তুহিন খান
সুরা বালাদের তুহিন খানকৃত অনুবাদ ‘শহর’
প্রকাশিত : জুলাই ২৯, ২০২২
কসম এই শহরের,
—এ যমিনে আপনি স্বাধীন—;
কসম বাবা ও তার আওলাদদের!
বেদনা ও কষ্টের ভার
দিয়াই তো আমি তৈয়ার
করছি মানুশেরে। কী ভাবছে সে,
তারচেয়ে ক্ষমতাবান আর কেউ নাই?
`কত টাকা-পয়সাই
তো উড়াইলাম!`— সে কয়।
তার কী মনে হয়—
কেউ তারে দেখে না?
তারে কি আমি দিই নাই
দুইটি নয়ান?
একটা জিহবা আর
ঠোঁট দুইখান?
দেখাই নাই কি তারে
দু`রকম পথ?
তবু তো সে বাইল না
খাঁড়া গিরিপথ!
আপনি কি জানেন, হে নবি—
সেই পথ কী?
কারো গর্দান বাঁচানো (দাসমুক্তি);
আকালের কালে
এতিম স্বজন কিংবা
মলিন মিসকিনটারে খাওয়ানো।
আর—
সে হবে তাদের একজন
যারা ঈমানদার;
যাদের পারস্পরিক নসিহত
হবে সবর ও রহমত।
ওরাই তো ডানের জামাত!
যারা মানবে না আমার আয়াত,
তারা থাকবে বামে—
বদ্ধ আগুনে, জাহান্নামে!
নোট:
১. অনুবাদটা প্রথম করা হইছে গদ্য ফরম্যাটেই। দেন হিডেন অনুপ্রাসগুলা খুঁইজা খুঁইজা স্রেফ লাইনগুলা ভাইঙা দিছি। তাতে সুন্দর একটা রূপ দাঁড়াইছে তরজমাটার, মনে হয়। রাইমটা অবশ্য এমন রাখছি, যেন গদ্য আকারেও পড়া যায়। কারণ আমার রিডিংয়ে, কোরআনের রাইম মূলত ফ্রি ভার্স। শুরুর দিকে মক্কায় নাযিল হওয়া ছোট ছোট সূরাগুলায় এই রাইমটা বেশ জোরালো; এবং মক্কি সুরা হিশাবে সুরা বালাদেও এই রাইমটা আছে।
২. কারো গর্দান বাঁচানোর فك رقبة তরজমাটা করার কয়েকটা কারণ আছে। প্রথমত, ফাক্কু রাকাবার শাব্দিক অর্থ এইটাই, কারো গর্দান বাঁচানো। আরবিতে এই ফ্রেজটা দাসমুক্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয়ত, মুফাসসিরদের মধ্যে কেউ কেউ, যেমন— আল বাগাভি (মৃ. ৫১৬ হি.), আত তাবরিসি (মৃ. ৫৪৮ হি.) ও ফখরুদ্দিন রাযি (মৃ. ৬০৬ হি.), এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলছেন যে, এর আরেকটা অর্থ হইল, এবাদত ও তাওবার মাধ্যমে খোদারে তুষ্ট করে জাহান্নাম থেকে নিজের গর্দান বাঁচানো এবং জান্নাত পাওয়া। মানুশ তো আশলে আজন্ম দাস, জান্নাতই হইল তার অ্যাবসল্যুট ফ্রিডম। এই বিকল্প ব্যাখ্যা, ফাক্কু রাকাবার শাব্দিক অর্থ আর তরজমার ছন্দের দিকটা মাথায় রাইখা, কারো গর্দান বাঁচানো অর্থ করা হইছে।