সাম্প্রদায়িক শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং তার রাজনীতি
পর্ব ১৩
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : নভেম্বর ০২, ২০২০
যখন ভারত বিভক্ত হলো, তখন ভয়াবহ দাঙ্গার কারণ কী? মাউন্টব্যাটেনের দ্বিচারিতা আর নেহরুর ক্ষমতালাভের জন্য পাগল হয়ে যাওয়া। ব্রিটিশ সরকারের দিক থেকে কথা ছিল ১৯৪৮ সালের জুনের মধ্যে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হবে। মাউন্টব্যাটেন ভাইসরয় হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেটাকে দশ মাস এগিয়ে নিয়ে এলেন কেন। তিনি ধূর্ততার সঙ্গে কংগ্রেসের নেহরু আর কৃষ্ণমেনন আর কতিপয়ের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেন। মাউন্টব্যাটেন কিছুতেই অবিভক্ত ভারত চাননি। তিনি বুঝেছিলেন, অভিভক্ত ভারত ব্রিটিশ শক্তিকে আর পাত্তা দেবে না। জিন্নাহ আর গান্ধী যাতে হঠাৎ অবিভক্ত ভারতের পক্ষে এক হয়ে না দাঁড়াতে পারেন, ভাইসরয় হিসেবে সেজন্য তাড়াহুড়ো করছিলেন মাউন্টব্যাটেন। দশ মাস এগিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাকে। কিন্তু স্বাধীনতা না দিয়ে চালাকির মাধ্যমে দিলেন ডোমিসনিয়ন স্ট্যাটাস। নেহরুও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কারণ ইতিপূর্বে একবার গান্ধী মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে ভারতকে অবিভক্ত রেখে জিন্নাহকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভাইসরয়কে। খবরটা জেনে ক্ষুব্ধ হয়ে তখন নেহরু বলেছিলেন, বুড্ঢার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কবে আবার গান্ধী মত পাল্টে ফেলেন, তাই নেহরু ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করতে দেরি চাইছিলেন না। কংগ্রেসেরও বহু নেতারও মত ছিল তাই। অবিভক্ত ভারতে ঘটনাচক্রে জিন্নাহ প্রধানমন্ত্রী হবে. কংগ্রেস নেতাদের সেটা না চাইবারই কথা। ফলে ভারত ভাগের সীমানা টানার জন্য কিছুটা সময় দরকার ছিল। মাউন্টব্যাটেন সে সময় দিতে রাজি হননি।
দশমাস আগে স্বাধীনতা দেবার কৃতিত্ব নেবার জন্য সবকিছু অবাস্তবভাবে অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছিল। রেডক্লিফ কিছুটা সময় চেয়েছিলেন বিরাট ভারতবর্ষের এতবড় একটা সীমানা নির্ধারণে, কিন্তু সে সময় তাঁকে দিতে রাজি হলেন না ভাইসরয়। চিঠি আছে নেহরুর, কীভাবে দ্রুত সীমানা টানার কাজ সম্পন্ন করার জন্য মাউন্টব্যাটেনকে তাড়া দিচ্ছিলেন তিনি। মওলানা আজাদ জানতেন এর ফল খারাপ হবে, তিনি দাঙ্গা ঠেকাবার জন্য ভাইসরয়কে বলেছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে যেন পূর্বেই বিভক্ত না করা হয়। কারণ ভারতীয় সেনাবাহিনী কখনো সাম্প্রদায়িক আচরণ করেনি। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী দাঙ্গা ঠেকাবার কাজে ভূমিকা রাখতে পারবে আজাদ এমন পরামর্শ দিয়েছিলেন ভাইসরয়কে। মাউন্টব্যাটেন শুনলেন না তাঁর কথা। বললেন গর্বের সঙ্গে, যতক্ষণ আমি আছি সামান্য রক্তপাত ঘটবে না। কারো সাহস হবে না রক্তপাত ঘটাতে। কিন্তু আজাদ তাঁর সঙ্গে একমত হননি। মিথ্যাচার করেছিরেন মাউন্টব্যাটেন। স্বাধীনতা ঘোষণার তিন চারদিন আগে রেডক্লিফ সীমানা টেনে তা জানিয়ে দিলেন ভাইসরয়কে। তিনি ভাইসরয়কে বললেন, স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই যেন সকল সাধারণকে ভারত-পাকিস্তানের সীমানা জানিয়ে দেয়া হয়। যাতে মানুষ ধীরে সুস্থে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কাকে কোথায় যেতে হবে। ভাইসরয় তা করলেন না। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন আগে, সীমানা ঘোষণা করলেন তার একদিন পর।
ফলে মানুষ তখন দিশেহারা হয়ে গেল। ছুটাছুটি আরম্ভ হলো যাদের সীমানার ওপর পারে যেতে হবে। খুলনা ছিল প্রথম ভারতের অংশ, মুর্শিদাবাদ পাকিস্তানের। দলিলপত্রে আছে, খুলনায় উড়েছিল প্রথম ভারতের পতাকা, মুর্শিদাবাদে পাকিস্তানের। মুর্শিদাবাদে অনুষ্ঠান হয়েছিল পাকিস্তানকে স্বাগত জানিয়ে। কিন্তু নেহরুর দাবিতে রেডক্লিফের প্রথম টানা লাইন অমান্য করে মাউন্টব্যাটেন সেটা স্বাধীনতা ঘোষণার পর আবার পাল্টে দিলেন। কারণ নেহরু ভাইসরয়কে জানিয়েছিলেন, মুর্শিদাবাদ তাঁর দরকার ভারতের জলপ্রবাহ ঠিক রাখতে। ফলে এভাবে মাউন্টব্যাটেনের খেয়ালখুশিতে সবকিছুর মধ্যে হয়বরল অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল। মানুষ দিশেহারা হয়ে স্থান পরিবর্তন করতে গিয়ে, হাতে সামান্য সময় পেল না। মওলানা আজাদ স্পষ্ট করেই বলতে চান, মাউন্টব্যাটেন ইচ্ছাকৃত এটা করেছিলেন। কথাটা আরো অনেকে বলেছেন। মাউন্টব্যাটেন চাইছিলেন, ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে সারাজীবনের জন্য ব্রিটেনের উপর নির্ভরশীল করে রাখতে। কাশ্মীরকে তিনিই একটা সমস্যা হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে দাঙ্গা আর রক্তপাতের উদাহরণ সৃষ্টি করে সারাবিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিলেন, ভারতের মানুষ কতো অসভ্য বর্বর। ব্রিটিশ শাসন সেখানে দরকার ছিল, না হলে তারা আরো অসভ্য থেকে যেতো। ইতিহাস সেই সব আলোচনা এড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বারবার সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করছে। ভারতের হিন্দু মুসলমানের যেন আর কোনো পরিচয় নেই, সাম্প্রদায়িক হওয়া ছাড়া! কার এসব বক্তব্যকে ইন্ধন যোগাচ্ছে? দেশভাগ, দাঙ্গা, রক্তটপাত; এর জন্য দায়ী কে? মাউন্টব্যাটেন, রেডক্লিফ আর নেহরুর ভূমিকা কী ছিল দেশ ভাগে? সবকিছু সঠিকভাবে জানতে না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন?
মুসলিম লীগ আর কংগ্রেসের মধ্যে স্বার্থের যে লড়াই ছিল, ধর্ম দিয়ে সেটাকে ব্যাখ্যা করতে গেলে ভুল হবে। লড়াইটা ছিল ক্ষমতার। লড়াইটা ছিল, বিরাট ব্রাহ্মণ সমাজ বা বর্ণবাদী হিন্দুর সঙ্গে মুসলমান নবাব, জমিদার আর অভিজাতদের। বর্তমান ভারত ছিল বর্ণবাদী হিন্দুর প্রভাবিত আর বর্তমান পাকিস্তান ছিল মুসলমান নবাব, জমিদার আর অভিজাতদের প্রভাবিত। বাংলার মুসলমানরা ছিল তখন আসলে পশ্চাদপদ, মাত্র পাটব্যবসাকে কেন্দ্র করে আর্থিক দিক থেকে জাতে উঠছে। বাংলার রাজনীতিতে মুসলমানদের মধ্যে সে রকম বড় বড় নবাব জমিদার ছিল না। খাজা সলিমুল্লাদের মুসলিম লীগের রাজনীতিতে তখন তেমন আর প্রভাব ছিল না। বাংলায় মুসলমানদের ভিতরে সুহরাওয়ার্দি ছিলেন যা একটু আলোচিত অভিজাত। বাকিরা মানে ফজলুল হক , আবুল হাশিম, মনসুর আহমদরা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত হয়েছেন মাত্র, কিন্তু জমির সঙ্গে সম্পর্কিত অভিজাত ছিলেন না তাঁরা। জিন্নাহও তাই, তিনি অভিজাত ছিলেন না, বাবা ছিলেন সামান্য ব্যবসায়ী। নিজে পেশা আর কর্মের দ্বারা নিজেকে অভিজাত সমাজে অর ভারতের রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন। পাকিস্তানের মুসলমান নবাব, জমিদররা বহুকাল তাঁকে পাত্তাই দেয়নি সেভাবে। নিজের যুক্তি আর মেধার দ্বারা নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন ভারতের রাজনীতিতে। নাজিমউদ্দীন ছাড়া ফজলুল হক, আবুল হাশিম প্রমুখ সাম্প্রদায়িক ছিলেন সে কথা কেউ বলবে না। সন্দেহ করা হয়, ১৯৪৬ সালে কলকাতার দাঙ্গায় নাজিমউদ্দীনের কিছুটা উস্কানীমূলক ভূমিকা ছিল। জিন্নাহ সেকথা জানার পর ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় তাঁকে আর স্থান দেননি। যোগেন মণ্ডল জায়গা পেয়েছিলেন মন্ত্রী হিসেবে। ভারতে এখন জিন্নাহকে আর সাম্প্রদায়িক বলে অভিযুক্ত করা কঠিন। ভারতীয় বর্ণহিন্দুরাই অনেকে জিন্নাহর পক্ষে কলম ধরে সেকথা জানিয়ে দিয়েছেন।
গান্ধীর পূর্বপুরুষ নিজ অঞ্চলে সম্মানিত মানুষ হিসেবে পরিচিত হলেও, সেরকম ধনী বা অভিজাত ছিলেন না। গান্ধীর জীবনী থেকে জানা যায়, তিনি বিয়ে করলে তার মা পুতলী বাঈ পুত্র আর পুত্রবধুকে হিন্দুর মন্দির আর মুসলমানের দরগায় নিয়ে যান জন্য আশীবার্দ লাভের জন্য। ফলে গান্ধীর পরিবারের অসাম্প্র্রদায়িক মনোভাব এখানে ধরা পড়ে। ছেলেবেলায় গান্ধীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিলেন মুসলমান। সন্দেহ নেই, করমচাঁদ গান্ধীর সত্যিকারভাবে মনে মুসলিম-বিদ্বেষ ছিল না। মুসলমানদের সম্পর্কে কখনো তিনি খারাপ কথা বলেননি। কিন্তু তিনি নিজে এতটাই গোঁড়া হিন্দু ছিলেন যে, তিনি অবচেতনেই হিন্দুধর্মের স্বার্থ রক্ষা করায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। হিন্দু বণিকদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে আর হিন্দু মহাসভাকে খুশি রাখতে এতই ব্যস্ত থাকতেন যে তাঁর সিদ্ধান্তগুলি সবসময় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চলে গেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কর্তাব্যক্তিদের কাছে নিজের জনপ্রিয়তা আর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তিনি নিরপেক্ষ আচরণ করেননি। না হলে তিনি যতই গোঁড়া হিন্দু হন না কেন, ভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে তাঁর মনে কোনো সংকীর্ণতা ছিল না। তিনি বহুবার জোরালোভাবে ইসলামের নবী সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছেন। তিনি কখনো কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায় সম্পর্কে সামান্য কটুক্তি করেননি। ইসলাম বা কুরান সম্পর্কে তিনি যতটা বলতে পারতেন, জিন্নাহ তাও পারতেন না। কিন্তু গীতার প্রভাবে তিনি চাইলেন রামরাজত্ব, চাইলেন পুরানো দিনের ভারতবর্ষে ফিরে যেতে। যা ছিল গান্ধীর অবাস্তব কল্পনা, আর সেটাই মুসলমানদের হিন্দুদের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল।
কংগ্রেসের অবিংসবাদী এই নেতা সম্পর্কে দলিলপত্রে, ইতিহাসে নানারকম বিরূপ ধারণা পাওয়া যাবে। কংগ্রেসের সভাপতির পদ নিয়ে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বিরোধ এবং সুভাষচন্দ্রের প্রতি তাঁর অন্যায় আচরণ ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। লখনৌ চুক্তি বাতিল করে তিনি হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে রাজনৈতিক সুসম্পর্ক তৈরি হবার পথটিকে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। গান্ধীর নানা গোঁড়ামি আর কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণের কারণেই অবিভক্ত ভারতবর্ষে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো, স্বাধীন ভারতেই এই মানুষটি প্রাণ দিলেন মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে, জিন্নাহ এবং পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে। ইতিহাসের এ এক করুণ অধ্যায়। নির্মমভাবে বৃদ্ধ মানুষটি খুন হলেন নিজের লোকদের হাতে। দীর্ঘদিন যিনি ছিলেন কংগ্রেসের একাধিপতি, ভারত স্বাধীনতা লাভ করার প্রাক্কালে তিনি বুঝতে পারলেন তাঁকে ছুড়ে ফেলা দেয়া হচ্ছে। নিজের শিষ্যরাই কয়েকজন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তার নির্দেশ আর মানতে চাইছে না ক্ষমতা হাতে পেয়ে। রক্তকরবীর রাজার মতো জীবনের শেষে এসে তিনি যেন নিজের ভুলগুলি ধরতে পারলেন। দেখতে পেলেন রাষ্ট্রযন্ত্রের চেহারা, বুঝতে পারলেন তাঁকে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে তিনি মনে করতেন কংগ্রেস তাঁর হাতের মুঠোয়, পরে বুঝলেন কার্য উদ্ধার শেষে তিনিই সেখানে অবাঞ্চিত।
স্বাধীন ভারতে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা নিয়ে, দিল্লিতে হিন্দুদের দ্বারা মুসলমানদের সম্পত্তি লুটপাট আর মুসলমানদের হত্যার বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ালেন। নিজের প্রিয় শিষ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী প্যাটেলের কাছে জানতে চাইলেন কেন এত রক্তপাত ঘটছে দিল্লিতে। মুসলমানরা কেন দিল্লিতে লুণ্ঠিত হচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন না যে, সময় পাল্টে গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এখন আর তাঁর কাছে ‘জবাবদিহি’ করতে বাধ্য নন।। মওলানা আজাদ নিজের লেখা ‘ভারত স্বাধীন হল’ গ্রন্থে দেখাচ্ছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী প্যাটেল গান্ধীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলেন। ইতিহাস থেকে দলিলপত্র বের করে নাট্যকার উৎপল দত্ত জানাচ্ছেন ইতিহাসের নতুন সব ঘটনা, যা আজাদের গ্রন্থও সমর্থন করে। পাকিস্তানে ভয়াবহ দাঙ্গা, রক্তপাত দেখে মুষড়ে পড়া জিন্নাহ তখন লাহোর থেকে পরম বিশ্বাস নিয়ে চিঠি লিখে গান্ধীকে বলেছিলেন, তিনিই একমাত্র মানুষ যিনি চাইলে সেখানকার দাঙ্গা থামাতে পারেন। জিন্নাহ বিশ্বাস করতেন, গান্ধীর রাজনীতি ভুল পথে গেছে কিন্তু তিনি কিছুতেই নির্দোষ সাধারণ মানুষের রক্তপাত চাইবেন না। জিন্নাহর চিঠি পেয়ে গান্ধী বললেন, তিনি পায়ে হেঁটে লাহোর যাবেন। জিন্নাহর সঙ্গে দেখা করে দুজনে একসঙ্গে দাঙ্গার বিরুদ্ধে ডাক দেবেন। গান্ধী সেময়ে বুঝতে পেরেছিলেন, দাঙ্গার পেছনে আছে মাউন্টব্যাটেন সহ আরো অনেকের ষড়যন্ত্র। গান্ধী দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, জিন্নাহ আর আমি যদি একসঙ্গে দাঁড়াই সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন হয়ে যাবে। গান্ধীর পরিকল্পনায় তাঁর ভক্ত প্যাটেল রুষ্ট হয়ে বললেন, গান্ধী সব ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করছেন। তিনি বেশি বাড়াবাড়ি সহ্য করবেন না। তিনি গান্ধীর মুখের উপরে স্পষ্ট কণ্ঠে এমনও বললে, জিন্নাহর সঙ্গে গান্ধীর সাক্ষাৎ হবে রাষ্ট্রদোহিতা। তিনি সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য যে বিধান গান্ধীর ক্ষেত্রে তাই প্রয়োগ করবেন। ইতিহাসের এ হলো বিস্ময়কর চরিত্র, রাজপথ থেকে ইতিহাস বারবার কানাগলিতে ঢুকে পড়ে। গান্ধীর যেদিন পদযাত্রা করে লাহোর যাবার কথা, ঠিক তার আগের দিন তিনি নিহত হলেন। চলবে