সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন ঘোষের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৯, ২০২৪

সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন ঘোষের আজ মৃত্যুদিন। ১৯১০ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি মারা যান। ১৮৪৩ সালের ২৩ জুলাই ঢাকা বিভাগের বিক্রমপুরের ভরাকর গ্রামে তার জন্ম। তার পিতার নাম শিবনাথ ঘোষ।

কালীপ্রসন্ন ঘোষ মক্তব, চতুষ্পাঠী ও ইংরেজি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে তিনি এন্ট্রান্স পাস করেন। বাল্যকালেই তিনি সংস্কৃত, ফারসি ও বাংলা ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরে ইংরেজি ভাষাও আয়ত্ত করেন।

বাল্যকাল থেকেই তিনি বাগ্মিতার পরিচয় দেন। মাত্র বিশ বছর তখন তিনি কলকাতার ভবানীপুরে খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ মনীষীর প্রশংসা অর্জন করেন। এরপর থেকেই ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে তার যোগসূত্র স্থাপিত হয় এবং পরবর্তীতে তিনি ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করেন।

তিনি ছিলেন পূর্ববঙ্গীয় ব্রাহ্মসমাজের একজন বিশিষ্ট সভ্য। তিনি তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত ‘ঢাকা শুভসাধিনী সভার’ মুখপত্র ‘শুভসাধিনী’ সম্পাদনার মাধ্যমে। এ সাপ্তাহিক পত্রিকাটি তিনি প্রকাশ করেছিলেন ঢাকার ব্রাহ্মযুবকদের জন্য। চার বছর পর ১৮৭৪ সালে তিনি সম্পাদনা করেন সেই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকা ‘বান্ধব’।

বাইশ বছর বয়সে ১৮৬৫ সালে ঢাকার নিম্ন আদালতে পেশকার হিসেবে কালীপ্রসন্ন ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয়। এখানে এগারো বছর চাকরি করার তিনি ভাওয়াল এস্টেটের প্রধান দেওয়ান হিসেবে যোগ দেন এবং তিনি ভাওয়ালের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন।

সেখানে তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর যুক্ত ছিলেন। এ সময় তিনি ‘সাহিত্য-সমালোচনী সভা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। কালীপ্রসন্ন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর সদস্য (১৮৯৪) এবং সহ-সভাপতির (১৮৯৭-১৯০০) পদ অলঙ্কৃত করেন। এছাড়াও তিনি সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের সদস্য এবং সদর লোকাল বোর্ডের সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

কালীপ্রসন্ন মূলত দর্শন ও সমাজ সম্পর্কে লিখতেন। তার লেখা প্রবন্ধ হচ্ছে, প্রভাত-চিন্তা (১৮৭৭), নিভৃত-চিন্তা (১৮৮৩), নারীজাতিবিষয়ক প্রস্তাব (১৮৯৬) ও নিশীথ-চিন্তা (১৮৯৬)।

তার লেখা বইগুলো হচ্ছে, ভ্রান্তিবিনোদ (১৮৮১), প্রমোদলহরী (১৮৯৫), ভক্তির জয় (১৮৯৫), মা না মহাশক্তি (১৯০৫), জানকীর অগ্নিপরীক্ষা (১৯০৫), ছায়াদর্শন (১৯০৫) প্রভৃতি।

এছাড়া সঙ্গীতমঞ্জরী (১৮৭২) নামে একটি আধ্যাত্মিক সঙ্গীতসংগ্রহ এবং কোমল কবিতা (১৮৮৮) নামে একটি শিশুপাঠ্য গ্রন্থও তিনি রচনা করেন।

কালীপ্রসন্নের রচনারীতি বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র এবং ইংরেজ পণ্ডিত কার্লাইলের দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত। তার রচনাসমূহ ভাবগাম্ভীর্য, ইতিহাসচেতনা ও গভীর জীবনবোধেপূর্ণ।

ইংরেজ সরকার তাকে পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৯৭ সালে রায়বাহাদুর এবং ১৯০৯ সালে সিআইই উপাধি প্রদান করে। বাংলার পণ্ডিতরা তাকে বিদ্যাসাগর উপাধিতে অভিষিক্ত করেন।