সাত সুফির আধ্যাত্মিক কবিতা
প্রকাশিত : আগস্ট ২৫, ২০২০
ইসলাম ধর্মে সুফিসাধনা বিশেষ একটি মর্ম প্রকাশ করে। ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের সেই সোনালি যুগে বেশ ক’জন সুফি সাধকের উত্থান ঘটে। পরম সত্তার সঙ্গে নিজের সত্তাকে লীন করে ফেলার গূঢ় কৌশল তারা আত্মস্ত করেছিলেন। মানুষকে দেখিয়েছিলেন সহজ-সরল পথ। বর্তমান যান্ত্রিক যুগে মানুষের জীবনব্যবস্থা হয়ে পড়েছে জটিল। আর তাই আজকের সময়ে কোনো সুফিসাধকের উত্থান আমাদের চোখে পড়ে না। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রবিশংকর বলের বেশ আগ্রহ ছিল সেইসব সুফিদের প্রতি। সুফিদের নিয়ে তার কিছু লেখালেখিও ছিল। সাতজন বিখ্যাত সুফির কবিতা তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। ছাড়পত্রের পাঠকদের উদ্দেশে সেগুলো উপস্থাপন করা হলো:
হাকিম সানাই
মোড়কবন্দি বই
তার জন্মানোর আগে লেখা একটা বই
মোড়কবন্দি করে দেয়া হয়েছিল তাকে
মানুষের প্রগতি এমনই
মৃত্যু পর্যন্ত সে নিজের ভেতরে বহন করে চলে সেই বই
সময়ের গতির সঙ্গে চলতে হয় মানুষকে
মোড়কবন্দি বইয়ের ভেতর কী আছে, তা সে জানতেও পারে না।
পথ অনুসরণ করো
বোলো না হৃদয়ের ব্যথার কথা— তিনি কথা বলছেন
খুঁজো না তাকে— তিনিই তো খুঁজছেন।
পিঁপড়ের পাদস্পর্শও বুঝতে পারেন তিনি
জলের নিচে সরে যাওয়া পাথরের কথাও জানেন।
পাথরের বুকে লেগে থাকা পরমাণুর চেয়েও ছোট
পোকার শরীর ছুঁতে পারেন তিনি।
পোকার প্রার্থনা, তার গোপন অনুভব
দৈব জ্ঞানের আলোয় জানতে পারেন তিনি।
পোকাটিকে তিনিই দিয়েছেন জীবন
তিনিই তোমাকে দেখিয়েছেন শিক্ষার পথ।
জালালুদ্দীন রুমি
যথার্থ সম্ভব
যা দেখছ, বিশ্বে এর কোনও পণ্ডিতি প্রমাণ নেই;
সে শুধু গোপন, গোপন আর গোপন।
প্যাঁচা
সুকণ্ঠ পাখিদেরই নিয়তি বন্দিত্ব
প্যাঁচাকে খাঁচায় আটকে রাখা যায় না।
আতর
আলো
তদগত প্রেমিক আলো খুঁজে পায় তখনই
যখন সে মোমবাতির মতো নিজেকেই জ্বালায়।
শেখ সাদি
অসুস্থ মানুষ
সারা রাত ধরে অসুস্থ মানুষটির
বিছানার পাশে বসে কাঁদল লোকটি।
সকালে বলে গেল, লোকটি মারা গেছে
রোগী ঠিক বেঁচে আছে।
হাসান বসরি
কোথায় গেল
আলো হাতে যাচ্ছিল শিশুটি
তাকে জিগেশ করলাম, কোথা থেকে কিনলে
সে আলো নিভিয়ে বলল,
এখন তুমি বলো, কোথায় গেল আলো।
ওয়াসে করনি
মৃত্যু
মৃত্যুকে স্মরণ করে ঘুমোতে যাও
আর জেগে ওঠো
এই কথা ভেবে যে বেশি দিন বাঁচবে না।
আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক
পরিচয়
দরজায় টোকা শুনে বায়েজিদ বলল,
কাকে খুঁজছ?
উত্তর এলো, বায়েজিদকে।
বায়েজিদ জানিয়ে দিল, তিন দশক ধরে
আমিও বায়েজিদকে খুঁজছি
কিন্তু এখনও তাকে পাইনি।