স্বকৃত নোমানের গদ্য ‘বইমেলা হাইজ্যাক হয়ে গেছে’
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
আর কোন মেলার কথা বলছেন? একুশে বইমেলা? ওটা অনেক আগেই হাইজাক হয়ে গেছে। এই মেলা এখন কবিদের নেই, গল্পকারদের নেই, ঔপন্যাসিকদের নেই, নাট্যকারদের নেই। এই মেলা এখন সেলিব্রেটিদের। চুরি-চামারি-ছিনতাই-রাহাজানি-দুর্নীতি-খুন-ধর্ষণ-সাম্প্রদায়িকতা-ভাঁড়ামি-টিকটক— যেভাবেই হোক আপনি সেলিব্রেটি হয়ে যান। ব্যস, আপনি বইমেলায় হিট। তথাকথিত প্রকাশকরা আপনাকেই প্রমোট করবে। ফেসবুকে, ইউটিইউবে, অনলাইন পোর্টালে, খবরের কাগজ আর টেলিভিশনে আপনার বই নিয়েই হইচই হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার শত শত ক্যামেরা আপনার দিকেই তাক করা থাকবে। আপনার মুখের সামনে থেকে সাংবাদিকের বুম কখনোই নামবে না। কারণ তাদের চাই ভিউ, তাদের চাই লাইক, তাদের চাই কমেন্ট।
সুতরাং এই মেলা এখন কেবল সাহিত্যের মেলা নয়, কেবল জ্ঞান ও সৃজনশীলতার মেলা নয়; এই মেলা এখন একটি বারোয়ারি মেলা। বারোয়ারি মেলায় বারোয়ারি লোকজনই আসবে। আসাটাই স্বাভাবিক। কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবিন্ধক, গল্পকার, নাট্যকার যেমন আসবে, তেমনি আসবে অপ্রাপ্তমনষ্ক মানুষেরাও। আসবে উটকো লোকজনও।
সব মেলায় (যেমন বৈশাখী মেলা, চৈত্রসংক্রান্তির মেলা কিংবা পৌষ মেলা) অপ্রাপ্তমনষ্ক দর্শনার্থীরা হইহাঙ্গামা করে, চাঁদাবাজি করে, মারামারিও করে। কারণ তাদের মগজ শূন্য, তাদের বুদ্ধি হাঁটুর নিচে, তাদের কাণ্ডজ্ঞানের ঘড়া খালি। তারা মেলায় মব সৃষ্টি করে, আধিপত্য তৈরি করে। আপনি তাদের কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশা করতে পারেন না। আপনি তাদের কাছ থেকে সভ্যতা, ভব্যতা, পরমতসহিষ্ণুতা কিংবা উদরতা আশা করতে পারেন না।
তাহলে? তাহলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী? উপায় একটাই— প্রকাশকদের শিক্ষিত হওয়া। কোনটা সাহিত্য আর কোনটা সাহিত্য নয়, সেটা বোঝা। কোনটা সৃজনশীল বই, কোনটা মননশীল বই আর কোনটা সৃজনশীল-মননশীল কোনো বর্গেই পড়ে না, সেটা বোঝা। যতদিন পর্যন্ত না আমাদের প্রকাশকরা শিক্ষিত হবেন, ততদিন পর্যন্ত একুশে বইমেলা বারোয়ারি মেলাই থাকবে। সত্যিকারের সাহিত্য ও সাহিত্যিকরা এখানে উপেক্ষিতই থাকবে।
শত জ্যোৎস্নার মাধুরী
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪