সাদী মোহাম্মদের মৃত্যু: সাহিত্যিকদের শোক
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : মার্চ ১৪, ২০২৪
বুধবার রাতে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদী মোহাম্মদের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সাদীর স্বজন ও ঘনিষ্টজনরা জানান, বুধবারও অন্যদিনের মতো সাদী মোহাম্মদ সংগীত চর্চা করেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ তার ঘরের দরজা বন্ধ দেখা যায়। পরে রাতে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের ধারণা, সাদী আত্মহত্যা করেছেন। যদিও বিষয়টি প্রমাণিত নয়। সাদীর এই চলে যাওয়া শোকের ছায়া ফেলেছে সাহিত্যিকদের ভেতর। ফেসবুকে তারা শোক প্রকাশ করছেন। সেখান থেকে কয়েকজন সাহিত্যিকের শোকবার্তা প্রকাশ করা হলো।
কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল
আত্মহননের কারণ বিশ্লেষণ করার কোনো মানে হয় না, বিশেষ করে তিনি যদি সাদি মহম্মদের মতো নিভৃত সাধক এবং শিল্পী হন। নিজের জীবনের ইতি টানার সিদ্ধান্ত যিনি নেন একমাত্র তিনিই জানেন এর কারণ। আমাদের সমস্ত অনুমান, উপলব্ধি এবং কল্পনারও ঊর্ধ্বে তাদের অবস্থান।
কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু খুব অস্থিরতায় ভুগছিল। ওকে সাদি মহম্মদের কণ্ঠে `অন্ধজনে দেহ আলো মৃতজনে দেহ প্রাণ` গানটি পাঠিয়ে বলেছিলাম, শোনো, হৃদয় আর্দ্র হবে, শান্তি পাবে।
যিনি আমাদের হৃদয়কে আর্দ্র করতেন, শুদ্ধ করতেন, তিনিই আজ বেছে নিলেন আত্মহননের পথ। যে রবীন্দ্রনাথকে তিনি নিজের আত্মার অংশ করে নিয়েছিলেন, এমনকি সেই রবীন্দ্রনাথও তাঁর শেষ আশ্রয় হয়ে উঠতে পারলেন না। অবিশ্বাস্য লাগছে তাঁর এই প্রস্থান।
মানুষ যে কোথায় কীভাবে ভেঙে পড়ে, কোথায় কীভাবে হেরে যায়, অনেকের ভেতরে থেকেও কীভাবে একা হয়ে যায়, বাইরে থেকে তা বোঝা যায় না!
মনটা ভার হয়ে আছে।
কবি কামরুজ্জামান কামু
এত দৌড়, এই বিত্ত, বৈভব, হিংসা, হানাহানি, আরেকজনকে হেয় করে হলেও নিজের বড় হওয়ার বৃথা আয়োজন— সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাদী মহম্মদের এই স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া যেন জীবনের অন্তঃসারশূণ্যতার বার্তা দিয়ে গেল আরও একবার!
কবি সাখাওয়াত টিপু
বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা-শাসনকাঠামো শিল্প-সাহিত্য বিরোধী। এখানে শিল্পী-সাহিত্যিকরা কেউ আত্মহত্যা করেন, আর কেউ অর্ধমৃত অবস্থায় থাকেন! সৎভাবে এখানে যাঁরা শিল্প-সাহিত্য চর্চা করেন, তাঁদের মহামানব মনে হয়!
কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ
সামনে বসে সাদী মহম্মদের গান কয়েকবার শুনেছি। খুব শান্ত হয়ে মুখে হাসি নিয়ে বসে থাকতেন। মনে হতো, আশপাশের কিছু তাকে স্পর্শ করছে না। গান গাইতে শুরু করলে যেন কোথায় হারিয়ে যেতেন। পুরো ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারতাম না আগে। আজ কিছুটা বুঝলাম। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন।
কবি হাসান মাহমুদ
আহ সাদী ভাই। এমন গাঢ় অভিমান অন্তরে ছিলো আপনার! কখনো টের পাইনি আপনার হৃদয় জুড়ে জমেছে বিষাদের পাহাড়।
বিটিভিতে শেষ দেখা। অডিশনে আপনি বিচারক কিন্তু আমাদের দেখে, কথামালায় সে কী উচ্ছ্বাস আপনার। আফসোস, পূর্বাপরে আপনার সাক্ষাৎকার আর নেয়া হলো না। ছাপা হলো না আপনার না বলা কথা
অনন্তলোকে ভালো থাকবেন। সুরের সাথেই থাকবেন... অভিমানগুলো সময়ের স্রোতে মিশে যাক।