সাঈফ ইবনে রফিকের একগুচ্ছ খুদে গল্প
প্রকাশিত : জুলাই ১৫, ২০১৯
সত্যপীর
পীর সাহেবের কাছে বন্ধুকে নিয়ে গেল এক মুরিদ। প্রিয় মুরিদকে দেখে পীর বললেন, এত দেরি করে আসলি কেন? একটু আগে আসলেই তো আল্লাহর সাথে তোর দেখা হইতো!
মুরিদের তো চক্ষু ছানাবড়া। বলেন কী হুজুর, আল্লাহ এসেছিল!
পীরবাবা বললেন, স্বয়ং আল্লাহ আমার খানকায় এলেন, চা খেলেন, গল্প করলেন, এরপর চলে গেলেন।
মুরিদ তো পুরাই হতাশ। একটুর জন্য আল্লাহর সাথে দেখা হলো না। ফেরার পথে মুখ খুলল বন্ধু। `আচ্ছা, পীর সাহেব যে সত্য কথা বলতেছে, এর প্রমাণ কি?`
বুদ্ধিহীন বন্ধুর ওপর ভীষণ ক্ষেপল মুরিদ। বলল, `আল্লাহ কি কখনো মিথ্যাবাদীর সাথে দেখা করেন, পীরবাবা সত্যবাদী বলেই তো আল্লাহ তার সাথে দেখা করতে এসেছিল।`
ঈশ্বরবধ
বিজ্ঞানীদের একটা দল ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে গেল। ঈশ্বরকে তারা বলল, ‘হে মহান ঈশ্বর, আপনার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। এবার আপনি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলুন।’
হাসতে হাসতে ঈশ্বর বললেন, ‘কেন, তোমরা কি এমন করতে পেরেছো?’
বিজ্ঞানীদের একজন এক দলা কাদা নিলো। মানুষের আকার দিলো। আরেক বিজ্ঞানী ফুঁ দিলো। কাদার দলাটা মুহূর্তে একটা মানুষে রূপান্তরিত হলো। অবাক হলেন ঈশ্বর!
এবার বিজ্ঞানীদের দলনেতা বললেন, ‘আপনার দিন শেষ। আমরাই এখন মাটি থেকে আদম তৈরি করতে পারি। আপনি বিলুপ্ত হন!’
মুচকি হেসে ঈশ্বর বললেন, ‘বেশ! আগে হে মানুষ, এক দলা মাটি বানিয়ে দেখাও। পারলে এমন মৌলিক পদার্থের দুনিয়া বানাও, যেখানে আমার সৃষ্ট কোনো কাঁচামাল থাকবে না।’
বায়তুল আকসা
রানি বিলকিসের রাজ্যে বেড়াতে গেলেন বাদশাহ সুলায়মান। বাদশাহ সব পতঙ্গ ও পশুপাখির ভাষা বোঝেন। তার জ্ঞান আর প্রজ্ঞার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। রানি তার জ্ঞানের পরীক্ষা নিতে চাইলেন। দুটি ফুল রাখলেন। একটা কাগজের, অন্যটা আসল। সুলায়মানকে বললেন, না ধরে আসল ফুলটা বের করে দিতে। সুলায়মান একটা মৌমাছিকে ডাকলেন। যে ফুলটার চারপাশে মৌমাছি ঘুরঘুর করছিল, সেটাই আসল।
হাজার হাজার বছর পর। পৃথিবীতে আসল-নকল মিলেমিশে একাকার। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বর্ণযুগ চলছে। রানি বিলকিস আবারও দাওয়াত দিলেন সুলায়মানকে। আবারও সেই একই পরীক্ষা! দুটি ফুল। সুলায়মান মৌমাছি তলব করলেন! কিন্তু একি! এবার দুটি ফুলে ঘুরপাক খাচ্ছে দুটি মৌমাছি! কিছু বুঝে ওঠার আগেই অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন বিলকিস। হাসিতে আরও রঙিন হয়ে উঠলো ঝলমলে প্রাসাদ। সুলায়মানকে বললেন, কাগজের ফুলের জন্য জেনেটিক্যালি মোডিফাইড মৌমাছি বানিয়ে ফেলেছে মানুষ!
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন বাদশাহ সুলায়মান! তাহলে মানবসভ্যতার চরম উন্নতির যুগে তারা আমার বানানো মসজিদটা নিয়ে মারামারি করছে কেন? সুলায়মান পাল্টা প্রশ্ন করলেন বিলকিসকে।
আবাবিল
সম্রাট আবরাহা আবদুল মুত্তালিবকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে তোমার ধর্মের প্রাণকেন্দ্র এই কাবাঘর রক্ষা করবে?’
মুহাম্মদের (সা.) দাদা (যিনি কাগজে-কলমে মুসলিম নন) বললেন, ‘যার ঘর তিনিই রক্ষা করবেন।’
পরের ইতিহাসতো সবার জানা। কুরআনের সুরা ফিলে বর্ণিত আছে। কিভাবে হস্তিবাহিনীকে গুড়িয়ে দিলো আবাবিল পাখির ছোড়া কংকর! আল্লাহর ঘর আল্লাহই রক্ষা করলেন।
....দেড় হাজার বছর পর....
সৌদি রাজপরিবার (যাদের কর্মকাণ্ড আবরাহার চেয়েও বিতর্কিত) এবার আশঙ্কা করছে, আবারও সেই ইয়ামেন থেকে হস্তিবাহিনী আসছে মক্কাকে গুড়িয়ে দিতে। তবে মুসলিম শাসকরা এবার আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে পারলেন না। বলতে পারলেন না, যার ঘর তিনিই রক্ষা করবেন। বরং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক চুক্তি করলেন।
প্যারাডাইস লস্ট, নট রিগেইন্ড!
ইবলিশ জানতো, আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা দেয়া যায় না। আল্লাহ যখন মাটির তৈরি আদমকে সিজদার নির্দেশ দিলেন, ইবলিশ ভাবল, তার পৌত্তলিকতার পরীক্ষা চলছে।
আদমকে তাই সে সিজদা করল না। মহাজ্ঞানী ইবলিশ জানত না, আল্লাহ তখন আদমের অন্তরেই বসে আছেন। জ্ঞানের অহম আল্লামা ইবলিশকে অন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি হয়ে গেলেন শয়তান।