স্বাধীন খসরুর গদ্য ‘সুস্থ ধারার বাংলা সিনেমার জয় হোক’
প্রকাশিত : মার্চ ৩০, ২০২৪
দেশের বাইরে থাকার কারণে ‘পেয়ারার সুবাস’ থেকে বঞ্চিত ছিলাম। একটু দেরিতে হলেও ‘চরকি’র কল্যাণে ‘পেয়ারার সুবাস’ নেয়ার সুযোগ পেলাম। নুরুল আলম আতিকের সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’। তার সিনেমা নিয়ে রিভিউ বা লেখার যোগ্যতা আমার নেই। তার কাজের মধ্যে চতুর্থ মাত্রা, সাইকেলের ডানা ও চিঠি— আমার প্রথম দেখা। নুরুল আলম আতিকের সাথে আছে আমার কাজের ও আত্মিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
বন্ধুত্বটা রেখে কাজের সম্পর্কের কথাই বলি। আমরা একসাথে অসাধারণ কিছু কাজ করেছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ডুব সাঁতার, মনে মনে, চন্দ্রবিন্দু, অদৃশ্য মানব, ডেঙ্গুর দিনগুলিতে প্রেম ও টু-লেট। সবই আমার প্রোডাকশন Chaos7 এর প্রযোজনা। বিশেষ করে ‘চন্দ্রবিন্দু’ বাংলাদেশে আজীবন থাকবে একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হয়ে। লাইব্রেরি বা আর্কাইভে সংরক্ষণ করে রাখার মতো একটি কাজ এটি।
আমার দৃষ্টিতে নুরুল আলম আতিক এত মেধাবী একজন নির্মাতা যে, তার মেধার পরিধি আমার কাছে ভাবনার সীমানার ওপর প্রান্তে। তার কাজ আমাকে সব সময় ভাবায়, উদ্বেলিত করে, মগজে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করে। তার কাজগুলো অসাধারণ কাব্যিক। মনে হয় একজন শিল্পীর রং তুলিতে বিশাল ক্যানভাসে আঁকা জীবনের প্রতিবিম্ব বা প্রতিচ্ছবি।
সিনেমাটি উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত অভিনেতা আহমেদ রুবেলকে। আহমেদ রুবেল, নুরুল আলম আতিক আর আমি, রয়েছে আমাদের এই তিন দুষ্টু ত্রয়ীর অসংখ্য নির্ঘুম রাতের আড্ডার আচ্ছন্নতার রেশ।
এই সিনেমায় যারা অভিনয় করেছেন প্রত্যেকের সাথেই রয়েছে আমার পারস্পারিক সম্পর্ক এবং কাজের অভিজ্ঞতা। শুধুমাত্র নতুন দু`একজন ছাড়া। তারিক ভাইয়ের কথা কী বলবো! তিনি আমার কাছে একজন গুরুতুল্য অভিনেতা। মুন্সি দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। জয়া সব সময় তার কাজে বিচক্ষণ বুদ্ধিমত্তার স্বাক্ষর রেখেছেন। যারাই এই সিনেমাটি দেখবে পেয়ারা বেগমের সুবাসে আচ্ছন্ন থাকবে।
দিহানের অভিনয় আমার সব সময় ভালো লাগে। শুধু একসাথে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে নয়, একজন দর্শক হিসেবে বলছি। অসাধারণ একজন জাত অভিনেত্রী দিহান। দেখেছি আর মুগ্ধ হয়েছি, পেয়ারার সুবাসের সাথে তার অভিনয় মায়ার সুবাস ছড়িয়েছে। দিহানের দু’একটা দৃশ্য ছাড়া প্রায় সব কটি দৃশ্য অন্য কাউকে দিয়ে ডাবিং করানো হয়েছে। এরপরও বলবো, যিনি ডাবিং করেছেন ভালো করেছেন। পরিচিত কণ্ঠ তো তাই কানে লেগেছে।
সুষমা সরকার যথার্থ চরিত্র অনুযায়ী। ভালো লেগেছে। আর আহমেদ রুবেল আমার সব সময় ঈর্ষণীয় ভালোলাগা একজন অভিনেতা। পর্দায় তার কণ্ঠ, তার উপস্থিতি, সবসময় পর্দাকে আলোকিত করে, প্রাণ সঞ্চার করে। এখনো বিশ্বাস করি না তাকে আমরা হারিয়েছি। মনের মধ্যে বিশ্বাসটা ধরে রেখেছি বাংলাদেশের যাব, ফোন আসবে, সেই কণ্ঠে আবার শুনবো, স্বাধীন চলে আসেন..,আজকে রাতে আতিক আমি আর আপনি বসবো!
অন্যান্য যারা অভিনয় করেছেন, সবাই যথার্থ ভালো অভিনয় করেছেন। এই সিনেমার সবচেয়ে ভালো লাগা, সুন্দর দিকটা আমার কাছে, একটানা ঝুম বৃষ্টি ঝরছে তো ঝরছে। দৃষ্টিনন্দন এই বৃষ্টির আর ভাসা পানির চিত্রায়ণ। তার আগে আমি খুব কম বাংলা সিনেমায় এ ধরনের দৃষ্টিনন্দন বৃষ্টির চিত্রায়ণ দেখেছি।
সিনেমাটির প্রযোজনায় Alpha-i। সাধুবাদ জানাই শাহরিয়ার শাকিল ও রেদওয়ান রনিকে। ভালোলাগার সিনেমা, ভালোবাসার সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’। পুরো টিমকে সাধুবাদ, যথার্থ সম্মান। সুস্থ ধারার বাংলা সিনেমার জয় হোক। জয় বাংলা সিনেমা।
৩০ মার্চ ২০২৪ লন্ডন