সাঈদ জুবেরী
হলুদ ক্রিটিক ও ইয়েলো পাঠক
সাঈদ জুবেরীপ্রকাশিত : জুলাই ২০, ২০১৯
হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের বড় পাঠকদের জন্য প্রচুর কিশোর সাহিত্য উপহার দিছেন। আর তা এতই সফলভাবে যে, হুমায়ূনকে বুঝতে অনায়াসে জেমস জয়েস থেইকা কামু, কাফকা ক্রিটিকের মাথায় চইলা আসেন। তা অনেকটাই ক্রিটিকের জ্ঞান আর ডিজায়ারের প্রেসার। আর ক্রিটিকের এই আঁতলামির লগে হুমায়ূনরে নোবেল দেওনের আব্দার জানায়া তার পাঠকদের মানববন্ধনের (অথবা অনলাইন ক্যাম্পেইন অথবা স্বক্ষরাভিযান) অগাধ সম্পর্ক আছে বইলা মনে করি। সেইহেতু, হুমায়ূনও ওই ক্রিটিকের আঁতলামি লেবেলের সাহিত্যিক না আর তার নাদান পাঠকদের মানবন্ধনও তারে তাই নোবেল আইনা দেয় না। ভাগ্য ভালো যে, এই দাবিতে হেরা হরতাল ডাকে নাই।
ইদানীং অনেকে স্মার্টনেস দেখাইতে প্রথমেই হুমায়ূন আহমেদকে অধিক গুরুত্ব দিয়া ফ্যাশন জাহির করতেছে, দেখি। তারা জয় মা তারা (শঙ্কর) বইলা শুরু কইরা ইলিয়াসের নাম জপিয়া হুমায়ূনের নাম নিয়া ইকামত বান্ধিবে, আলবাত...। আর এর পর কইবে, ‘হুমম, হুমায়ূন মেলা বড় সাহিত্যিক।’ আচ্ছা, আমার কম জানা-পড়া-শুনা-বুঝারে আমলে নিয়া জিগাইতে চাই, কবে কোথায় দেখছেন যে, ডান ব্রাউন আর রুশদিরে একই দাড়িপাল্লায় মাপা হইতেছে? সাহিত্যের বিভিন্ন বাটখারা তাদের নিজেদের ওজন লইয়াই তো বহাল আছে নিজেদের ভার লইয়া। নাকি, ১০-১৫ বছর পর আনিসুল হকের আর ম্যাক্সিম গোর্কির মায়েরে একই বাটখারা দিয়া মাপাটা সহি আর সত্যি হইয়া রবে!
হুমায়ূনরে তুইলা ধরতে কতিপয় বিটিভিতে প্রচারিত ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে পাবলিক সেন্টিমেন্ট তুইলা ধরতে চান। তারা বলেন, ফিকশনাল একটা চরিত্রের প্রাণ বাঁচাইতে রাস্তায় জনতার মিছিল মহাকালে আর ঘটে নাই। বটে, এইটা তো নাট্যকার আর পরিচালক হুমায়ূন আহমেদের গড়িমা। সিনেমা ও টিভি নাটক সম্পর্কিত আমার ভাসা ভাসা জানা-শোনা-দেখা দিয়া কইতে পারি, হুমায়ূন আহমেদ এই বাংলায় জহির রায়হান পরবর্তী সেরা সিনেমার মানুষ। হুমায়ূনের সাহিত্যের উপর চাপ কমান, তার সিনেমা দেখেন। তো যেইটা বলতে চাইতেছি, বাকের ভাইয়ের ফাঁসি রদ করতে যেই অডিয়েন্স রাস্তায় মিছিল করছিল, তারা কেউ উপন্যাসের পাঠক নয়। তারা টিভি নাটকের অডিয়েন্স।
যে ধরনের সাহিত্যচিন্তা ও রাজনীতি খুঁজতে খুঁজতে আমি আজকে যেসব লেখকের ভোক্তা তার ভিতর হুমায়ূন আহমেদ নাই। তিনি একজন কিশোর সাহিত্যিকের মর্যাদা লইয়া আমার কাছে বাঁইচা থাকবেন। কিশোর সাহিত্য পড়া দরকার হয় না অনেকদিন, মনই চায় না। আমি, মামারা, স্মার্টনেসমুক্ত হবার পায়তাড়ায় আনস্মার্ট, খ্যাত পরিমণ্ডলে ঘুরাফিরা করি।
হুমায়ূন তৎকালীন কলকাতামুখী ঢাকার বাংলা সাহিত্য দুনিয়ায় বাংলাদেশের গদ্য সাহিত্যের একটা মেইনস্ট্রিম স্ট্যান্ডার্ড তৈরি কইরা দিছেন। সেইটা আমরা বিভিন্ন টেক্সটে খোদাই কইরা রাখবোনে। এর বেশি কিছুই না। যারা জাতীয় সাহিত্য করতে চাইতেছেন, তারা এই একটা জায়গা ছাড়া হুমায়ূনরে নিয়া আগাইতে চাইলেও পারবেন না, চ্যালেঞ্জ।
তারপর ধরেন, দুই দশক ধইরা স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন বাংলা ভাষার সাহিত্যিকরা যেই মহান ভাষা আন্দোলন চালায়া যাইতেছেন, তাতে ভাষা সৈনিকের মর্যাদার মাঠে হুমায়ূন আহমেদরে সেনাপতি বানায়া দেয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু সেইটা লাগবো না দুইটা কারণে। কারণ, তার সেইটা দরকার নাই। অপরটা হইল, কিশোর সাহিত্য বড়দের জন্য লিখা গেলেও বড়দের যুদ্ধে কিশোরদের ব্যবহার করা যায় না, লিগ্যালি।
লেখক: কবি ও গণমাধ্যমকর্মী