সজীব দে’র গল্প ‘পূরবী এসেছিল কালরাতে’
প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৭, ২০২০
পূরবী এসেছিল কালরাতে। অনেকটা বদলে যায়নি, যতটা মানুষ বদলায়। আমি চমকে যায়নি, ততটা সেও নয়। ও আসবে, আমি জানতাম। চিঠি দিয়েছিল। আমি দেখলাম পূরবীকে। আপনারা হয়তো জানেন না, পূরবী দেখতে কেমন! কেমন ওর চরিত্র। কার সাথে তুলনা করবো? ভাবছি তুলনা করা যায় কীনা। সে দেখতে মন্দাকিনীর মতো। মন্দাকিনী কার মতো? এ বড়ই জটিল গেঁরো। থাক, এসব প্রসঙ্গ। সবচে বড় কথা, পূরবী অসম্ভব রকম গুছিয়ে কথা বলে। বলি, এলে?
হুম।
বসো।
সে বসে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। আট বছর পর আমাদের দেখা। আমাদের সম্পর্কের সব কিছু চুকে গিয়েছিল আট বছর আগে। মানে, আট বছর আগের কোনো একদিন সে হারিয়ে গেছিল আমার জীবন থেকে। আজ আবার মুখোমুখি আমরা।
বলি, এলে কেন?
দেখতে মন চাইছিল।
শুধু তাই?
ঠিক তা না। আরো কিছু কথা ছিল।
তারপর চলে যাবে?
আমি তেমনটা ভাবিনি।
বলো।
আচ্ছা, আমি কি তোমাকে চেয়েছিলাম? এ প্রশ্নটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। এখনো না। অথচ আমরা একসাথে ছয় বছর ছিলাম। কিন্তু কীভাবে? আমার কাছে সে সময়টা আশ্চর্যের মতো লাগে।
বলি, সব সম্পর্কগুলিই এমন অস্পষ্ট। আমরা ঠিক জানি না। সে উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।
তবে আমি আবার এলাম কেন? কেন তোমাকে দেখতে মন চাইল?
আমি বলতে পারবো না। তবে আমি নিয়তি নির্ভর নই। এটা বলতে পারি।
চাইলে আমার সাথে থেকে যেতে পারো।
আমার মেয়ে আছে। স্বামীও আছে। এইসব বন্ধন উপেক্ষা করা যায় না।
তবে যাও।
হ্যাঁ যাব। আজ রাতটা কি তোমার সাথে থাকতে পারি?
পারো। আমার তো বউ নাই।
বিয়ে করলে পারতে।
একবার তো করেছি।
পূরবী কথা বলে না। আমি পূরবীর বাঁ হাতটি ধরি।
বলে, আংটিটা দেখছ আছে কীনা?
আমার হাসি পায়।
বলে, আছে।
পূরবী, মায়া কি কোথাও রয়ে গেছে?
হয়তো। তোমার কথা সব সময়ই মনে হয়। কী অদ্ভুত ছিল আমাদের ছাড়াছাড়ি। দুই কথায় শেষ।
আমার হাসি পায়। পূরবী আবারো বলে, আজ আমরা একসাথে ঘুমোবো। এ কথা শুনে আমার আবারও হাসি পায়। বলি, ঠিক আছে, ঘুমোবো।
রাতের খাওয়া শেষ করে আমরা একসাথে শুয়ে পড়ি। আমাদের নিঃশ্বাস ঘন হতে থাকে। পূরবী আমার চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। আমিও ওর গালে হাত রাখি। সেও আমার হাতে হাত রাখে। বলি, আমরা কি সঙ্গম করব?
পূরবী বলে, না। আমি তোমার সাথে সঙ্গম করতে আসিনি। মায়াটা অনুভব করতে এসেছি। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরো। আলতো করে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ে। আর আমি সারারাত জেগে তাকে পাহারা দিই।
ভোর হতেই পূরবী চলে যায়। তার পরদিন হয়তো পূরবী মরে যাবে কিংবা আমি। জানি না। আমরা মৃত্যুকে আহ্বান করেছি।