সজীব দে
সজীব দে’র ৮ কবিতা
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
শূন্যতার ভেতর
শূন্যতার ভেতর ঘুমিয়ে থাকুক আকাশ
যে গোলকধাঁধায় ভূমি নিশ্চুপ তার পরাণ
নিজেদের ভেতর ছায়াহীন হয়ে বাঁচে
আমার মেয়েটা
আমার মেয়েটা ঘুমায়
বাঁশ পাতায়
চাঁদ থাকে পাহারায়।
আমি অতীত হয়ে গেছি
অতীত থেকে মাঝে মাঝে সময় নিয়ে আসি।
নিমগ্ন জলের কাছে ধরে রাখি।
বলি, কথা কও।
অনেক দিন তোমাদের কথা শুনি না।
এই দিনগুলো কেমন একরকম।
বলো, তোমাদের কথা।
কান পেতে আছি।
মনে পড়ে একদিন দুপুরে
হিজলের তলে বসে বলেছিলে,
হিরন্ময় আমাদের দিনগুলো মুঠোয় ভরে রাখবো।
আজ মুঠো খোলো
শিউলি তার মুঠো খুলে দিল
আর সেই সব কথা—
কত না পাখি, প্রজাপতি, ফুল আর আস্ত এক নদী হয়ে বয়ে গেল আমার পাশ দিয়ে।
কান পেতে শুনে নিলাম।
আর আমি হয়ে গেলাম অতীত।
শিউলির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছি পঞ্চমীর রাতে।
আমি অতীত হয়ে গেছি
ইতি, আনাবেল
হাতে রেখেছি মাথা
চোখ মাছের মুখে।
নৌকোয় যাচ্ছে সাধের দেহ।
বিষণ্ণ রাতে তারও ইচ্ছে হয় চলে যাবার
ঘরদোর পেরিয়ে আরণ্যকের বর্ণনা হতে।
তবু বলি, থেকে যাও
সমুদ্রও এমন পলায়নপর।
যাবে কোথায় আনাবেল?
তোমার আঙুলে আমার সন্তানের বিপ্লবী গান।
এক বছর পাঁচ দিন
গুণে রেখেছি
এ বছর মুখোমুখি হয়নি
সেপ্টম্বরের গান
একদিন আমরা গেয়েছিলাম
দুজনে আনাবেল।
দূরত্ব বেড়েছে
আমার চোখ জোড়া তুমি ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে
সমুদ্রে রৌদ্র স্নান সারো।
দেখছি আর মগদেলিয়ানির মতো অধঃপতন
মেনে নিয়ে শীতরাতে রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়ি।
আমাদের গোপন দাম্পত্য ও ব্যথার খনন কাজ চলছে।
আপাতত দুঃখিত।
ইতি, আনাবেল
ইন টু দ্য ওয়াইলড
আনাবেল, তোমাকে চেয়ে আমি দূরে এক বিরানভূমির পথে টেলিভিশন রেখে এসেছি।
আর একটি চেয়ার যেখানে বসে তুমি আমাদের সংসার জীবনের ছবি দেখবে।
সেখানে গভীর রাত হলে তুমি যাও আর
আমার মত্ত থাকা ভিনদেশি শরাবি হ্যালুশিসনে এক শতাব্দী বা আলোকবর্ষ পেরিয়ে তোমার চোখে যাই।
যেন তোমার চোখ একটা পরিযায়ী পাখি।
যাই তবে।
এই দিনটায় ফিরে এসো
হারিয়ে গেলেও।
ইন টু দ্য ওয়াইলড আজ রাতে বই পড়বে।
কীভাবে যাব
কীভাবে যাব? বিকেলে হলে দরজার কাছে নদী নেমে আসে।
বলো, কীভাবে যাবে?
সকাল অব্দি অপেক্ষায় থাকি যদি নদী সরে যায়!
তখন রওনা দেয়া যাবে।
সন্ধ্যায় সাফ সাফ নদী বলে দিয়েছে,
আমি আর যেতে পারবো না।
নদী কি জানে আমি কার কাছে যাব?
নিয়তি
ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ যাপন আমার শেষ হতে পারে। তবু তোমার বিলম্বিত চাওয়া আমি কোথায় রাখবো! ভেবে এতটা দিন পার করতে যাওয়া এক রকম গল্প হতে পারে বলে আমি রাস্তার পর রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছি। যেন এভাবেই থাকি আর কালক্ষেপন করে করে যাত্রার বয়স বাড়াচ্ছি।
তোমারও বয়স বাড়ছে হিজলের মতো নদী ঘেঁষে তুমি দাঁড়িয়ে আছ, যেন নদীর জল তোমার প্রেমিকার মতন। আর সারসগুলো সময় রহিত করে পাখায় বরফ মেখেছে। মিলবে না আমাদের কয়েকটি আঙুল যদিবা তোমার দিকে মাছরাঙা ছুটে আসে।
এই সকল মাঝবয়সি আমরা মানুষেরা চুপচাপ টেবিলে পা রেখে পত্রিকায় পড়ি সাপ্তাহিক রাশিফল।
কে না জানে আমরা মিরাকল ভালবাসি।
তাই কুর্দি নারী যোদ্ধার প্রতি প্রাণ মিলায়ে বলি,
তোমরা আমাদের নিয়তি।
দূরে থাকতে হয়
দূরে থাকতে হয়
হাতের ওপর হাত
দূরে থাকতে হয়
আর কোথাও দখল নেই
তাই মুখের ওপর মুখ
সরিয়ে রাখতে হয়
দূরে থাকতে হয়
বুকের ওপর বুক
পাথর হতে হয়