সাদাত হাসান মান্টোর গল্প ‘ঠাণ্ডা গোস্ত’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৮, ২০২১

উর্দু ভাষার কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক সাদত হাসান মান্টোর আজ মৃত্যুদিন। ১৯৫৫ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্ম ১৯১২ সালের ১১ মে, পাঞ্জাব লুধিয়ানার পাপরউদি গ্রামে। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিশেবে তার লেখা ‘ঠাণ্ডা গোস্ত’ গল্পটি পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

অনেকদিন পর ভরা যৌবনবতী কুলবন্ত কাউরের হোটেল কক্ষে ঢুকল ঈশ্বর সিং, তখন রাত বারটা, শহর নিঝুম। কুলবন্ত তেজী নারী, থলথলে নিতম্ব, উদ্ধত স্তন। ঈশ্বর সিং-এর পাগড়ি প্যাঁচ শিথিল হয়ে আসছে, হাতে কম্পমান কৃপাণ। যে কেউ বলবে তারা পরস্পরের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু ঈশ্বর সিং এতদিন কোথায় ছিল? কুলবন্ত কাউরের প্রশ্নের জবাবে জানায়, জানি না।
কুলবন্ত বলে, এটা পুরুষ মানুষের জবাব হতে পারে না।
তারপর কুলবন্তের শরীরে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। কুলবন্ত বলে, নিশ্চয়ই অনেক লুটপাট করেছ।
কিছুদিন আগেই লুটের স্বর্ণালঙ্কার কুলন্তের গায়ে চাপিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে যায়। তারপর আর খবর নেই।

মধ্যরাতে ঈশ্বর সিং কুলন্তকে দলিতমথিত করে জাগিয়ে তুলল, কিন্তু জাগরণ হলো না তার নিজেরই। নিজেকে শারীরিকভাবে সক্রিয় করতে যত পন্থা তার জানা ছিল, সব চেষ্টা একে একে ব্যর্থ হল। তার ব্যর্থতা ক্ষিপ্ত করে তুলল কুলবন্ত কাউরকে।

ঈশ্বর সিং যখন দেখল তার উত্থিত হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই, নিশ্চুপ শুয়ে রইল বিছানায়। অতৃপ্ত কুলবন্ত চেঁচিয়ে উঠল, কোন হারামজাদিকে সব দিয়ে এসেছিস? কসম, আমিও সর্দার লেহাল সিংয়ের বেটি, মিথ্যে বললে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলব। বল কে সে নারী যে তোর সকল জীবনীশক্তি শুষে নিয়েছে?

এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত কুলবন্ত ঈশ্বর সিংয়ের কৃপাণ খুলে তাকে আঘাত করল, ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হল। অতৃপ্ত নারী, যত প্রিয়জনই হোক, ভয়াবহ হয়ে উঠে।

কুলবন্ত ঈশ্বরের চুলের মুঠি ধরে আছড়াতে থাকে। একজন নারী নিশ্চয়ই তার আর ঈশ্বরের মাঝখানে ঢুকে পড়েছে।
ঈশ্বর সিং নিরুত্তর।
কুলবন্ত জিজ্ঞেস, বলছিস না কেন? সে কি তোর মা?
এই ভয়াবহ রূঢ়তার মধ্যে ঈশ্বর সিং মুখ খুলে, কুলবন্ত এই কৃপাণ দিয়ে আমি ছ`জনকে হত্যা করি।

খুন আর লুটতরাজের কাহিনীর দরকার নেই তার। সে শুধু নিশ্চিত হতে চায় কোন নারী ঈশ্বর সিংকে নিঃশেষ করেছে তার পরিচয়। কৃপাণের আঘাতে রক্তপাত হচ্ছে তারও। ফিনকি দিয়ে গোঁফের উপর উপর ছিটকে পড়া রক্ত ফুঁ দিয়ে সরিয়ে ঈশ্বর সিং বলে, ছ`জনকে খুন করেছি আর খুব সুন্দর একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে এসেছি।

ঈশ্বর সিং বলে, কুলবন্ত আমি তাকেও খুন করতাম কিন্তু একবার মনে মনে হল তোকে তো প্রতিদিনই পাই। এমন সুন্দর একটি মেয়েকে একবারও ভোগ করব না?

ঈশ্বর সিং সেই সুন্দরীকে কাঁধে নিয়ে খালের ধারে একটি ঝোপের আড়ালে শুইয়ে দিল। তারপর শুরু করল প্রাক শৃঙ্গার পর্ব। তারপর যখন ব্যাপারটা ঘটতে যাবে ঈশ্বর সিংয়ের বর্ণনা হঠাৎ নিষ্প্রাণ হয়ে গেল।
কুলবন্ত জিজ্ঞেস করল, তারপর কি হল?
ঈশ্বর সিং বলল, টের পেলাম এটা একটা মৃতদেহ। আগেই সে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। পুরোপুরিই ঠাণ্ডা গোস্ত।
কুলবন্ত যখন ঈশ্বর সিংয়ের হাতে হাত রাখে অনুভব করে হাতটাও ঠাণ্ডায় জমে গেছে।

আন্দালিব রাশদী অনূদিত