সাম্প্রদায়িক শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার ও তার রাজনীতি

পর্ব ৩

রাহমান চৌধুরী

প্রকাশিত : অক্টোবর ২২, ২০২০

ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখলের পর প্রথম চিন্তা করেছিল ভারতে তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে হলে প্রথম কাজ ভারতীয়দের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা। ভারতের সংস্কৃতিতে এবং শাসন ব্যবস্থায় প্রভাবশীল বিরাট দুই জনগোষ্ঠী হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে সেরকম বিভেদ টানার জন্য ভারতের পূর্বের ইতিহাসকে বিকৃত করা আরম্ভ করলো তারা। ব্রিটিশরা এরকম করার সুযোগ পেয়েছিল তার প্রধান কারণ ইতিপূর্বে ভারতীয়দের তেমন লিখিত ইতিহাস ছিল না। সুপ্রকাশ রায় জানাচ্ছেন, ‘প্রাচীন ভারতের ঋষিগণ কোন ইতিহাস রচনা করেন নাই। ইতিহাসের উপাদান লইয়া তাঁহারা রামায়ণ-মহাভারত এবং আরো বহু পুরাণ রচনা করিয়াছেন। ভারতবর্ষে ইতিহাস রচনা আরম্ভ হয় মুসলমান-যুগ হইতে। মুসলমান ঐতিহাসিকগণের রচিত বহু গ্রন্থে জনসাধারণের ইতিহাসের বহু উপাদান থাকিলেও তাহা প্রাধান্য লাভ করে নাই। আর ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীভুক্ত সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকগণ ভারতবর্ষের ইতিহাস কাঠামো এবং ভিত্তি পর্যন্ত পাল্টাইয়া দিয়া তাঁহাদের রচিত ইতিহাসকে বৃটিশ শাসনের জয়গানে মুখরিত করিয়া তুলিয়াছেন।’ ইংরেজরা প্রথম ধারাবাহিক ইতিহাস লিখতে শুরু করেন নিজেদের সুদূর লক্ষ্য মাথায় রেখে। হিন্দু মুসলমান বিরোধ সৃষ্টির জন্য তাদের ইতিহাস রচনার প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ালো এটা প্রমাণ করা, হিন্দুদের শাসনে ভারতে ছিল স্বর্ণযুগ। মুসলিমদের শাসন ছিল প্রধানত হিন্দুর উপরে অত্যাচারের যুগ, মন্দির ভাঙার আর জোর করে হিন্দু রমণীকে বিয়ে করার যুগ। মুসলিমরা তাদের শাসনে হেন মন্দ কাজ নেই যা করেনি কিন্তু মহৎ কাজ  নৈব নৈব চ, মানে একটাও না। প্রথমে ইংরেজরা বহু বহু মন্দির ভাঙ্গার কথা প্রচার করেছে, ইটনের ইতিহাসে শেষে সেটা আশিটায় এসে দাঁড়িয়েছে। গান্ধীবাদী শৈলেশকুমার দেখান যে, ইটনের এসব পাথুরে প্রমাণ এক ধরনের অতিকথন, তাকে সত্য ইতিহাস বলা যায় না। তিনি এটাও জানান, ‘ঠিক কতগুলি মন্দির মুসলিম শাসন কাল পরিধিতে ধ্বংস বা অপবিত্র করা হয়? রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদীদের শিবিরভুক্ত তত্ত্ববেত্তাদের মতে কয়েক লক্ষ।’ ইটনের আশিটি পুনরায় তাহলে কয়েক লক্ষে গিয়ে পৌঁছে গেছে।

মুসলমানদের দ্বারা যে মন্দির একেবারে ভাঙ্গা হয়নি তা নয়। মন্দির ভাঙা হয়েছে মুসলমানদের দ্বারা আবার হিন্দুদের দ্বারাও। কলহনের রাজতরঙ্গিনীতে হিন্দুদের দ্বারা মন্দির ভাঙ্গার কথা বলা আছে। রমিলা থাপার, হরবনস মুখিয়া, রামশরণ শর্মা প্রমুখ দেখাচ্ছেন, প্রাচীন যুগে রাজাদের মন্দির ভাঙ্গার কারণ ছিল মন্দিরগুলির ভিতরে রাজাদের বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র চলতো। ঠিক আবার আওরঙ্গজেব ভেঙেছেন মসজিদ। কারণগুলি ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক। প্রাচীন যুগে বা মধ্যযুগের শুরুতে বহু সময় হিন্দু শাসকরা নিজেদের বিভিন্ন বিজয়ের স্তম্ভ হিসেবে ‘মন্দির’ নির্মাণ করতেন। যখন ভিন্ন কোনো হিন্দু শাসক সেই রাজাকে পরাস্ত করতো তখন তার পরাজয়ের নিদর্শন হিসেবে মন্দিরটি ভেঙে বা গুড়িয়ে দিতো। প্রাক-মুসলিম সময়ের সংস্কৃতি এটা। শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিতাভ চক্রবর্তী, অঞ্জন গোস্বামী প্রমুখ দেখাচ্ছেন যে, প্রাক-ইসলামী যুগে সম উদ্দেশ্যে শাসকগণ কর্তৃক মন্দির ভঙ্গ বা লুণ্ঠন করার উদাহরণ আছে। ‘গণতন্ত্রী ভারতে হিন্দু মুসলমান’ গ্রন্থে শৈলেশকুমার নিকট অতীত সম্পর্কে লিখছেন, ‘ইটন উল্লেখ না করলেও আমাদের এই সুবে বাংলায় বছরের পর বছর হিন্দু মারাঠা বর্গীরা মূল্যবান ধাতু এবং ধনরত্নের লোভে হিন্দু মন্দিরের বিগ্রহ লুট করতো এবং ধ্বংস করতো। এই প্রসঙ্গে বর্গীরা হিন্দু হয়েও হিন্দুদের উপর লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে যে অকথ্য অত্যাচার করতো তার কথা বিশেষ রূপে উল্লেখ্য।’ মারাঠাদের অত্যাচার দমন করেছিলেন আলীবর্দী আর তাঁর সহযোগী হিসেবে সিরাজদৌলা। ইংরেজদের চোখে সেই সিরাজদৌলা ছিল মদ্যপ আর কামুক। সিরাজদৌলা যিনি বেঁচে ছিলেন মাত্র চব্বিশ বছর, বাংলার নবাব ছিলেন চোদ্দ মাস। সিরাজদৌলা চোদ্দ বছর বয়সে নানার সঙ্গে বর্গীদের হামলা ঠেকাতে যুদ্ধের মাঠে ছিলেন, ইংরেজদের ইতিহাসে তিনি নাকি ছিলেন চরমভোগী। নারী সম্ভোগ করেই নাকি জীবন পার করেছেন। বারবার বর্গীদের হামলার বিরুদ্ধে যাকে লড়তে হয়, মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে যিনি প্রাণ দেন, তিনি ভোগবিলাস করার সময় পেয়েছিলেন কি? মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে যে বালককে বর্গীদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে সাহসের সঙ্গে, তাঁর সম্পর্কে ইংরেজদের ইতিহাসে একটি প্রশংসা বাক্য পর্যন্ত নেই। ইংরেজদের বিচারে মুসলমানরা হিন্দুদের উপর শুধু অত্যাচার করেছে, তা ছাড়া আর ইতিবাচক কোনো কথা নেই। ফলে আলীবর্দী আর সিরাজদৌলার মতো মুসলমান শাসকরা তাদের রায়ে শুধুই হিন্দু বিদ্বেষী। প্রশ্ন দাঁড়ায়, তাহলে মুসলমানদের এতো হিন্দু বিদ্বেষের ভিতরে জগৎ শেঠ আর উমি চাঁদদের মতো লোকরা বাংলার শ্রেষ্ঠ ধনী হলো কী করে? বহুজনের জানাই নেই, জগৎ শেঠ ছিলেন তখন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনীদের একজন। বছরের পর বছর মুসলিম শাসনে জগৎ শেঠ আর উমিচাঁদরা হলেন সবচেয়ে ধনী, তবুও মুসলমানরা হিন্দুদের প্রতি অত্যাচারী!

ইংরেজ শাসকরা হিন্দুদেরকে মুসলমানদের থেকে পৃথক করে ফেলেছে তাদের বিবৃত ইতিহাসের ভিতর দিয়ে। ব্রিটিশরা যাকে পণ্ডিত মনে করেন সেই জেমস মিল ‘হিস্টরি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ লিখে হিন্দু মুসলমানকে আলাদা করে দিলেন সুকৌশলে। ইতিহাস রচনার মধ্য দিয়ে তিনি সাম্প্রদায়িকতার ধারণা প্রচার করেছিলেন। মিল ভারতের ইতিহাসের দীর্ঘ কালপর্বকে ভাগ করতে গিয়ে প্রাচীন যুগকে বললেন ‘হিন্দু যুগ’, মধ্যযুগকে বললেন ‘মুসলিম যুগ’। ভিন্ন দিকে ব্রিটিশ শাসনকালকে ‘খ্রিস্টান যুগ’ আখ্যা না দিয়ে বললেন ‘আধুনিক যুগ’। চালাকিটা যে কেউ লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন। সত্যিকার অর্থে ‘হিন্দু যুগ’ বা ‘হিন্দু ধর্ম’ বলে ভারতে কিছু নেই। হিন্দু বলতে বুঝায় সিন্ধুর পারে বসবাসকারী মানুষ, মানে ভারতের পুরো জনগোষ্ঠীকে পারসিক আর গ্রীকরা বলতো হিন্দু। পারসিক আর গ্রীকরা ‘স’ উচ্চারণ করতে পারতো না ‘স’ কে ‘হ’ বলতো। ফলে সিন্ধু হয়ে গেল তাদের কাছে হিন্দু। আর সিন্ধুর অপর পারে যারা বাস করে সকলেই হিন্দু বা হিন্দু জনগোষ্ঠী। আর ভারতীয়রা ভিন্নদিকে গ্রীক আর পারস্যবাসীকে বলতো ম্লেচ্ছ বা যবন। কথাটার মানে হলো বিদেশী। ব্যাপারটা হলো এই যে, পারস্য আর গ্রীকদের কাছে ভারতীয় মাত্রই ছিল হিন্দু আর ভারতীয়দের কাছে পারস্য আর গ্রীকরা ছিল যবন বা ম্লেচ্ছ। ফলে ভারতের সকল ধর্মের লোকরাই জনগোষ্ঠী হিসেবে গ্রীক আর পারস্যদের কাছে হিন্দু ছিল। মুঘলরা সেজন্য ভারতকে বলতো হিন্দুস্তান, মানে যেখানে হিন্দুরা বসবাস করে। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু বলতে ভারতে বসবাসকারী সকল জনগণকে বোঝাতো, সেখানে ইংরেজদের সময়ে হিন্দু হয়ে গেল একটা ধর্মের নাম। যা দীর্ঘদিন পরিচিত ছিল বৈদিক বা ব্রাহ্মণ্যধর্ম বলে, হঠাৎ সেটা হয়ে গেল ‘হিন্দু ধর্ম’।

ইংরেজদের ইতিহাস বিভাজনে মুসলমানদের যেহেতু একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে দেখা হয়, সেই মুসলমানদের যদি একটা ‘মুসলিম যুগ’ থাকে তাহলে বৈদিকদের যুগ বা ব্রাহ্মণদের একটা যুগ থাকবে না তা হতে পারে না। কিন্তু বৈদিক যুগ ছিল না, ইংরেজরা বৈদিক যুগ বলে কিছু লেখেনি। কারণ তখন বৈদিকরা যেমন শাসন করেছেন, তেমনি বৌদ্ধ আর আরো অনেকে শাসন করেছেন। ফলে ইংরেজ শাসনে যাঁরা মুসলমান নন, কিছুটা হীনমন্যতায় পড়ে গেল। ইংরেজরা বিভিন্ন লেখালেখি আর নানাভাবে বুঝিয়ে দিল মুসলমানদের আগের যুগটাই ‘হিন্দু যুগ’। ফলে হিন্দু যুগটাই ‘হিন্দু ধর্ম’ হয়ে দাঁড়ালো ইতিহাসকে বিকৃত করে। ইংরেজরা আরো বললো, সেই হিন্দু যুগটাই ছিল সবচেয়ে আলোচিত। বৈদিক, জৈন আর বৌদ্ধরা হলো সে আলোকিত যুগের শাসক আর মুসলমানরা এসে সে আলোকিত যুগটার বিরুদ্ধে নিজেদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রাচীন যুগে যেহেতু সবচেয়ে বেশি আধিপত্য ছিল ব্রাহ্মণদের, আর ভারতে ইংরেজ শাসনে সামাজিক জীবনে সেভাবে বৌদ্ধ আর জৈনদের প্রভাব ছিল না, খুব সহজে বৈদিকরা বা ব্রাহ্মণরা বৌদ্ধদের আর জৈনদের নিজ ধর্মের আঙ্গিনায় টেনে নিয়ে গেল। সবগুলি ধর্মকে তাঁরা সনাতন ধর্মের আঙ্গিনায় টেনে নিয়ে ইংরেজদের দেয়া হিন্দু যুগকে তাঁরা ব্রাহ্মণদের বা বৈদিকদের যুগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলো ভিন্নভাবে। হিন্দুস্থান সকলের না হয়ে হয়ে গেল বৈদিক ধর্মের লোকদের। ইংরেজদের বিচারে প্রাচীন যুগ যেহেতু ‘হিন্দু যুগ’ ফলে প্রাচীন যুগের সকল ধর্ম কিছুদিনের মধ্যেই হয়ে গেল ‘হিন্দুধর্ম’। মুঘলরা যে নিজেদের হিন্দুস্থানের বাদশা বা বাসিন্দা বলে পরিচয় দিতেন, সে প্রসঙ্গটা সম্পূর্ণ হারিয়ে গেল। হিন্দুস্থান নামটা ইংরেজদের দ্বারা চিহ্নিত হয়ে গেল শুধুমাত্র ইন্ডিয়া হিসেবে, সকল মুসলমানরা সেখানে বিদেশী আর হিন্দুরা সকলে আদি অধিবাসী।

ইংরেজদের রচিত ইতিহাসে প্রচার করা হলো, বিদেশী মুসলমানরা ভারত জয় করেছে এবং ভারতের ‘হিন্দুধর্ম’ বা হিন্দু জনগণের উপর হামলা করে তাদের ধর্মান্তরিত করে মুসলমান বানিয়েছে। মুসলমানরা ভারত জয় করতে গিয়ে রক্তপাত ঘটিয়েছে। প্রশ্ন হলো, রক্তপাত না ঘটিয়ে কবে কে কোন দেশ জয় করেছে? ভারতে বৈদিক ধর্মের প্রবর্তক বিরাট জনগোষ্ঠী আর্যরা কি বিদেশী নয়? যখন তারা ভারত জয় করে তখন কি তারা রক্তপাত ঘটায়নি? সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোর মতো সভ্যতা ধ্বংস করে দেয়নি নতুন আগত আর্যরা? পরবর্তীকালে আর্যরা সম্পূর্ণভাবে বিরাট ভারত জয় করেছে কি বিনা রক্তপাতে? ভারতের ইতিহাসে যাঁকে খুব মহান করে দেখানো হয়, সেই অশোকের সময়ে কলিঙ্গ জয় করার যুদ্ধে কতো লক্ষ লোককে হত্যা করা হয়েছিল? কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে সারা ভারত জড়িয়ে পড়েছিল, কতো মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল সে যুদ্ধে? রক্তপাত ছাড়া বিজয় লাভ কবে হয়েছে? মহাকাব্য ‘রামায়ণ’-এর মূল গল্পটা কী? ভিন্ন একটি দেশ রাম নিজের নিজের দখলে নেয় ছলে বলে কৌশলে রক্তপাতের মধ্য দিয়ে। পুরো একটা রাজবংশকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। মহাভারতে দেখা যাবে শ্রীকৃষ্ণ পক্ষ বা পাণ্ডবদের দ্বারা কতো রাজবংশকে ধ্বংস করা হয়েছে, সেখানে কি রক্তপাত ছিল না? বহুজন বলবেন, ‘মহাভারত’ আর ‘রামায়ণ’ মহাকাব্য; ইতিহাস নয়। ভারতে রচিত মহাকাব্য দুটি কি তার সমাজের চিত্র নয়? মহাকাব্য আর রামায়ণকে ইতিহাসের উপাদান হিসেবেই বিবেচনা করা হয়, সকল ইতিহাসবিদরা এ ব্যাপারে একমত। ভারতবর্ষে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাতে যে জৈন আর বৌদ্ধদের রক্তপাত ঘটেছে সেটা কি মিথ্যা? হ্যানিবল, জুলিয়াস সীজার, কি রক্তপাত ছাড়া যুদ্ধে জয়লাভ করেছে? খ্রিস্টানদের পবিত্র রোমান সামাজ্য কি বিনা রক্তপাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? নাকি শুধু ভারতে মুসলমানরাই রক্তপাত ঘটিয়ে বিজয় লাভ করেছিল? বাকি বিজয়গুলি কি ছিল রক্তপাতহীন?

নিশ্চয় সেটা একটা যুগের ব্যাপার, যখন যার ক্ষমতা ছিল রক্তপাত ঘটিয়ে অন্যের দেশ দখল করেছে। মুসলমানরা রক্তপাত ঘটিয়ে ভারত জয় করেছে, তাহলে খণ্ডিতভাবে এরকম প্রচারের পিছনে উদ্দেশ্য কি? মুসলমানদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ তারা ভারতীয়দের ধর্মান্তরিত করেছে। ইতিহাসে এখন প্রমাণিত যে, মুসলমানরা জোর করে মানুষকে ধর্মান্তরিত করেনি। কিন্তু মুসলমানরা ধর্মান্তরিত করেছে এ অভিযোগ মেনে নিলেও, দেখা যাক ভারতবর্ষের কতো শতাংশ লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে? খুব বেশি হলে এক চতুর্থাংশ। কিন্তু বৈদিক আর্যদের সময়ে কী ঘটেছে পাশাপাশি সে চিত্রটা লক্ষ্য করা যাক। ভারতের নব্বই শতাংশ মানুষ বৈদিক ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। স্মরণ রাখতে হবে কথাটা, নিজেদের ইচ্ছায় নয়, বাধ্য হয়েছিল। যদি ধর্মান্তরিত করার সঙ্গে অত্যাচারের প্রশ্ন জড়িত থাকে তাহলে, বৈদিকরা কি অত্যাচার না করেই ধর্মান্তরিত করেছিল? মুসলিমদের শাসনে দেখা যায়, নিম্নবর্গের মানুষরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ধনী বা সুবিধাভোগীরা নয়। কিন্তু বৈদিক ধর্মের বেলায় সে কথাটাও খাটে না। শাসক-শাসিত সকলকে তারা নির্বিচারে বৈদিক ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করে। বরং বহিরাগত আর্যদের শাসনে মানুষকে বৈদিক ধর্মগ্রহণ করতে বাধ্য করাবার পদ্ধতিটা ছিল আরো বেশি অত্যাচারমূলক। যখন যে অঞ্চল জয় করেছে আর্য-শাসকরা, চতুর্বর্ণের বিধান দিয়ে এবং কাউকে সামান্য আপত্তি তুলবার সুযোগ না দিয়ে বলে দেয়া হলো, ‘বিজিত রাজ্যের সকলেই বৈদিক ধর্মের চতুর্বণের অধীন। ধর্মটা প্রথম সবার উপরে চাপিয়ে দিয়ে শাসকরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা কোন বর্ণে স্থান পাবে। ধর্ম গ্রহণে বা কোনো বর্ণে স্থান লাভ করার ব্যাপারে ব্যক্তির স্বাধীনতা ছিল না।

মুসলমানদের শাসনের রাজধানী বা কেন্দ্র ছিল দিল্লি। কিন্তু সেখানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার লোকের সংখ্যা খুবই কম। ব্যাপারটা খুব বিস্ময়কর নয় কি? ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে সবচেয়ে বেশি মানুষ কাশ্মীর, বাংলা আর পাঞ্জাবে। বিবেকানন্দ মন্তব্য করেছেন, যেখানে ব্রাহ্মণরা বেশি ছিল সেখানে ব্যাপক হারে মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে ব্রাহ্মণদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবার জন্য। কারণ মুসলমান হয়েছে নির্যাতিত দ্ররিদ্র মানুষেরা। কথাগুলি বিবেকানন্দ একা নন, বহুজনই বলেছেন সাক্ষ্য প্রমাণ সহ। ইতিহাসে সেখানে দেখা গেছে মুসলমানরা জোর করে সেভাবে কাউকে ধর্মান্তরিত করেনি, মানুষ স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছে। কারণ মুসলমানরা জোর করে ধর্মান্তরিত করাতে চাইলে, প্রথম হিন্দু শাসক সম্প্রদায়কে মুসলমান হতে বাধ্য করতো। বিজয়ী রাজারা প্রথম ভিন্ন দেশের রাজার মাথাটাই কাটে। রাজাদেরকেই প্রথম বাধ্য করে। কিন্তু মুসলমান শাসনে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় সমাজের সব মাথাওয়ালারা বড় বড় সব রাজপদ ভোগ করছে। মানসিংহ, জয়সিংহরা হচ্ছেন মুঘল শাসকদের সামরিক বাহিনীর প্রধান। ফলে ঘটনা প্রমাণ করে না মুসলমানরা জোর করে ভারতে অন্যদের ধর্মান্তরিত করেছে। কিন্তু বৈদিকদের সময়ে কী ঘটেছে? বৈদিকরা যখন যেরাজ্য জয় করেছে সেখানে সকলে বাধ্য হচ্ছে বেদকে মান্য করতে। খুব নিষ্ঠুরভাবে এই মান্যতা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইংরেজরা ইতিহাস লিখবার সময়ে ঠিক উল্টোটাই যেন বলতে চেয়েছে।

সকলেরই জানা যে বৈদিক ধর্মের চারটি বর্ণ। বৈদিক আর্যদের ভারত দখলের কালে যখন যে ভূখণ্ড তারা জয় করেছে বিজয়ীরা সেখানে থেকেছে উচ্চবর্ণে। বিজিতদের উপর নিম্নবর্ণ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে জোর করে। বৈদিকরা শুধু তাদের দখল করা রাজ্যে বৈদিক ধর্মকে চাপিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বলা হয়েছে বিজিতরা হবে বৈদিক ধর্মের নিম্নবর্ণের মানুষ। ঠিক এভাবেই কারো মতামতের অপেক্ষা না করে নির্মমভাবে ভারতের স্থানীয়দের নিম্নবর্ণ বানিয়ে রাজত্ব করেছে আর্যরা। কিন্তু ইংরেজদের ইতিহাসে সেসব কথা বলা নেই। হঠাৎ নিষ্ঠুরতার ইতিহাসের আলোচনা আরম্ভ হয়েছে মুসলমানদের নিয়ে। বলা হয়েছে মুসলমানরা কতো খারাপ, গজনির মাহমুদ বারবার সোমনাথ মন্দির দখল করেছে। কথাটা হলো গজনির মাহমুদ একজন লুণ্ঠনকারী, বিশ্বে সর্বত্র এমন লুণ্ঠনকারী রয়েছে। লুণ্ঠনকারী মানেই মুসলমান নয়। গজনির মাহমুদ মুসলমান হিসেবে হিন্দুর মন্দির দখল করতে আসেনি, লুণ্ঠনকারী হিসেবেই সে এসেছে মন্দিরের সম্পদ লুট করতে। ইতিহাসে দেখা যায় মাঝে মধ্যেই মাহমুদ এইরকম লুণ্ঠন চালিয়েছে। ইতিহাসে পরবর্তীতে এটাও প্রমাণ করেছে, মাহমুদ স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই লুণ্ঠন কার্যটি চালাতো। না হলে বিরাট ভারতবর্ষে অতোদূর থেকে এসে লুণ্ঠন চালিয়ে বারবার পার পাওয়ার কথা নয়। বড় কথা হলো, স্থানীয়রা খবর না পাঠালে মাহমুদ কী করে জানবে কতোটা স্বর্ণ মন্দিরে জমা হয়েছে! মাহমুদ যেমন সোমনাথ মন্দিরে লুণ্ঠনের জন্য হামলা চালাতো, ঠিক একইভাবে বারবার বর্গী বা মারাঠারা বাংলায় আক্রমণ চালাতো লুণ্ঠনের জন্য। বর্গীরা শুধু লুণ্ঠন চালিয়েছে তা নয়, নির্বিচারে মানুষ হত্যা আর নারী ধর্ষণ করেছে। ইংরেজরা কি সেসব জানতো না? মগ দস্যুরা হামলা চালাতো চট্টগ্রামে। বর্গী আর মগরা তো মুসলমান ছিল না। কিন্তু সেইসব ঘটনাকে সর্বদা আড়ালে রেখে, সেই সব লুণ্ঠন এড়িয়ে গিয়ে, মুসলমানদের কেন ইংরেজ শাসনে বারবার খলনায়ক বানাতে হয়েছিল? কারণ মুসলমানদের প্রতি ভারতের বিরাট জনগোষ্ঠীর মনে ঘৃণা জাগিয়ে তুলে নিজেদের দখলদারীকে টিকিয়ে রাখা ব্রিটিশদের দরকার ছিল।

সুপ্রকাশ রায় লিখেছেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক এবং তাদের অনুসরণকারী দেশীয় ঐতিহাসিকদের রচিত বিকৃত ইতিহাসে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের প্রকৃত পরিচয় ঢাকা পড়ে গেছে। এই বিকৃত ইতিহাসই আমাদের দেশের বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয়ে অবশ্য পাঠ্য, সেকারণে স্বদেশের ও স্বদেশবাসীর মিথ্যা পরিচয় নিয়ে আমাদের সন্তানরা বড় হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষের যে ইতিহাস আমরা পড়ি এবং মুখস্ত করিয়া পরীক্ষা দেই, তাহা ভারতবর্ষের নিশীথ কালের একটা দুঃস্বপ্ন-কাহিনী মাত্র।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘মামুদের আক্রমণ হইতে লর্ড কার্জনের সাম্রাজ্য-গর্বোদগার-কাল পর্যন্ত যে-কিছু ইতিহাস কথা, তাহা ভারতবর্ষের পক্ষে বিচিত্র কুহেলিকা, তাহা স্বদেশ সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টির সহায়তা করে না, দৃষ্টি আবৃত করে মাত্র। তাহা এমন স্থানে কৃত্রিম আলোক ফেলে যাহাতে আমাদের দেশের দিকটাই আমাদের চোখে অন্ধকার হইয়া যায়। সেই অন্ধকারের মধ্যে নবাবের বিলাস-শালার দীপালোকে নর্তকীর মণিভূষণ জ্বলিয়া উঠে; বাদশাহের সুরাপাত্রের রক্তিম ফেনোচ্ছ্বাস উন্মত্ততার জাগররক্ত দীপ্ত নেত্রের ন্যায় দেখা দেয়।...তাহাকে ভারতবর্ষের ইতিহাস বলায় লাভ কী? তাহা ভারতবর্ষের পুণ্যমন্ত্রের পুঁথিটিকে একটি অপরূপ আরব্য উপন্যাস দিয়া মুড়িয়া রাখিয়াছে, সেই পুঁথিখানি কেহ খোলে না, সেই আরব্য উপন্যাসের প্রত্যেক ছত্র ছেলেরা মুখস্ত করিয়া লয়। তাহার পরে প্রলয়রাত্রে সেই মোগলসাম্রাজ্য যখন মুমূর্ষু, তখন শ্মশানস্থলে দূরাগত গৃধ্রগণের পরস্পরের মধ্যে যে সকল চাতুরী-প্রবঞ্চনা-হানাহানি পড়িয়া গেল তাহাও কি ভারতবর্ষের ইতিবৃত্ত? এবং তাহার পর হইতে পাঁচ পাঁচ বৎসরে বিভক্ত ছককাটা সতরঞ্চের মত ইংরেজ শাসন, ইহার মধ্যে ভারতবর্ষ আরো ক্ষুদ্র; বস্তুত সতরঞ্চের সহিত ইহার প্রভেদ এই যে, ইহার ঘরগুলি কালোয় সাদায় সমান বিভক্ত নহে, ইহার পনেরো আনাই সাদা।’ রবীন্দ্রনাথ খুব চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন, ইংরেজদের লেখা মুসলিম ইতিহাস হচ্ছে রক্তাক্ত আর যুদ্ধবিগ্রহে ভরা কিন্তু ইংরেজদের নিজেদের ইতিহাসটা সম্পূর্ণ নির্দোষ শুভ্র।      

সন্দেহ নেই ইসলাম ধর্ম তরবারির সাহাযে বিভিন্ন দেশ দখল করেছে, যা অন্যরাও করেছে। কিন্তু ভারতবর্ষে জোরজবস্তি করে মানুষকে ইসলাম গ্রহণ করানো হয়নি। ঠিক যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ অত্যাচার ছাড়াই বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিল। ভারতে যেভাবে বহু মানুষ খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছে অত্যাচার ছাড়াই ভিন্ন সুবিধার কারণে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পেছনে কারণ একইরকম। কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রেই ইতিহাসটা উল্টে যায় কেন ভারতবর্ষে? পূর্ব ভারতে জৈন আর বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণদের অত্যাচার, বৌদ্ধদের গ্রন্থাদি এবং বহু বিহার ধ্বংস করা ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে বারবার মুসলমানদেরকে নিষ্ঠুর সাজাতে হয় কেন? ব্রাহ্মণদের হাতে নির্মমভাবে ধ্বংস হয় চার্বাক সম্প্রদায়। কিন্তু সেটা প্রচার না করে বারবার মুসলিম বিদ্বেষই ছড়ানো হয় কোন্ লক্ষ্যে? প্রাচীন আর মধ্যযুগ ছিল বর্বরতার যুগ। ইউরোপ এশিয়া আফ্রিকা আমেরিকার সর্বত্রই শক্তিমানদের যুগের দাবি মেটাতে হয়েছে রক্তপাতের ভিতর দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন কে? যুক্তরাষ্ট্র দখলকারী এক দাস ব্যবসায়ী। সর্বত্রই রক্তপাত আর হানাহানি চলেছে শক্তির জোরে। ব্রিটিশরা ভারত দখল করে সেকাজটাই করেছে। কিন্তু ব্রিটিশরা ভারত দখল করে নানা অত্যাচার চালালে বাক-স্বাধীনতা হরণ করলে, বর্ণহিন্দুরা সেটাকে সমর্থন জানায় কিন্তু ইংরেজ শাসকদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা নিন্দা প্রচার করে কেন? জর্জ ওয়াশিংটনের নামে নিন্দা বাক্য বলা হয় না কেন? মুসলিম শাসনের চেয়ে বহু শত গুণ রক্তপাতের ভিতর দিয়ে আমেরিকা দখল করেছে খ্রিষ্টানরা। মুছে দিয়েছে প্রায় স্থানীয় মানুষদের চিহ্ন আর সভ্যতা।

ইংরেজদের আগমণের আগে ভারতে মুসলমানদের দীর্ঘশাসনে রয়েছে স্থানীয়দের সঙ্গে নানারকম সখ্যতা আর সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান। মুসলমানরা ফিরে যায়নি, হিন্দুস্তানে থেকে গেছে হিন্দুস্তানের অধিবাসী হয়ে। বৃহৎ ভারতে আজও মুসলমান সংস্কৃতি সব ঘরে ঘরে পাওয়া যাবে; পোষাকে আষাকে, খাদ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। ঠিক একইভাবে মুসলমান ধর্মের সঙ্গে মিশে গেছে তার আগের স্থানীয় নানা ধর্মের সংস্কৃতি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, মুসলমান রাজত্বকালে বিজিত হিন্দুগণ প্রধানমন্ত্রী, প্রধান সেনাপতি, রাজস্বসচিব প্রভৃতি উচ্চতর রাজকার্যে অধিকারবান ছিলেন। মুসলমান শাসকদের শোষণ আর অত্যাচারের প্রমাণ কি সব বড় বড় পদগুলি হিন্দুদের বা বৈদিক ধর্মের মানুষদের হাতে ছেড়ে দেয়া? বলা হয় নেহরু পরিবারের খান্দান নাকি তিনশো বছরের। ভারতের শাসক তখন কারা? মুসলমান রাজত্বে হিন্দু নেহরুরা ভারতের তিনশো বছরের খান্দান হলো কী করে? ভারতে মুসলমানদের কি কাউকে পাওয়া যাবে যে দাবি করতে পারে তার খান্দান হচ্ছে তিনশো বছরের? মুঘলদের বড় বড় সব সেনাপতিরা কারা ছিলেন? মানসিংহ, জয়সিংহ, টোডরমলরা কারা? ভারতে মুঘলদের ভয়াবহ অত্যাচারর চললে, তার মধ্যে রাজপুত আর বড় মহারাজারা বিলাসবহুল প্রাসাদ আর এত ঐশ্বর্য্য নিয়ে টিকে থাকলেন কী করে? ইংরেজ হাতে সিরাজদৌলার পতনের আগে বাংলায় উনিশ জন বড় জমিদার আর পনেরো জন ছোট জমিদার ছিলেন। সেই উনিশ জন আর পনেরো জনের মধ্যে মাত্র দুজন করে ছিলেন মুসলমান, বাকিরা সবাই হিন্দু। হিন্দুর প্রতি মুসলমানদের অত্যাচারের নমুনা কি সেটা যে, বাংলার প্রায় সব জমিদাররা হিন্দু রয়ে গেল? মুসলমানরা শাসক হয়েও তা দখল করলো না। বাংলাতে তখন মুসলমানের সংখ্যা ছিল হিন্দুদের চেয়ে বেশি।

সব শাসকরা অত্যাচার করে, সেটাই বাস্তব ঘটনা। মুসলমানরা শোষণ না করে তো আর এ দেশ শাসন করেনি। সব শাসকের ধর্ম সেটা, কিন্তু ভারতবর্ষ মুসলমানদের নামটা আলাদাভাবে উচ্চারিত হয় কেন?  শক, হুন, মৌর্য, গুপ্ত কোনো শাসকরাই অত্যাচারের বাইরে ছিলেন না। কিন্তু ভারতে কি মুসলমানদের শাসনে মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক মানসিকতা নিয়ে হিন্দুদের উপর বা বৈদিক ধর্মের উপর আক্রমণ চালিয়েছে? শাসকদের অত্যাচার সমানভাবে হিন্দু এবং মুসলমান সবার উপরে হয়েছে। মুসলমান শাসকের হাতে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কতো মুসলিম নিহত হয়েছে, সবটাই তার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। কিন্তু ইংরেজদের ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে, শুধু হিন্দুদের উপরে মুসলমান শাসকদের অত্যাচারের নানা কল্প-কাহিনী। সে ইতিহাস পাঠ করলে মনে হবে, ইংরেজরা ভারত দখল করেছিল মুসলমানদের অত্যাচারের হাত থেকে হিন্দুদের রক্ষা করবার জন্য। মনে হয় যেন সেই মহৎ কাজটা করার জন্যই ইংরেজরা ভারতে এসেছিল। কথাটা যে শুধু ইংরেজরা বলেছে তা নয়, ইংরেজদের এ কথাটা ইংরেজ শাসনের ভাগীদার এদেশীয়রাও জোরেসরে প্রচার করেছে। কিন্তু সত্য অনুসন্ধান করে দেখেনি আর ভবিষ্যতে তার ভয়াবহ পরিণতির কথা ভাবেনি। ইংরেজদের প্ররোচনায় আর ইংরেজ শাসকদের দোসর বর্ণহিন্দুদের একাংশের প্রচেষ্টায় হিন্দুস্তানের মানুষকে হিন্দু-মুসলমানে বিভক্ত করা হলো। বিতর্কিত সেই সব ইতিহাস গ্রন্থে মুসলিম তুর্কী শাসকরা আর মুঘল শাসকরা সকলে হয়ে দাঁড়ালেন খলনায়ক আর সাম্প্রদায়িক চরিত্রের। কিন্তু সেই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে কলম ধরেছেন আবার হিন্দু সম্প্রদায়েরই এক সচেতন অংশ। নতুন কথা শোনালেন তারা ইংরেজদের দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘ইতিহাসচর্চা: বিষয় সাম্প্রদায়িকতা’ গ্রন্থে অঞ্জন গোস্বামী লিখেছেন, মধ্যযুগের সুলতানী ও মুঘল আমলে ভারতবর্ষ ছিল একটি ইসলামী রাষ্ট্র, আধুনিক গবেষণায় এ তত্ত্বের অসারত্ব প্রমাণিত হয়েছে। শাসক একজন মুসলমান, কিন্তু শাসিত জনগণের বিরাট অংশটাই মুসলমান নয়। কিছু কিছু উলেমারা সুলতানদের একটি পুরোপুরি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিলেও শাসকরা কখনো তা মেনে চলেননি। সুলতান ও মুঘল বাদশাদের পক্ষে তা মানা সম্ভব ছিল না। ইলতুতমিশ ‘দিনদারি’ বা ইসলাম ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী শাসন করতে রাজি হননি। মুসলিম শাসন থাকলে তার কন্যা রিজিয়া সুলতানা রজিয়া হতে পারতেন না। নারী হয়ে তিনি ভারতবর্ষ শাসন করেছেন, পুরুষদের মতো সকলরকম যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।  আলাউদ্দিন খলজি ঘোষণা করেছিলেন, শরিয়ত অনুযায়ী নয়; রাষ্ট্রের স্বার্থে যা প্রয়োজন তিনি তাই করবেন। রাজ্যশাসন করা হতো ‘জাহানদারি’র ভিত্তিতে অর্থাৎ সুলতান বা সম্রাটদের পার্থিব প্রয়োজনের দ্বারা। দিল্লির সুলতানদের মধ্যে ইলতুতমিশের যুক্তি ছিল এই যে, মুসলমানদের সংখ্যাশক্তি ভারতে খাদ্যের থালায় লবণের মতো। তিনি সেজন্য মনে করতেন, তাই না ব্যাপকভাবে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করা সম্ভব আবার না ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাদের সবাইকে হত্যা করা চলে।

সতীশচন্দ্র ‘মুঘল দরবারে দল ও রাজনীতি’ গ্রন্থে দেখাচ্ছেন যে, মধ্যযুগের ভারতীয় সমাজের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবসম্পন্ন শক্তিগুলি দুইটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল; একটি রাজন্যবর্গ এবং বংশানুক্রিম ভুস্বামী সম্প্রদায়, লেখকরা যাদের রায় বা ঠাকুর বলে অভিহিত করেছেন। এঁরা অনেকেই তুরস্ক বিজেতাদের আগমনের বেশ কিছুকাল পূর্ব থেকেই এ সমস্ত ভূখণ্ডের অধিকারী ছিল। তুর্কী বিজেতারা এঁদের অধিকাংশকেই পূর্ণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকবার অনুমতি দিয়েছিলেন। তুর্কী ও মুঘল নৃপতিরা তাদের সঙ্গে একটা সন্তোষজনক সম্পর্ক স্থাপনে প্রচুর সমস্যা ও জটিলতার সম্মুখিন হয়েছিলেন। সতীশ চন্দ্র তাঁর গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কতগুলি বিষয় উত্থাপন করেছেন। মুঘল শাসকরা বা পূর্ববর্তী তুর্কি শাসকরা পূর্বের স্থানীয় হিন্দু ভূস্বামীদের জমিদারী কেড়ে নেননি। বরং কৃষক আর বণিকদের স্বার্থে কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যাতে কৃষকদের কাছ থেকে জমিদাররা পূর্বে যে নানাধরনের অতিরিক্ত কর গ্রহণ করতেন যেন তা আর না করতে পারে। সতীশ চন্দ্র দেখাচ্ছেন, তাতে বণিক আর কৃষকদের লাভ হলেও জমিদারদের স্বার্থের পরিপন্থী হয়েছিল। কিছু কিছু জমিদার সে কারণে শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সুযোগ নিতেন।
নিশ্চয় সেসব ক্ষেত্রে কখনো কখনো তারা জমিদারী হারাতেন। শাসকরা তো আর শত্রুপক্ষকে লালন করবেন না। না হলে পূর্বের হিন্দুরাই ভূস্বামী হিসেবে থেকে গিয়েছিলেন। মুসলমান শাসকরা হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ বশে তাদের প্রতি কোনো অত্যাচার চাপিয়ে দেননি। কিন্তু জমিদারদের কর্তৃত্ব কমিয়ে দিয়েছিলেন যাতে তারা কৃষকদের উপর জুলুম করতে না পারে বা ক্ষমতার অপব্যবহার না করে। জমিদাররা এটাকে অত্যাচার বলতেই পারে।

ভিন্ন ক্ষমতাধর প্রধান শক্তিটি ছিল ইকতাদার বা জায়গীরদার। মুঘল শাসনে সেখানে হিন্দু মুসলমান দুপক্ষই স্থান পেতেন। ঠিক একই কথা বলছেন অঞ্জন গোস্বামী। তিনি দেখাচ্ছেন, সুলতানী এবং মুঘল আমলে শাসক ও শোষিত উভয় শ্রেণীর মধ্যেই ধর্মের কোনো ভেদ ছিল না। সুলতানী শাসনকালে রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা মুসলমান অভিজাতদের হাতে থাকলেও অর্থনৈতিক জগতে হিন্দু অভিজাতদের প্রভাব ছিল বেশি। মুঘল আমলে পদস্থ আমলাদের সম্রাট আকবর মনসবদারী প্রথার মাধ্যমে সামরিক ধাঁচে সংগঠিত করেন। মনসবদারদের একটি বড় অংশই ছিল অ-মুসলমান। শতকরা হিসেবে আকবরের তুলনায় আওরঙ্গজেবের শাসনকালে হিন্দু-মনসবদারদের সংখ্যা ছিল বেশি। ভারতের মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারে রাজপুত সামরিক নেতাদের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মুসলমান শাসকরা যোগ্য ব্যক্তিই খুঁজেছেন, হিন্দু না মুসলমান বিচার করেননি। পাণ্ডে এবং রাজেন্দ্রপ্রসাদ দেখিয়েছেন, ইংরেজরা বা অন্যান্যরা যে আওরঙ্গজেবকে সবচেয়ে বেশি সম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে, তাঁর সময়েই সবচেয়ে বশি অমাত্যরা ছিল অমুসলিম। তিনি সবচেয়ে বেশি জমি দান করেছিলেন মন্দিরের জন্য। বিশেষ কিছু মন্দিরের জন্য তিনি বিশেষভাবে নিয়মিত বরাদ্দ দিয়েছিলেন।

ভারতবর্ষে মুসলমানদের শাসনের ইতিহাসটা আসলে কী? সেটা কি সামান্যতম সাম্প্রদায়িক বিভেদের ইতিহাস ছিল? নাকি ছিল হিন্দু-মুসলমান সুবিধাভোগীদের মিলিত শাসন নিম্নবর্গের মানুষকে বঞ্চিত করে? সতীশ চন্দ্র দেখাচ্ছেন যে, হিন্দু ও মুসলিম অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক মোটের উপর প্রীতিপূর্ণ ছিল। যদিও হিন্দুদের অধিকাংশই ভোজন, বিবাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতিভেদের বাধানিষেধ কঠোর ভাবে মেনে চলতেন। দক্ষ কর্মতৎপরতা প্রশাসনের ঐতিহ্য সৃষ্টিতে মুঘল সম্রাটরা অনেকাংশে সফল হয়েছিলেন। রাজপুতেরা কখনোই সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রতি আনুগত্যহীনতা প্রকাশ করেনি। স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, মুসলমানদের শাসনে মুসলমান উচ্চশ্রেণী আর হিন্দু উচ্চশ্রেণী পরস্পরের স্বার্থ রক্ষা করছে। দুপক্ষের মধ্যে ধর্মীয় বিরোধ নেই বরং রয়েছে স্বার্থের ঐক্য। কখনো কখনো ঘটছে ক্ষমতার বিরোধ। সবচেয়ে বড় কথা সেই বিরোধ ঘটছে, মুসলমানদের সঙ্গে মুসলমানদের, রাজপুতদের সঙ্গে রাজপুতদের, মারাঠাদের সঙ্গে মারাঠাদের। বাংলার মুসলিম তুর্কী শাসকরা বহুসময় দিল্লির মুসলিম শাসন মেনে নিতে চায়নি। দিল্লির মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে বাংলার মুসলিম শাসকরা। বাংলার মুসলিম শাসকদের পাশে তখন দাঁড়িয়েছে বাংলার বৃহত্তর হিন্দু সমাজ। বহু উদাহরণ রয়েছে এরকম। দাক্ষ্যিণাত্যে সম্রাট আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে ছিলেন মুসলিম শাসক আদিল শাহ।

মুসলমানদের শাসনেই বাংলা সাহিত্য পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। ব্রাহ্মণ বা বৈদিক শাসনে বাংলা সাহিত্য পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। কারণ শাসক সেন রাজবংশ ‘সংস্কৃত ভাষা এবং সাহিত্যে’র পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, স্থানীয় বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করার বিরুদ্ধে ছিল। মুসলমানদের কাছে সংস্কৃত বা পালি ভাষাকে পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণ ছিল না, সেজন্য স্থানীয় ভাষাকে পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল। মুসলিম মুঘল শাসকের প্রতিনিধি মানসিংহ যুদ্ধ করেছে বাংলার হিন্দু বারো ভুঁইয়াদের বিরুদ্ধে। বারো ভুঁইয়াদের একজন মুসলমান ঈশা খাঁ লড়েছেন দিল্লির মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে। বাংলার বারো ভুঁইয়ারা প্রায় সকলেই যে হিন্দু ছিল, সেটা কি প্রমাণ করে না মুসলমান শাসকরা তাঁদের পুরানো দিনের কর্তৃত্ব কেড়ে নেননি। ভারতে মুঘল শাসনকে টিকিয়ে রাখতে রাজপুতরা লড়াই করেছে ভারতের স্থানীয় বহু হিন্দু রাজার সঙ্গে। কারণ ভারতে মুঘল শাসন টিকিয়ে রাখার সঙ্গে তাদের স্বার্থ জড়িত ছিল। ধর্ম কখনোই বড় হয়ে দেখা দেয়নি সেখানে। মারাঠারা যখন মুঘলদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লড়ছে, তখন বহু মুসলমান সেনাপতি মারাঠা শাসকদের চাকরি করছে। মারাঠা সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দির ঘটনা অনেকের জানা। মারাঠা সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দি লড়ছেন মুসলমান শাসকদের বিরুদ্ধে। ফলে ইংরেজদের ঘোষিত মুসলমানদের দ্বারা হিন্দুদের প্রতি অত্যাচার বা হিন্দুদের প্রতি মুসলিম বিদ্বেষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ভারতের প্রকৃত ইতিহাসে। ভারতে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদের কথাটা বড় করে কারা প্রচার করছে তবে? ইংরেজ শাসক আর তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী দালালরা। সাধারণ হিন্দু-মুসলমানরা এইসব প্রচার করতে যায়নি। ঠিক একইভাবে নিম্নবর্গের হিন্দু আর ধর্মান্তরিত মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদের লক্ষণ মাত্র ছিল না। ইংরেজরা ভারত দখল করার পর বর্ণহিন্দু জমিদার এবং সুবিধাভোগী শিক্ষিতদের বড় একটা অংশকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারলেও, নিম্নবর্গের হিন্দুদের কখনো নিম্নবর্গের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারেনি।

বিশেষ করে বাংলার নিম্নবর্গের হিন্দু মুসলমানরা সর্বদাই ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে মিলিতভাবে বিদ্রোহ করেছে। ইংরেজদের বাংলার শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদ্রোহ ছিল ফকির-সন্ন্যসী বিদ্রোহ। ফকির সন্ন্যাসীরা ছিলেন হিন্দু-মুসলমান ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একটি দল। ধর্মের অনুশাসনের দিক থেকে ফকির-সন্ন্যাসীদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও উভয়ের মধ্যে কালক্রমে আদর্শগত ও সংস্কৃতিগত ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল। ফকির সন্ন্যাসীদের ধর্মীয় তীর্থস্থানে গমনে ইংরেজরা বাধা দিলে ১৭৬৩ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত ফকির-সন্ন্যাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ সম্প্রসারিত হয়েছিল ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ ও পূর্ণিয়া জেলায়। তবে উত্তরবঙ্গ ছিল ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের মূলকেন্দ্র। ফকির-সন্ন্যাসীরা মিলিতভাবে এই বিদ্রোহ করেছিল, প্রধান নেতা ছিলেন মজনু শাহ ও ভবানী পাঠক। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পর আরম্ভ হয় কৃষক বিদ্রোহ, শত বছর ধরে একটার পর একটা কৃষক বিদ্রোহ চলেছে বাংলায়। বিদ্রোহগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেদিনীপুরের বিদ্রোহ, যশোহর-খুলনার কৃষক বিদ্রোহ, সন্দ্বীপের কৃষক বিদ্রোহ, রংপুরের কৃষক বিদ্রোহ, বাখেরগঞ্জের সুবান্দিয়া বিদ্রোহ, ময়মনসিংহের পাগলপন্থী বিদ্রোহ, বাংলার তিতুমীরের বিদ্রোহ, ফরিদপুরের ফরায়জী বিদ্রোহ, বাংলার নীলচাষীদের সংগ্রাম ইত্যাদি। সবগুলি বিদ্রোহে হিন্দু মুসলমানরা একজোট হয়ে লড়াই করছিল। ভিন্নদিকে বাংলার সুবিধাভোগী ইংরেজদের বেনিয়ান আলোকপ্রাপ্ত রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখ আর ইংরেজি শিক্ষিত রক্ষণশীল আবদুল লতিফরা ছিল ইংরেজদের দালাল। কৃষক সংগ্রামের বিরুদ্ধে ছিলেন তাঁরা। চলবে