সাঈফ ইবনে রফিক
সাঈফ ইবনে রফিকের ৫ কবিতা
প্রকাশিত : জুলাই ২৫, ২০২২
কুফুরি কালাম
কুফুরি কালাম।
চালানে তাবিজ পৌঁছে যাচ্ছে
ঠিক ঠিকানায়; যেন
গাইডেড মিসাইল!
আইলের পাকুড় গাছটা শুকায়,
চিটা হচ্ছে ধান।
‘ও বাজান কও না মোরে,
কেডা মারছে বান!’
সাম্প্রদায়িকতা
সাম্প্রদায়িকতার বাইরে আমরা কখনোই যাব না।
সব হিন্দু তাড়িয়ে শতভাগ মুসলিম হলেও না।
সালাফিস্টরা বলবে, তরিকতরা ইসলামবিরোধী
হানাফিরা বলবে, আহমেদিয়ারা অমুসলিম
শিয়াদের পাকিস্তান পাঠিয়ে দেবে সুন্নিরা।
এরপর যখন আমরা শতভাগ ওহাবি—
তখনও সাম্প্রদায়িকতা জারি থাকবে
বলা হবে, নোয়াখাইল্যা মুসলমানরা সুপ্রিম
বরিশাইল্যারা নিম্নশ্রেণির।
অসাম্প্রদায়িক
সৈকতে যতবারই লিখলে
‘অসাম্প্রদায়িক!’
ততবারই ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যাচ্ছে
বালির অক্ষর। হাইড্রোলিক
গবেষণায় লবণ বেশি পড়ে গেছে।
তারারাও মিটিমিটি হাসে,
‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নামের
স্থির আলোয় উজ্জ্বল কোনো গ্রহ নেই!
রমজানে লালসালু মোড়ানো চায়ের দোকান।
যত না আল্লাহর ভয়,
এর চেয়েও ঢের বেশি লোকলজ্জা
প্রগতি প্রগতি বলে ধূমায়িত কাপে
তুমি ধর্ম লুকাও, অথবা জিরাফ!
কাবার গিলাফে তোমার সত্য আটকে আছে।
শান্তি কফিশপে
কফির অর্ডার দিয়ে
বসলাম। শান্তি কফিশপে
দাম্পত্য কলহে পরকীয়া জুটিরাও!
এসির রিমোট দিয়ে টিভির চ্যানেল
বদলানোর চেষ্টা করছে
এক অবিবাহিত কাপল।
আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে
অবাধ্য কবিতা। একা টেবিলের ওপ্রান্তে এসে
দাঁড়ালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিনীত ভঙ্গিতে বললেন, বসতে পারি কি?
বললাম, বসেন। কিন্তু ভুলেও
মোদিকে ডাকবেন না।
প্রতিদিনের মতোই পকেট থেকে
এক প্যাকেট তাস বের করে বাটলেন ট্রাম্প—
কার্ড হাতে নিয়ে দেখি
হরতনের রাজায় বাদশাহ সালমানের মুখ
রুইতনের রানিতে বসে আছেন থেরেসা মে।
চিড়ার গোলামে এরদোয়ানকে
দেখে চমকে ওঠার আগেই
ট্রেতে অর্ডারের কফি নিয়ে
হাজির হলেন ভ্লাদিমির পুতিন।
কিছু বলার আগেই
কফিতে চুমুক দিয়ে
বমি করে দিলেন ট্রাম্প।
তাস ফেলে শি জিনপিংয়ের কবিতার বইটা হাতে নিলাম।
পড়ার ফাঁকে দেখলাম—
ট্রাম্পের তেতো কফিগেলা মুখটা বিকৃত হয়ে গেছে
কে বিল দেবে, এ নিয়ে চিন্তায় পুতিন।
বললাম, পে ফার্স্টই ভালো—
প্রিয় মানুষের ছোটলোকি দেখতে খারাপ লাগে।
এইবার মুখ খুললেন ট্রাম্প।
বললেন, মুরসির জন্য শোকগ্রস্ত
পৃথিবীতে শান্তি আনতে
পারেনি সাদ্দামের কল্লা
গাদ্দাফির অভিজাত হেরেম
বিন লাদেনের সবুজ পাহাড়
কিংবা
কিম উনের চুলের ছাঁট!
শান্তি এনেছে এই চিনিছাড়া ব্ল্যাক কফি!
মুগ্ধ শ্রোতার মতো বলে উঠলাম,
কেয়া কবিতা হ্যায় বস!
মসজিদ
আধুনিক শপিংমলের আদলে
নবনির্মিত বহুতল জাদুঘর ভবনে
কাচঘেরা প্রকাণ্ড শোকেসে
একটা ‘পুরোনো মসজিদ’ সাজানো।
টিকেটের দর্শনার্থীরা এর প্রত্নমূল্য যাচাই করছেন;
অথচ কেউ আমাকে দেখছেন না!
মসজিদ দেখছেন অথচ
সুবহানআল্লাহ বলছেন না,
সিজদায় যাচ্ছেন না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ দেখছেন আর হাসছেন!
কিভাবে মানুষ তাকে ইতিহাস বানানোর ষড়যন্ত্র করছে;
আর নৃবিজ্ঞানসহ গোটা সভ্যতা অন্ধ হয়ে যাচ্ছে,
মসজিদের মধ্যে রক্তমাংসের আমাকেও দেখছে না।