সদীপ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ‘উপোষী মেঘ’
পর্ব ১
প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৯, ২০২১
পরিষ্কার হলে দেখতে পাওয়া যায়, নাকি ঝাপসা?
চশমাটা চোখে ছিল না, তাও মাথা থেকে নামিয়ে মুছে নিলাম জামার কোনা দিয়ে। যখন ঝাপসা দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিল, কুয়াশার মধ্যে রতনদা ঘুরে তাকাল। বলল, `মারা যাস সময় মতো। নাহলে বড্ড দেরি হয়ে যাবে`। চশমাটা পরে নিয়ে তাকালাম, দেখলাম দাউদাউ আগুনের শিখায় রতনদা পুড়ে যাচ্ছেন। `আনন্দ সংবাদ` `আনন্দ সংবাদ` `আনন্দ সংবাদ` ঘোষণা করতে করতে একটা অটো চলে গেল শশ্মানের বাইরে দিয়ে। দুটো বিড়াল বাচ্চা কাদা জল ঘাটছে পাশে। একটা ডোম একটু দূরে খড়ের বেড়ার মধ্যে জামা বদলে নিচ্ছে, কেন কে জানে? (মরা পোড়ানোর আলাদা জামা হয়?) স্পষ্ট দেখলাম, মৃত্যু নিয়ে কারুর এত মাথাব্যথা নেই, আপাতত। তবুও জাঁ ককতু মৃত্যুকে এত ভালোবেসেছিলেন কি কারণে?
রতনদা পুরোনো বই বিক্রি করতেন আমাদের পাড়ায়। ওনার কাঁধের ঝুলিটা শেকড়ের মতো প্যাঁচানো থাকত। রতনদা সাধারণত র চা খেত খুব, দু-দশটা বিড়ি।
`কোনো বই না পড়ে সেটা বিক্রি করিনি তোদের।` রতনদা বলেছিলেন গর্বিত বিনয়ে। আর আমি রতনদার চেলা হয়ে গেলাম।
পরশুদিন রতনদা আমায় নিয়ে যাবেন বলেছিলেন পুরোনো ইস্কুল বাড়িটায়। পচার দোকানের মুড়ি কিনে চিবোতে চিবোতে বলেছিলেন, `ভাঙাচোরা একটা টিকে থাকা কাকে বলে দেখে আসবি। আমার বাবার ছোটবেলার স্কুল। ভাবতে পারিস? স্কুলে কাঠবিড়ালি খাওয়ানো শেখানো হতো এক সময়ে। বকুল ফুল দিয়ে বেঞ্চি সাজানো থাকত। আর ঘণ্টা ছিল না, ছিল আকাশ মাতানো `ছুটি` ডাক! ডাকত বেনু দারোয়ান। এখন খাঁচাটা পড়ে আছে, দেখবি ভাঙাচোরা একটা টিকে থাকা কাকে বলে।
রতনদা পুড়ে যাচ্ছেন সামনে। আমি দূরে দাঁড়িয়ে সেই ইস্কুল বাড়িটার মতো টিকে থাকা শিখে নিচ্ছি। চলবে