সাঈফ ইবনে রফিকের ‘কাশ্মিরের জন্য কবিতা’
প্রকাশিত : আগস্ট ১৪, ২০২১
এক.
পাহাড় কাঁদছে লাল
চাঁদের পাহারা
গেরুয়া ইউনিফর্মের আলো
ভূস্বর্গে জ্বেলেছে নরকের ওম।
কাশ্মির কার?
পাকিস্তানের, চীনের নাকি
ভারতের?
গুলিবিদ্ধ কিশোর উঠে দাঁড়ালো;
পাশে হিন্দু ধর্ষণের শিকার
মুসলিম কিশোরী;
জিহাদি বাবাকে ঘৃণা করা
কলেজপড়ুয়া বোনের
কোলে থাকা
খৎনা না করা শিশুটিও!
এরা সবাই আমার দিকে
বরফের গোলা ছুঁড়ছে
আর বলছে,
কাশ্মির আসলে আমাদের।
কাশ্মিরিদের।
দুই.
হিমবাহ গলে
সবুজ হয়েছে নদী।
দৃষ্টিভ্রমের উঠানে তুষারের সাদা
ঢেকে রাখো রাষ্ট্রীয় চশমায়।
রাজনীতির উড়ন্ত বক
আকাশ থেকে প্যারাট্রুপারের মতো
নামছে লোকালয়ে
রাখালের বেশে।
গেরিলা দুম্বারা সব
কাশ্মিরি শালে লুকিয়ে রেখেছে
নকশাল মন।
তিন.
কাশ্মির নিয়ে কবিতা লিখতে বসলাম।
আছিয়া এসে বললো,
কি লিখবেন?
তারা আমাদের কাছে কলম বিক্রি করছে
তারা আমাদের কাছে কাগজ বিক্রি করছে
তারা আমাদের কাছে অনুভূতি বিক্রি করছে
তারা আমাদের কাছে আবেগ বিক্রি করছে
তবে রুপিতে নয়, ডলারে নয়
সব ধরনের মুদ্রাব্যবস্থার বাইরে—
বিনিময় প্রথারও
শুধু রক্ত দিয়েই শোধ করতে হয়েছে
কাগজ, কলম, অনুভূতি আর আবেগের দাম।
আমি বললাম, বরং আছিয়াকে নিয়েই লিখি না!
বিলাতি গাবের মতো ফর্সা মেয়েটা
আরো লাল হয়ে উঠলো!
কাশ্মিরি খরস্রোতা নদীর মতো
টলটলে চোখ।
লাল লাল গাল ফুলিয়ে বললো,
এখানের মেয়েরাও ভেড়ার মতো
ছাগলের মতো
গরুর মতো
মাংসের যোগান দেয়।
আছিয়া, ইয়াসমিনা আর নিলুফারের মাংস খেয়ে
বেঁচে আছে সাঁজোয়া যান,
আর দুই সামরিক বন্ধু
ভারত ও পাকিস্তান!
চার.
নিসর্গ দেখে তুমি বুঝবে না
কান্না লুকানোর গোপন রেসিপি
জন্মসূত্রে জেনে গেছে কাশ্মিরিরা।
স্বর্গীয় হাসিতে তুমি জানবে না
কতটা ভ্রম ছিল
দৃষ্টিনন্দন মরিচিকায়।
কাশ্মির একটি দুঃখের নাম।
বিসর্গ চিহ্নের মতো
স্বাদ গন্ধহীন বর্ণ পরিচয়ে
জেগে ওঠা ব্যবসায়িক মননে—
এখানে মুক্তির নামে সন্ত্রাস বিক্রি হয়
এখানে স্বাধীনতার নামে জঙ্গিবাদ বিক্রি হয়
এখানে অধিকারের নামে গণভোট বিক্রি হয়
এখানে স্বচ্ছলতার নামে শাসন বিক্রি হয়।
আশ্চর্য এক স্বর্গ, যেখানে স্বপ্ন জন্মায় না।