সরোজ মোস্তফা
সরোজ মোস্তফার ৩ কবিতা
প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
ফিরে যাই
সুরমা থেকে আসি আমরা
সুরমায় ফিরে যাই।
আম্মার মাটিতে নামতে নামতে
নিত্যভূমি শ্যাওলায় পিচ্ছিল খেয়েও
পুরনো শরীরে কত রকমের সম্পর্ক যে পাতি!
কিছু সম্পর্ক প্রকাশ্যেও আসে না!
দূর হেমন্তের ঘাস-পাখি-দিনলিপি হয়ে
কিছু সম্পর্ক বলেছে
আমি নিজেকে খুলে রেখেছি
আমি তোমাদের জন্য নই!
ব্যথার বাউল কাউকে বলে না কিছু।
সুরমায় রেখে স্মৃতি গানে যায়
আখড়ায় বাঁচে।
গানে
কুয়াশা মোড়ানো গ্রামে
ঘর পালানোর মজলিসে
গানের সাধনা নামে।
নাও বাওয়ার সহজ বরাতে
ধান রোপণের হাতে
তারা দিনে-রাতে সহজে হারে না
তারা না পাওয়াকে লিখেও রাখে না।
তারা সহজিয়া। বাদ্যযন্ত্রে তাই ভাটির প্রার্থনা নামে।
এ গানের নাম তলার মানুষ
এই গানে সান্ধ্য মনটা হয়েছে হুঁশ।
নদী, তুমিও কি বুঝতে পারো
শীতমঞ্চে বাউল গানের বেহিসেবি সুর।
নদী, তুমিও কি বুঝতে পারো
মনের হাসপাতলে গান গায় খোদার শিক্ষার্থী।
শূন্যের ভেতরে সমর্পিত দিলে
গান গায় গুরুদরবারে
অবিরল সত্যে বৃহস্পতিবারে।
নিয়মের কোটেশনে, কোটে
শীত উপভোগ্য নয়।
খড়ের উঠানে, গানে
ভাঁপা পিঠার গরমে শীত উপভোগ্য
বসন্তের আগে।
এ সময়ে
মানুষ ছোবল দিচ্ছে মানুষকে!
বিসর্জন দিচ্ছে নদীকে-মায়াকে!
পাতার শব্দের মতো সময় এটা না
নীরবে, ঘুঙুরে বিষাদ নামছে বোরো ধানের বাংলায়।
এ সময় আমি কি মানিয়ে নেব
অন্ধ গায়কের জানালায়।
ধান রোপণের পর সন্ধ্যার বিষাদে
চা-স্টলের গালগপ্পে আমিও কি মিশে যাব
কার্তিকের রংবাজ, ধূর্তপাখি।
ট্রেনের আগুনে সময়টা চূর্ণ
দেশ, দেশের মানুষ খুবই বিবর্ণ।
ট্রেনের আগুনে লোকটি পুড়লো
তার আগে তার স্ত্রী ও শিশুটিও ছাই হলো।
লোকটির হাতে বাঁচার মতো সময় ছিল।
কিছুক্ষণ ধোঁয়া গিলে
সে জানালা দিয়ে নামতে পারত।
কিন্তু সে নামতে চাইল না।
জানালাকে সে যেভাবে জড়িয়ে ধরল
যেন দেশটাকে জড়িয়ে ধরেছে।
স্ত্রী-সন্তানের খুশিতে দেহে রাখতে গিয়েই
মানুষটি লৌকিক টিয়ার মতো ঘুমাতে চাইল
লোহার সাথেই পুড়তে লাগল।
এ সময় থেকে নিজের নামটা ফিরিয়ে নিল।
লোকটি বাঁচল।