করে
আমার মন আনচান করে।।

ও আমার উড়াল পঙ্খীরে

ও আমার উড়াল পঙ্খী রে
যা যা তুই উড়াল দিয়া যা
আমি থাকব মাটির ঘরে
আমার চোক্ষে বৃষ্টি পড়ে
তোর হইবে মেঘের উপরে বাসা।

ও, আমার মনে বেজায় কষ্ট
সেই কষ্ট ইইল পষ্ট
দুই চোক্ষে ভর করিল আঁধার নিরাশা
তোর হইল মেঘের উপরে বাসা

মেঘবতী মেঘকুমারী মেঘের উপরে থাকো
সুখ দু”খ দুই বইনেরে কোলের উপরে রাখো
মাঝে মইধ্যে কান্দন করা মাঝে মইধ্যে হাসা
মেঘবতী আজ নিয়াছে মেঘের উপরে বাসা।

মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ

মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ
হাতে আছে অচেনা এক শহরের ও ম্যাপ।
ব্যাগ ঝুলিয়েছি কাঁধে
নামবো রাজপথে,
চারিদিকে ঝলমলে রোদ
কেটে যাবে আঁধারেরই ছায়া-অবরোধ।

চারিদিকে কী আনন্দ,
অতি তুচ্ছ পতঙ্গেরও অপূর্ব জীবন।
হয়তো শিশির কণারও আছে
শুধু তার একান্ত-একা
আনন্দেরই ক্ষণ।

আমি বলি, এই যে ব্রাদার হ্যালো
আমি কে? এইটুকু আমাকে শুধু বলো।
কোত্থেকে এসেছি আমি, ঠিকানাটা কী
এই জীবনে কী দেখেছি, কী দেখিনি।
দেখেছি মায়াময় দুই দুয়ারী ঘর
সেইখানে বাস করে অশ্রু কারিগর।
তাকে ঘিরে টলমল করে
নীলমণি দুঃখ সাগর।
দুই দুয়ার, খুলে দাও ভাই
অশ্রুর অবসান চাই।

নিয়ে এসো, চারদিকে ঝলমলে রোদ
কেটে যাক আঁধারের ও ছায়া-অবরোধ।

আমার আছে জল

আমার আছে জল
সেই জলে যেন পদ্মপুকুর
মেঘলা আকাশে মধ্যদুপুর
অচেনা এক বনবাঁশি সুর
বিষাদে কোমল।

আমার একা সেই কালো দিঘি
একাই আমি জলে নামি
আর কেউ নেই তো কাছে ও দূরে
অন্য ভুবনে থাকো তুমি
আমার একার সেই দীঘিতে ফোটাই নীলকমল।।

ঝুম বরষা ঘন কালো মেঘে
উল্লাসে নাচি একা আমি
কেউ নেই পাশে মেঘে বৃষ্টিতে
ভিন গ্রহবাসি আজ তুমি
আমার একার জলত সবই শুধু অস্রুজল।।

ও কারিগর দয়ার সাগর ওগো দয়াময়

ও কারিগর, দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়
চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়।

চান্নি পসর চান্নি পসর আহারে আলো
কে বেসেছে কে বেসেছে তাহারে ভালো
কে দিয়েছে নিশি রাইতে দুধের চাদর গায়
কে খেলেছে চন্দ্র খেলা ধবল ছায়ায়।।

এখন খেলা থেমে গেছে মুছে গেছে রং
অনেক দূরে বাজছে ঘণ্টা ঢং ঢং ঢং
এখন যাব অচিন দেশে, অচিন কোন গায়
চন্দ্রকারিগরের কাছে ধবল পঙ্খী নায়।।

বাজে বংশী

বাজে বংশী রাজহংসী নাচে দুলিয়া দুলিয়া
নাচে পেখমও মেলিয়া
রাজহংসী নাচে
ঝুমুর ঝুমুর ঝুম্

রাজহংসীর চোখ কালো
তারে দেখে লাগলো ভালো
সে বিহনে জগৎ কালো সবই অন্ধকার
তার নাচে ভূবণ নাচে আহা! কি বাহার।।

তারে তুমি কইয়ো গিয়া
বিষ্যুতবারে তাহার বিয়া
আমরা যাব পানসী নিয়া
শনির হাওর পাড়ি দিয়া।
বাদ্য বাজনার ধুম তাকধুমাধুম ধুম
ঝুমুর ঝুমুর ঝুমুর ঝুমুর
ঝুমুর ঝুমুর ঝুম্।