সাঈফ ইবনে রফিক

সাঈফ ইবনে রফিক

সাঈফ ইবনে রফিকের ১১ কবিতা

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২

গন্ধমের জিন রহস্য

পাপের পৃথিবী সত্য প্রতিষ্ঠার উপযোগী নয়।

স্বর্গে নিষিদ্ধ গন্ধম গাছটা এখনও আছে
এটাই সত্য। প্রায়শ্চিত্যের দুনিয়ায়
গন্ধম গাছ নেই;
মানবদেহে জেনেটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে
কিছুটা উদ্ধার হতে পারে
গন্ধমের জিন রহস্য।

ইসলামকে হেফাজত করো

সালাফি শালিক
বড় হয়ে জঙ্গিবিমান হতে চায়।
ওহাবি কাঠঠোকরার মতো
সেও চায় মানুষ হত্যার সওয়াবে
ভরে যাক আমলনামা।

আল্লাহর ওলি অস্বীকারে
ভুলভাল মনগড়া কোরআন ব্যাখ্যায়
যাদের ব্রেনওয়াশ করেছে
মওদুদি তোতাপাখি।
তাদের অন্তর, কর্ণগহ্বর
সিলগালা করার ঘোষণা
আল্লাহ দিয়েছেন সুরা বাকারায়।

জান্নাত থেকে উড়ে আসা সূফি বক
যিনি মৃত্যুহীন আল্লাহর আদেশে,
অবনরত মঙ্গল কামনায়
ডানা ঝাপটে বলছেন,
হে আল্লাহ,
এই সন্ত্রাসপ্রিয় মুসলমানের হাত থেকে
তুমি ইসলামকে রক্ষা করো।
ইসলামকে হেফাজত করো
হেফাজতে ইসলামের কালো ঠোকর থেকে।

কূপমণ্ডুপ

হাঁস জানে না
পুকুর কতটা গভীর।
মাছেরও খবর নেই
পৃথিবীর, আহ্নিক গতির।

ক্রিকেট

ক্রিকেট একটি উপনিবেশি আফিম
পোস্ট কলোনিয়াল হ্যাংওভার।
বাংলা সিনেমায় ক্রিকেট খেলেনি জসিম
শাবানার সেলাইমেশিন ঘুরছে আবার।

চানমঝির নৌকায়

চানমাঝির নৌকায়
দুইটি শালিক থাকলেই আজ
সৌভাগ্য প্রতীকে
হাওয়ায় ফুলেফেঁপে উঠতো
জোড়া দেয়া পাল!
কেউ কি পেত বলো
তোমার নাগাল?

এক শালিকে মামলা খাওয়ার পরও
সুমন ভাবছে, ওটা কুসংস্কার!
বলো কী করে তাকে করি উদ্ধার?

(সুমন, মেজবাউর রহমান সুমন)

জ্ঞান

মিস্টার সত্য সত্য কথা বলেন।
মিস্টার মিথ্যা মিথ্যা কথা বলেন।

কিন্তু সমস্যাটা জটিল।

মিস্টার সত্য বলছেন, আমিই সত্য।
মিস্টার মিথ্যাও বলছেন, আমিই সত্য।

প্রকৃত সত্য কে?
এটা বোঝার জ্ঞান আল্লাহ সবাইকে দেন না।
তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হয়।

সাপ ও লাঠি

সাপ মরলো না
অথচ লাঠিটা ভেঙে
তুমিও প্রশাসনিক ওমে
তা দিচ্ছ নকল চাইনিজ ডিমে।

ফরাসি সৌরভে আজ
এক মিলিগ্রাম ইসলামোফোবিয়া।
দানবাকসো থেকে
বেরিয়ে এসেছে জ্বীন—
কোথায় সে আলাদীন
উড়ন্ত মাদুরে যার হুরপরি নাচে
ঘৃণার বাণিজ্যে।

খাঁচা

ছেড়ে দিলে পাখি খাঁচায়
ফিরতেও পারে;
ঠোঁট থেকে বেরিয়ে যাওয়া শব্দ
কখনোই ফিরবে না।

প্রভু

প্রভুকে বললাম,
আমাকে মুক্ত করে দিন।
আবদারে আবদারে বিরক্ত হয়ে
প্রভু বললেন, পালিয়ে যা।
তোকে বেঁধে রেখেছে কে?

পালালাম। অনভ্যস্ত দুনিয়ায়
ঘুরপাক খেয়ে
আবারও ফিরতে চাইলাম খাঁচায়।
এসে দেখি, দরজা বন্ধ!
৯৯ নামে ডেকে ডেকে
যখন প্রভুর সাড়া পেলাম–
তিনি বললেন, তওবা ছাড়া
এ দরজা খুলবে না!

বললাম, এভাবে হবে না।
পালিয়ে প্রশান্তি নেই।
আপনি বরং আমাকে
স্বাধীন করে দিন।
একটা দাস মুক্ত করে দিলে
আপনার শ্রেষ্ঠত্বে ঘাটতি হবে না!

প্রভু বললেন, সম্ভব নয়।
আমি নিজেও
আমার ওয়াদার কাছে
পরাধীন। তোর কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার
কোনো অস্তিত্বই নেই!

বসে আছি

আমি বসে আছি
আত্মা দেহ ছেড়ে বেরিয়ে গেল
বেড়াতে গেছে
আবারও ফিরবে।

আমি বসে আছি
অথচ আমার মধ্যে আমি নেই।
শ্বাসের ওঠানামা আছে
রক্তের দৌড়ঝাপ আছে
ব্রিদিং ব্লাড প্রেশার
সব ঠিকঠাক।
শুধু আমি নেই।

আমার আত্মা যখন
এভাবে ঘুরে বেড়ায় পাড়াময়
মন তখন অবচেতন
তোমরা বলো অজ্ঞান
অথচ আমি বসে আছি।

মুসলমানরা একে মোরাকাবা বলছে
হিন্দুরা বলছে ধ্যান। ইউরোপীয় জ্ঞান
একে মনোনিয়ন্ত্রিত মেডিটেশন বলে
চালিয়ে দিচ্ছে কিছু না বুঝেই।
বিশ্বাস করো, আমি স্রেফ বসে আছি।
আত্মা বেড়িয়ে এসেছে কাবাঘর
নবির রওজা
নায়েবে রাসূলের দরবার
আর দাদাজানের মাজার।
আমি বসে আছি...
শরীরী ঠোঁট আত্মার সাথে যেতে পারেনি
তাই চুমু খেতে পারেনি হাজরে আসওয়াদ।

গুজব

গুজব ছড়িয়ে গেল:
কাল থেকে তিনদিন সূর্য উঠবে না দেশে।
মানুষ এটাও বিশ্বাস করছে।
নিজেকে চালাক ভেবে অন্যকে বলে বেড়াচ্ছে,
গুজব, গুজব। এমন কখনো হয় নাকি!
গুজববিরোধী স্ট্যাটাস দিয়ে
মোমবাতি কিনতে সবাই ছুটছে
পাড়ার দোকানে।
সেখানেও প্রগতিশীল-সুশীল-বিজ্ঞানবাদী
ছাগলের ভিড়!

সাঈফ ইবনে রফিক বলে উঠলেন,
দ্যাখো কিভাবে সূর্য বিক্রি করে
মোমবাতি কিনছে বাংলাদেশ।
এ কথা শুনে তিনি হাসলেন!
বললেন, মানসিক রোগের ডাক্তার দেখাও।
বললাম, বেশ। এরপর এভাবে বসলে
আত্মাকে ডাক্তারের কাছে পাঠাবো।
হায়, আত্মা যদি
এই দুনিয়াবি আমার কথা শুনতো!