হাসান আজারকাতের চারটি কবিতা
প্রকাশিত : মে ৩০, ২০২৩
যন্ত্রমানব
সময় ক্রমাগত বয়ে চলেছে
স্রোতস্বিনী নদীগুলোও এখন বেশ পুরোনো
ব্যস্ততাগুলো ক্রমশ দখল করছে জীবন
দুপুরের ক্লান্ত রোদে ক্ষণিকের বিশ্রাম
যেনো বড্ড বেমানান
হন্যে হয়ে ছুটতে থাকা মানুষ নামক যন্ত্রগুলো
এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত
চাহিদা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাদের নৈমিত্তিক সুখের হিসাব
অর্থের যোগানে বিক্রিত হয় প্রতিবাদী স্বত্তা
যার প্রতিটি পদক্ষেপে লুকায়িত আত্মঘাতী নিরাপত্তা
দালানকোঠায় আটকে থাকা জীবনগুলো আজ
জানালা দিয়ে বিশাল আকাশ দেখার চেষ্টারত
হয়তো তাদের মাথায় নেই খানিকটা দূরেই
বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তর যা যুদ্ধাহত অবস্থায়
দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে কাঁটাতারে
অন্ধকারাবৃত রাতগুলো তাই চরম হতাশাগ্রস্ত
অজানা সংকল্পে প্রহর গুনছে অপেক্ষার
কখন যন্ত্রগুলো হবে বিকলাঙ্গ?
কবে পাখিদের মুখরিত কলতান
ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় ঘুম ভাঙাবে
যান্ত্রিক সীলমোহরে ঢেকে যাওয়া মানুষগুলোকে?
অনিশ্চিত হিসাবের এল ই ডি স্ক্রিনে
উত্তরগুলো নিজেদের মেলাতে ব্যস্ত!
মনস্তত্ত্ব
চিনে রাখো তোমার মন
সদা চঞ্চল অথবা আকস্মিক গম্ভীর
যা বাধাগ্রস্ত করে সকল অনিচ্ছাগুলোকে
ইচ্ছেগুলোকে বরণ করে নেয় চরম উৎফুল্লে
যেখানে অতি যত্নে গড়ে উঠতে পারে পাপের বসতি
অথবা দুয়ারে মৃদু কড়া নাড়তে পারে পুণ্যের আলো
পৌঁছে যেতে পারে গভীর থেকে গভীরে
যদি দুয়ার খুলে তাকে সাদরে আমন্ত্রণ করো
আলোকিত দিগন্ত উন্মোচিত হবে সম্মুখে
অন্যথায় হারিয়ে যাবে তোমার সবকিছু কালো গহ্বরে
মনের গভীরতায় যে পাপ তার চেয়ে অন্ধকারময় আর কী হতে পারে
মাইলাম ৭.৫
মস্তিষ্কের নিউরনে চলছে মধ্যাকর্ষণ যুদ্ধ...
চেনা মুখগুলো সব যাচ্ছে হারিয়ে।
চোখের সামনে তীব্র বীভৎসতা...
নগ্ন আলোয় কড়া নাড়ছে দাঁড়িয়ে।
জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়াব বলে...
হ্যালুসিনেশনে বেসামাল পা দুটো।
ফ্যানের বাতাসে উড়তে থাকা ক্যালেন্ডারের পাতা...
সময়টাকে জানান দিচ্ছে প্রতিনয়ত।
টেবিলে রাখা মানিব্যাগ, আবিষ্কৃত হলো টাইলসের ফ্লোরে...
মোবাইল স্ক্রিনে চার্জার ডিসকানেক্টেড।
চেতনা বিভ্রাটের ভয় ভেঙে...
ঘুমের রাজ্য গ্রাস করছে কেমিক্যাল সিন্ডিকেট।
সড়ক দুর্ঘটনা
স্পিরিটের নেশায় চুরমার হয়ে থাকা রাত্রিজাগরণ শেষে
লোহার অবয়বে ধরা পড়ে প্রাগৈতিহাসিক দানবের ছায়া
গুম হয়ে যাওয়া লাশের প্রতিচ্ছবি
আড়াল হয়ে থাকে তেরপলের নিচে
বিকট শব্দে ধরণী কেঁপে ওঠে
দৃশ্যপটে থেমে যায় স্বপ্নগুলোর ঘরে ফেরা নিঃশ্বাস
সাইরেন বাজিয়ে ছুটে যায় অ্যাম্বুলেন্স
মর্গের শোভা বৃদ্ধি করে একগাদা রক্তাক্ত তাজা লাশ
সংকটাপন্ন সময় গুমোট বাতাসে টালমাটাল হয়ে খুঁজে নেয় ঘটনাস্থল
মৃতদেহ মাড়ানো ট্রাকটা ঠিক তোমার মতই বীভৎস এখন!
রাস্তা সাক্ষী!