স্বকৃত নোমান
স্বকৃত নোমানের গল্প ‘শুকলাল ডোম’
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৬, ২০২১
শুরুতেই আপনাদের জানিয়ে রাখি, বহুদিন ধরে একটি চরিত্র আমার মাথায় বসবাস করছে। এই চরিত্রের কথা আমি শুনেছিলাম সাংবাদিক জাহীদ রেজা নূরের কাছে। জাহীদ ভাইকে চেনেন তো? সেই জাহীদ রেজা নূর, যার বাবা সিরাজুদ্দীন হোসেনকে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার, রাজাকার ও আলবদরের পাণ্ডারা ঢাকার চামেলীবাগের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রায়ই ভাবি, জাহীদ ভাইর কাছ থেকে শোনা চরিত্রটি নিয়ে আমি লিখব। কিন্তু হয়ে ওঠে না। আজ বরং আপনাদের চরিত্রটি সম্পর্কে কিছু কথা জানিয়ে রাখি।
ধরা যাক তার নাম শুকলাল। পেশায় ডোম। আপনারা তো জানেন, ডোমেরা মূলত মৃতদেহ পরিচর্যা, ব্যবচ্ছেদ ও সেলাইয়ের কাজ করে। বর্ণপ্রথার কারণে এখনো সমাজে তারা অস্পৃশ্য হিসেবেই চিহ্নিত। বাংলাদেশে বাঙালি ও অবাঙালি, এই দু-ধরনের ডোম আছে। অবাঙালি ডোমদের ব্রিটিশ শাসনামলের মাঝামাঝিতে বিভিন্ন কাজের জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উড়িষ্যা, কুচবিহার, রাঁচি, মাদ্রাজ ও আসামের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা হয়। কেউ বলতে পারেন, মধ্যযুগে ডোমেরা দাক্ষিণাত্য থেকে বাংলায় এসেছে। তবে চর্যাপদে ডোম শব্দের উল্লেখ দেখে কেউ ভাবতে পারেন, ডোমেরা এই বাংলায় বসবাস শুরু করে আর্যদেরও আগে। হতেও পারে। ডোমদের যে একটা সময় চাঁড়াল বলা হতো, তা তো জানেন।
আপনারা নিশ্চয়ই কমলকুমার মজুমদারের অন্তর্জলীযাত্রা পড়েছেন। এই উপন্যাসে আমরা বৈজু চাঁড়ালের কথা পাই। আহা কী অসাধারণ এক উপন্যাস! শুরুটাই কী চমৎকার: ‘আলো ক্রমে আসিতেছে। এ নভোমণ্ডল মুক্তাফলের ছায়াবৎ হিম নীলাভ। আর অল্পকাল গত হইলে রক্তিমতা প্রভাব বিস্তার করিবে, পুনর্ব্বার আমরা, প্রাকৃতজনেরা, পুষ্পের উষ্ণতা চিহ্নিত হইব। ক্রমে আলো আসিতেছে...।’
শুকলাল ডোমের পূর্বপুরুষেরা হয়তো উত্তর প্রদেশ থেকে বা অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে, বা মধ্যপ্রদেশ থেকে, বা আসাম থেকে একদিন চারশো বছরের এই প্রাচীন নগরী ঢাকায় এসে বসতি পত্তন করেছিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। শুকলাল কখনো যুদ্ধ দেখেনি, মন্বন্তর দেখেনি, দাঙ্গা দেখেনি, কখনো মানুষের সারি সারি লাশ দেখেনি। সে কাজ করত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। মর্গে তো আর সারি সারি লাশ আসত না। কখনো একটি, কখনো দুটি, কখনো পাঁচটি লাশ আসত। সেসব লাশের শরীর ব্যবচ্ছেদ আর সেলাই করা ছিল তার কাজ।
সে মনে করতো পৃথিবীটা এমনই। পৃথিবীতে কেউ চিরকাল থাকতে পারে না, সবাইকে মরতে হয়। মৃত্যু স্বাভাবিক। কেউ বার্ধক্যজনিত কারণে মরে, কেউ অপঘাতে মরে। যারা অপঘাতে মরে তাদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য কাটাছেঁড়া করতে হয়। এটাও পৃথিবীর নিয়ম। তার পূর্বপুরুষেরা অপঘাতে মৃত মানুষদের লাশ কাটাছেঁড়া করেছে, সেও করে। তার কাছে এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়, খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। যেমন স্বাভাবিক আমাদের অফিস করা, হাটবাজার করা, ঘরগেরস্তি করা। আর সে তো তখন মাতাল থাকত। গলা অবধি চোলাই খেয়ে সে যখন কোনো লাশের গলা থেকে তলপেট পর্যন্ত চিরে ফেলত; স্টমাক, কিডনি, হার্ট, লাঞ্চ, লিভার বের করে আনতো, কিংবা মাথার খুলিটা আলাদা করে মগজগুলো বের করে আনতো, একবারও তার বুক কাঁপত না, হাত কাঁপত না। কখনো একটিবার মনে হতো না, একদিন তাকেও মরতে হবে। হয়তো বার্ধক্যজনিত কারণে কিংবা কোনো অপঘাতে।
হয়তো তার লাশও একদিন তার মতো কোনো ডোম এভাবে কাটাছেঁড়া করবে। সে কথা বলতো তার মাতৃভাষায়। ডোমাই ভাষা। কিন্তু জন্ম তো তার এই গানের দেশ, ভাবের দেশ বাংলাদেশে। লাশ কাটতে কাটতে সে গাইত বাংলা গান, ‘ও কী ও বন্ধু কাজল ভ্রমরারে/ কোনদিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে...।’
শুকলাল ডোমের তখন বয়স কত? এই ধরুন পঁয়ত্রিশ। চল্লিশও হতে পারে। তার বাবা-মা তো কোথাও তার জন্মতারিখ লিখে রাখেনি। তারা ডোম। তারা কি আর জন্ম-মৃত্যুর হিসাব রাখে! জন্মতারিখ লিখে রেখে কী হবে, তারা তো আর জন্মদিন পালন করে না। এসব তো বড়লোকদের ব্যাপার। ধরা যাক তার বয়স তখন চল্লিশ। শুরু হলো যুদ্ধ। পঁচিশে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী শুরু করল অপারেশন সার্চ লাইট। সেই গণহত্যার কথা কী আর লিখব, আপনারা তো সবই জানেন। আপনারা বাংলাদেশের মানুষ। এই দেশে সংঘটিত সেই বীভৎস্য হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস আপনাদের জানতে হয়েছে। আপনারা জানেন সেই কালরাত্রির ইতিহাস।
শুধু জানেন না সেই রাতে ঠিক কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এটা কি জানার কথা! কোনো গবেষকের পক্ষে কি গবেষণা করে বের করা সম্ভব! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আর পিলখানায় কত মানুষকে হত্যা করেছিল, হত্যাকারীরা তো লিখে রাখেনি। তারা তো মানুষ গুণে গুণে হত্যা করেনি। যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই মেরেছে। আমরা শুধু অনুমান করতে পারি, সে-রাতে ঢাকা শহরে পাকিস্তানি খুনিরা হত্যা করেছিল প্রায় এক লক্ষ মানুষ।
সাতাশে মার্চ দুপুর। শুকলাল ডোমের তখনো ঘুম ভাঙেনি। রাত এগারোটা পর্যন্ত চোলাই খেয়ে ঘুমিয়েছে সেই বারোটায়। একটা বালিশ কোলে নিয়ে এখনো ঘুমাচ্ছে। উঠতে ইচ্ছে করছে না। উঠে কী করবে, দুদিন ধরে তো হাসপাতালে যাচ্ছে না। কী করবে গিয়ে, কাজ তো নেই। সে শুনেছে, গোটা ঢাকা শহরটাই নাকি লাশকাটা ঘরের রূপ নিয়েছে। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। শুনে সে হেসেছে। যত্তসব আজগুবি কথা। এক রাতে কি এত মানুষ হত্যা করা যায়! হয়ত একশো, বা দুশো, বা বড়জোর পাঁচশো মানুষ হত্যা করা হয়েছে। অথচ মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে, লাশ নাকি হাজার হাজার। রক্তে নাকি লাল হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গার জল। তিলকে তাল বানিয়ে মানুষের কী যে সুখ!
বাইরে হঠাৎ বিপিন দাসের গলা শোনা যায়, ‘শুকলাল! এ শুকলাল! তো ঘর মে হ্যায় না? বাহির আ যা। দেখ কোন আয়া।’
শুকলাল উঠে বসে। আড়মোড়া ভেঙে হাই তোলে। গামছাটা গায়ে চড়িয়ে দাওয়ায় এসে দাঁড়ায়। দেখে, মাঝিরঘাটের আড়ৎদার হারেস উদ্দিন। সঙ্গে দুই সেপাই। গায়ে খাকি, পরনে বুট, মাথায় হেট, কাঁধে রাইফেল। শুকলাল একটু ঘাবড়ে যায়। হাসপাতালে যাচ্ছে না বলে সেপাইরা কি তাকে ধরে নিতে এল! সে হেসে বলল, ‘কেমন আছেন ভাইসাহাব? আচ্ছা হ্যায় তো?’
হারেস উদ্দিন বলে, ‘আচ্ছা আচ্ছা। জলদি রেডি হও মিয়া। কাজে যাওন লাগবো। স্যারেরা এসেছেন তোমাকে নিতে।’
শুকলাল জানতে চায় না কী কাজ। নিশ্চয়ই জরুরি কোনো কাজ। নইলে কি স্যারেরা আসতেন! গেঞ্জিটা গায়ে চড়িয়ে দ্রুত সে বের হয়। সেপাইরা তাকে নিয়ে যায় বুড়িগঙ্গার উত্তরের ঘাটে। সেখানে লাশের স্তূপ। শিশুর লাশ, কিশোর-কিশোরীর লাশ, তরুণ-তরুণীর লাশ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার লাশ। বিপিন দাসসহ আরো চার ডোমকেও আনা হয়েছে। এসব লাশ ঘাট থেকে সরিয়ে মাটিচাপা দিতে হবে। গর্ত খোঁড়া আছে। শুকলাল কি আর অমত করতে পারে? বলতে পারে, এ কাজ আমার পক্ষে সম্ভব নয়! বললে ধড়ে কি আর মুণ্ডু থাকবে!
ডোমেরা কাজ শুরু করে। শুকলালও। আঁকশি দিয়ে একটা একটা লাশ টেনে গর্তে ফেলতে থাকে। জীবনে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে এত লাশ দেখে শুকলালের অবাক লাগে। পাকিস্তানিরা এত এত মানুষ মারল, অথচ সে কিনা গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিল! লাশের পর লাশ দেখে তার বুকে কাঁপুনি ওঠে। আঁকশি দিয়ে লাশ টানতে গিয়ে হাতটা বারবার কেঁপে উঠছে। তার মনে পড়ে পট্টির অনন্ত দাসের কথা। খুব গল্পবাজ ছিল লোকটা। কত গল্প যে জানত! একদিন অনন্ত দাস বলেছিল কুরুক্ষেত্রের কথা। পাণ্ডব ও কৌরবের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল কুরুক্ষেত্রে। সেই যুদ্ধ ছিল ধর্মের জয় আর অধর্ম বিনাশের যুদ্ধ। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। কিন্তু এ কোন যুদ্ধ! কেন এই যুদ্ধ! কোন অপরাধে এত এত মানুষকে হত্যা করা হলো!
লাশ টানতে টানতে শুকলাম ঘেমে ওঠে। কপালে ঘাম, দুই গালে ঘাম, গলায় ঘাম, বুকে ঘাম, সারা শরীরে ঘাম। শুকলাল খিদার কথা ভুলে গেছে। কতক্ষণ পরপর সে বিড়ি টানে, অথচ এখন বিড়ির কথা ভুলে আছে। লাশ টানতে টানতে দিন ফুরিয়ে যায়। সূর্যটা চলে যায় অস্তাচলে। লাল গোলাকার সূর্য ক্রমে ডুবে যাচ্ছে।...অন্ধকার ক্রমে আসিতেছে।
শুকলালের হাতের কাঁপুনি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। নিজের প্রতি ভীষণ রাগ ওঠে। লাশ নিয়ে তার কারবার, জীবনে কত লাশ কাটাছেঁড়া করেছে, কখনো হাত কাঁপেনি, এখন তো কাটাছেঁড়া করছে না, আঁকশি দিয়ে টেনে টেনে শুধু গর্তে নামাচ্ছে, তবু তার হাতটা এভাবে কাঁপছে কেন!
এক নারীর লাশে আঁকশি বসিয়ে শুকলাল দিল জোরসে টান। লাশটা এল না, ফিরে এল আঁকশিটা। আঁকশির টানে পেটের চামড়াটা চিরে গেল বুক অবধি। বেরিয়ে এল ফুটফুটে এক শিশু। শুকলাল থমকে দাঁড়ায়। শিশুটার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। কী সুন্দর মুখ। কী সুন্দর হাত-পা! শুকলালের চোখের সামনে ভেসে ওঠে শিশু শ্রীকৃষ্ণের মুখ। যেন সাক্ষাৎ ভগবান মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে এসেছেন। একটু পরেই বসুদেব আসবেন। পুত্রকে গোপনে তুলে দেবেন যশোদার কোলে।
নাড়িসুদ্ধ শিশুটিকে পরম মমতায় কোলে তুলে নেয় শুকলাল। শিশুটি মৃত, অথচ মনে হচ্ছে জীবিত। মায়ের আদর পেয়ে যেন ঘুমাচ্ছে। কচি মুখটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে শুকলাল। ‘হা ভগবান’ বলে পশ্চিমে তাকায়। সূর্য ডুবে গেছে।...ক্রমে অন্ধকার আসিতেছে। বিহ্বল শুকলাল এবার তাকায় নারীটির মুখের দিকে। মুখটা হাঁ। মাথার কয়েক গাছি চুল ঢুকে আছে মুখের ভেতর। যুবতী। বিশ-একুশের বেশি হবে না বয়স। শুকলাল টের পায়, বুকের কাঁপুনিটা বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। বুকের ভেতরে যেন ট্রাকের ইঞ্জিন চলছে। তার পা দুটো কাঁপতে থাকে। থরথর করে। সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। চট করে বসে পড়ে। শিশুটি ছিটকে পড়ে যুবতীর বুকের কাছে।
গামছায় মুখ মুছে শুকলাল উঠে দাঁড়ায়। কম্পিত হাতে শিশুটিকে ঠেলে ঢুকিয়ে দেয় যুবতীর পেটে। গামছা দিয়ে পেটটা শক্ত করে বেঁধে লাশটা তুলে নেয় কোলে। হাঁটা ধরে গর্তের দিকে। খুঁড়ে রাখা অসংখ্য গর্তের একটাতে লাশটা নামায়। মাটি ভরাট করে কবরের রূপ দেয়। কবরের সিথানে সে উবু হয়ে বসে। অন্ধকার হয়ে ওঠে গাঢ়। শোনা যায় শকুনের ডানা ঝাপটানির শব্দ। টের পাওয়া যায় শেয়ালের আনাগোনা। হাত দুটো জোড় করে কবরের মাটিতে মাথাটা ঠেকায় শুকলাল। বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে, ‘ভগবান!’
সারা রাত শুকলাল কোথায় ছিল, কে জানে। পরদিন সকালে বিপিন দাস এসে দেখে, দু-হাতে আঁকশিটা ধরে সে বসে আছে ঘাটের পাকুড়তলায়। বিপিন তাকে ডাক দেয়, জলদি কাজ শুরু করার তাগাদা দেয়। সন্ধ্যার আগে সব লাশ গর্তে নামিয়ে মাটিচাপা দিতে হবে। নইলে সেপাইরা গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেবে।
আঁকশি হাতে শুকলাল উঠে দাঁড়াল। সঙ্গীদের সঙ্গে লাশের স্তুপের কাছে গেল। সঙ্গীরা শুরু করল কাজ। গতকালের মতো। একটা একটা করে লাশ আঁকশিতে টেনে গর্তে ফেলতে থাকে। শুকলাল দাঁড়িয়ে থাকে। চোখেমুখে উদভ্রান্তি। এদিক-তাকায়, ওদিক তাকায়। হঠাৎ হেসে ওঠে। হা হা করে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে কেঁদে ওঠে। হহু করে কাঁদতে থাকে। কান্নার মধ্যেই আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। হাসি থামিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলে। সঙ্গীরা কিছুই বুঝতে পারে না। তারা ভাবে, শুকলাল হয়ত চোলাই বেশি খেয়ে ফেলেছে।
দুপুর গড়িয়ে যায়। শুকলাল দাঁড়িয়ে থাকে। বিকেলও গড়িয়ে যায়। সূর্য আবার চলে যায় অস্তাচলে।...আর অল্পকাল গত হইলে আকাশে জাগিয়া উঠিবে রক্তিম আবির। সব লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়ে গেছে। অস্তাচলের দিকে মুখ করে শুকলাল আগের মতোই দাঁড়িয়ে থাকে। হাসে, কাঁদে আর কীসব বলে যায় বিড়বিড় করে।
এবার বলুন, এই শুকলাল চরিত্র নিয়ে কি কোনো গল্প লেখা যায়? আমি বহুবার চেষ্টা করেছি। পারিনি। লিখতে বসলেই বুকটা কেমন ভারী হয়ে ওঠে। একটা পাথর যেন চেপে বসে বুকের ওপর। দু-চোখের কোণে বয়ে যেতে চায় বুড়িগঙ্গার স্রোত। আমি কোনোদিন হয়ত শুকলালকে নিয়ে লিখতে পারব না। কোনোদিন না। শুকলাল তার আঁকশি হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে আমার মাথায়। আমৃত্যু।